ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় মসজিদের চাবি না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের বাহিরদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় দুটি বাড়ি ও একটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রামকান্তপুর ইউনিয়নের বাহিরদিয়া গ্রামের লুৎফর রহমান ও ইমরান মোল্লার সঙ্গে হেমায়েত হোসেনের বিরোধ চলে আসছিল। দুই পক্ষই বিএনপির সমর্থক হলেও কারও দলীয় কোনো পদ নেই। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লুৎফর রহমান ও ইমরানের সমর্থক নজরুলের কাছে থাকা স্থানীয় বাহিরদিয়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের চাবি চাইতে যান হেমায়েত হোসেনের সমর্থকেরা। এ সময় চাবি না দেওয়ায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর দিনভর উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

খবর পেয়ে রাতে পুলিশ, বাহিরদিয়া মাদ্রাসার আলেম ও বিএনপি নেতারা গিয়ে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করেন এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। তবে আজ সকাল ছয়টার দিকে হেমায়েত হোসেনের সমর্থকেরা দেশি অস্ত্র নিয়ে ইমরানের বাড়িতে হামলা করেন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

সংঘর্ষের সময় দুটি বাড়ি ও একটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনে-মা-বাবাকে বেত্রাঘাত, জরিমানা

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানোর অপরাধে বেত্রাঘাতের শিকার হলেন বিয়ের কনে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলে। ক্ষমা চেয়েও পরিত্রাণ মেলেনি। মোটা অঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার টাকা দিতে না পারায় মেয়ের জামাইয়ের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশা আটকে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ধামরাইয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা

ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা 

বুধবার (২৬ নভেম্বর) হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সালিশে এই রায় দেওয়া হয়। 

কনের বাবা মো. শাহজাহান বলেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। আমার মেয়ের বিয়েতে শখ করে মাইক বাজিয়েছি। এর জন্য স্থানীয় আফছার, ছারোয়ার ও মালেক আমাদের পরিবারের সবাইকে মারধর করে। তারা এ জন্য সালিশ বাসায়। আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন সালিশে আমাদের সবাইকে ১৫টি করে বেত্রাঘাতের রায় দেন। আমি এবং পরিবারের সবাই বার বার ক্ষমা চাওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করেনি। সবাইকে বেত্রাঘাত করার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আফছার আমার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে। সমাজে অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো বিচার পাইনি।’’ 

সালিশে উপস্থিত থাকা আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর বিষয়ে আফছার জিজ্ঞেস করার কারণে হট্টগোল বাধে। ওখানে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা তার সঠিক প্রমাণ পাইনি। তবুও আমাদের মধ্যে একজন সালিশদার এই টাকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দিয়েছেন।’’ 

বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সালিশের মধ্যে মহিলাদের বেত্রাঘাত করা হয়নি। পুরুষদের করা হয়েছে। মহিলাদের শাসন করার জন্য ঘরের মুরুব্বি হিসেবে শাহাজান নামে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ঘরে নারীদের বেত্রাঘাত করেছেন।’’ 

সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি উভয়পক্ষকে বলেছি, আইনি ব্যবস্থা নিতে। তারা গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করায় আমি আর সেখানে থাকিনি। এরপর তারা আমাকে আর কিছু জানায়নি।’’

এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা/সুজন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ