ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় চুরির অভিযোগে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের মাথার চুল কেটে পিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার রুদ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মধ্যস্থতায় ওই কিশোরকে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া হয়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাড়ি কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার রুদ্রপুর গ্রামে। ওই কিশোরের বয়স যখন চার মাস, তখন বাবার সংসার ছেড়ে চলে যান তার মা। পরে বাবা আরেকটি বিয়ে করলে কিশোর দাদা-দাদির হেফাজতে বড় হচ্ছে।

কোটচাঁদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনায়েত আলী বলেন, দুপুরে ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে ওই ছেলেকে থানায় নিয়ে আসা হয়। রুদ্রপুর গ্রামের দুলালের বাড়িতে চুরি সন্দেহে তাকে ধরে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। পরে গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটান। দুলাল ওই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। এ জন্য বিকেলে তাকে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের হেফাজতে দেওয়া হয়।

কোটচাঁদপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক মোসা.

কোহিনুর খাতুন জানান, যেহেতু ওই ছেলের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, সে কারণে সন্ধ্যার আগে তার বাবা ও চাচাকে ডেকে তাঁদের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুপুরে ওই ছেলের মাথার চুল কেটে পিটুনি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটিকে অনেকে ‘অমানবিক’ বলে প্রতিক্রিয়া দেখান। তবে রুদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ওই ছেলের আগে থেকেই চুরির অভ্যাস আছে। ছোটবেলা থেকে পথশিশুর মতো বড় হয়েছে। বিভিন্ন খারাপ সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আগেও তার বিরুদ্ধে টাকাপয়সা ও মুঠোফোন চুরির অভিযোগ আছে।

কিশোরের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের বয়স যখন চার মাস, তখন তার মা সংসার ছেড়ে চলে যান। ছেলে ধীরে ধীরে বিগড়ে যায়। সে তাঁর কথা শোনে না। এমন স্বভাবের কারণে এক বছর ধরে ছেলের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। তিনি গরিব মানুষ। পুরোনো একটি রিকশা আছে। সেটা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। ছেলেকে ভালো কোনো সংশোধনাগারে পাঠাবেন, তেমন আর্থিক সংগতি তাঁর নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ছ ল র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনে-মা-বাবাকে বেত্রাঘাত, জরিমানা

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানোর অপরাধে বেত্রাঘাতের শিকার হলেন বিয়ের কনে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলে। ক্ষমা চেয়েও পরিত্রাণ মেলেনি। মোটা অঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার টাকা দিতে না পারায় মেয়ের জামাইয়ের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশা আটকে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ধামরাইয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা

ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা 

বুধবার (২৬ নভেম্বর) হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সালিশে এই রায় দেওয়া হয়। 

কনের বাবা মো. শাহজাহান বলেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। আমার মেয়ের বিয়েতে শখ করে মাইক বাজিয়েছি। এর জন্য স্থানীয় আফছার, ছারোয়ার ও মালেক আমাদের পরিবারের সবাইকে মারধর করে। তারা এ জন্য সালিশ বাসায়। আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন সালিশে আমাদের সবাইকে ১৫টি করে বেত্রাঘাতের রায় দেন। আমি এবং পরিবারের সবাই বার বার ক্ষমা চাওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করেনি। সবাইকে বেত্রাঘাত করার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আফছার আমার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে। সমাজে অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো বিচার পাইনি।’’ 

সালিশে উপস্থিত থাকা আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর বিষয়ে আফছার জিজ্ঞেস করার কারণে হট্টগোল বাধে। ওখানে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা তার সঠিক প্রমাণ পাইনি। তবুও আমাদের মধ্যে একজন সালিশদার এই টাকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দিয়েছেন।’’ 

বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সালিশের মধ্যে মহিলাদের বেত্রাঘাত করা হয়নি। পুরুষদের করা হয়েছে। মহিলাদের শাসন করার জন্য ঘরের মুরুব্বি হিসেবে শাহাজান নামে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ঘরে নারীদের বেত্রাঘাত করেছেন।’’ 

সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি উভয়পক্ষকে বলেছি, আইনি ব্যবস্থা নিতে। তারা গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করায় আমি আর সেখানে থাকিনি। এরপর তারা আমাকে আর কিছু জানায়নি।’’

এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা/সুজন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ