বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
Published: 10th, October 2025 GMT
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। দিবসটি উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন ও নড়াইল জেলা প্রশাসনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নড়াইল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে এস এম সুলতানের রুহের মাগফেরাত কামনা, শিশুস্বর্গে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, শিশুস্বর্গে শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। তার ডাক নাম ছিল ‘লাল মিয়া’। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা এস এম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।
স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন তিনি। মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়ই জমিদার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। তার এই কীর্তিতে মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা।
১৯৩৮ সালে এস এম সুলতান চলে যান কলকাতায়। সেখানে চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বে সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মিরের পাহাড়ে উপ-জাতিদের সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন।
১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্র শিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যান এস এম সুলতান।
এরপর ইউরোপে কয়েকটি একক ও যৌথ প্রর্শনীতে অংশ নেন তিনি। এ সময় পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লিসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এস এম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন এস এম সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দ্যা ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি।
এস এম সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন।
নিজের কর্মের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’, ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউ ইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার’ লাভ করেন এস এম সুলতান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।
ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ শ স বর গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। দিবসটি উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন ও নড়াইল জেলা প্রশাসনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নড়াইল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে এস এম সুলতানের রুহের মাগফেরাত কামনা, শিশুস্বর্গে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, শিশুস্বর্গে শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। তার ডাক নাম ছিল ‘লাল মিয়া’। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা এস এম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।
স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন তিনি। মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়ই জমিদার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। তার এই কীর্তিতে মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা।
১৯৩৮ সালে এস এম সুলতান চলে যান কলকাতায়। সেখানে চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বে সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মিরের পাহাড়ে উপ-জাতিদের সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন।
১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্র শিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যান এস এম সুলতান।
এরপর ইউরোপে কয়েকটি একক ও যৌথ প্রর্শনীতে অংশ নেন তিনি। এ সময় পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লিসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এস এম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন এস এম সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দ্যা ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি।
এস এম সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন।
নিজের কর্মের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’, ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউ ইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার’ লাভ করেন এস এম সুলতান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।
ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ