দুজনই কালো রঙের বোরকা পরা। মুখ ঢাকা দুজনেরই। তাঁদের সঙ্গে আছে নানা সরঞ্জাম, যা দিয়ে তালা ভাঙা যায়।

দুজনের কারও পায়ে জুতা নেই। তাঁরা সতর্কতার সঙ্গে গুটিগুটি পায়ে করিডর ধরে এগিয়ে আসেন শম্পা জুয়েলার্সের দিকে। শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেট দেখিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কিছু বলেন।

ঘড়িতে তখন সময় রাত ৩টা ৭ মিনিট। ৯ অক্টোবর ২০২৫। মার্কেটের করিডরে আলো জ্বলছে। সব দোকান বন্ধ।

শম্পা জুয়েলার্সের একপাশের কোনায় জায়গাটিতে এসে বোরকা পরা দুজনের সামনে জন থেমে যান। উঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন, কেউ আছে কি না।

বোরকা পরা অন্যজনও পরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন। তাঁরা শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। আশপাশে ঘোরেন।

একপর্যায়ে তাঁরা করিডরের যেদিকে আলো কিছুটা কম, সেদিকে গিয়ে শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার কাজে লেগে পরেন। মাঝে একজন সেখানে থাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন।

শম্পা জুয়েলার্সের অবস্থান রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের দ্বিতীয় তলায়। এই জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস।

অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস আজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে তিনি ও তাঁর কর্মচারীরা দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, তাঁর সবকিছু শেষ। দোকানের তালা ভাঙা। দোকানে থাকা ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকার এবং ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা নেই। এ ছাড়া দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকাও নেই। সব চুরি হয়ে গেছে।

ঘটনার সঙ্গে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস।

বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের দোকানের ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকারের দাম ৮ কোটি টাকার বেশি বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা চুরি হওয়ার আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।

চুরির খবর পেয়ে আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া সোনার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে তারা শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা করছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো.

মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, শপিং মলের সামনে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বরত ছিলেন। গতকাল রাতে মার্কেট বন্ধ করে দোকানমালিক-কর্মচারীরা বাসায় চলে যান। এরপরই চোর শপিং মলের পেছনের জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢোকে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, শপিং মলের পেছনের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল ভাঙা। ধারণা করা হচ্ছে, এখান দিয়েই চোর শপিং মলের ভেতরে ঢোকে। পরে তারা দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্সের ফটক ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার তারা চুরি করে নিয়ে যায়।

শপিং মলের সব কটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি গোলাম ফারুক।

এর আগে ৫ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি জুয়েলারি দোকানের দেওয়া কেটে প্রায় ১২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ পৌনে ৩ লাখ টাকা চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুনমালিবাগে জুয়েলারি দোকান থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র ত কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনে-মা-বাবাকে বেত্রাঘাত, জরিমানা

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানোর অপরাধে বেত্রাঘাতের শিকার হলেন বিয়ের কনে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলে। ক্ষমা চেয়েও পরিত্রাণ মেলেনি। মোটা অঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার টাকা দিতে না পারায় মেয়ের জামাইয়ের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশা আটকে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ধামরাইয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা

ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা 

বুধবার (২৬ নভেম্বর) হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সালিশে এই রায় দেওয়া হয়। 

কনের বাবা মো. শাহজাহান বলেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। আমার মেয়ের বিয়েতে শখ করে মাইক বাজিয়েছি। এর জন্য স্থানীয় আফছার, ছারোয়ার ও মালেক আমাদের পরিবারের সবাইকে মারধর করে। তারা এ জন্য সালিশ বাসায়। আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন সালিশে আমাদের সবাইকে ১৫টি করে বেত্রাঘাতের রায় দেন। আমি এবং পরিবারের সবাই বার বার ক্ষমা চাওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করেনি। সবাইকে বেত্রাঘাত করার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আফছার আমার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে। সমাজে অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো বিচার পাইনি।’’ 

সালিশে উপস্থিত থাকা আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর বিষয়ে আফছার জিজ্ঞেস করার কারণে হট্টগোল বাধে। ওখানে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা তার সঠিক প্রমাণ পাইনি। তবুও আমাদের মধ্যে একজন সালিশদার এই টাকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দিয়েছেন।’’ 

বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সালিশের মধ্যে মহিলাদের বেত্রাঘাত করা হয়নি। পুরুষদের করা হয়েছে। মহিলাদের শাসন করার জন্য ঘরের মুরুব্বি হিসেবে শাহাজান নামে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ঘরে নারীদের বেত্রাঘাত করেছেন।’’ 

সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি উভয়পক্ষকে বলেছি, আইনি ব্যবস্থা নিতে। তারা গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করায় আমি আর সেখানে থাকিনি। এরপর তারা আমাকে আর কিছু জানায়নি।’’

এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা/সুজন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ