দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া মানেই একটি ভিন্ন উচ্ছ্বাস। সেখানে গিয়ে কী করব না করব—তা নিয়ে উদ্দীপনার সীমা থাকে না। তবে এই আনন্দে ভাটা পড়ে, যখন সেখানে গিয়ে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় পড়তে হয়। বিদেশে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি হারিয়ে যাওয়া কিংবা চুরি হয়ে যাওয়া বড় ধরনের সমস্যা ও দুশ্চিন্তার কারণই বটে। তাই এসব কাজ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা উচিত, না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। অনেক সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরও এ রকম দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে অনেক বেশি ঘাবড়ে যান। যে কারও ক্ষেত্রেই এমনটা হতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ভ্রমণে বা অন্য কোনো কাজে বিদেশে যাওয়ার পর জরুরি কাগজপত্র হারিয়ে গেলে কী করবেন? এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গোযায়ানের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সাবিক মাহমুদ খান।

সাবিক মাহমুদ খান বলেন, এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে প্রথমেই নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। আতঙ্কিত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব জায়গায় গিয়েছেন, যেমন হোটেলের লবি, রেস্টুরেন্ট, দোকান বা ট্যাক্সি, এসব স্থানে খোঁজ নিন। অনেক সময় কাগজপত্র ভুলবশত কোথাও পড়ে থাকতে পারে বা কেউ পেয়ে হোটেল রিসেপশনেও জমা দিতে পারে। কাগজপত্র একেবারেই খুঁজে না পেলে অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে লস্ট রিপোর্ট বা জিডি করুন। এতে ভবিষ্যতে পাসপোর্ট বা ভিসার পুনরায় ইস্যু বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহের সময় আইনগত ঝামেলা কমবে।

সাবিক মাহমুদ খান আরও বলেন, ‘পুলিশ রিপোর্টের একটি কপি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। এটি পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এরপর দ্রুত বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে পারে, যা দিয়ে আপনি দেশে ফিরতে পারবেন। কিছু ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাসপোর্টও ইস্যু করা হয়। যোগাযোগের সময় পুলিশ রিপোর্ট, পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (যদি থেকে থাকে), ভিসার কপি ও পাসপোর্টের পূর্বের তথ্য দিয়ে রাখুন।’

বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে ‘ইমার্জেন্সি ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ বা ‘টেম্পোরারি পাসপোর্ট’ পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাবিক মাহমুদ খান বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার জন্য সাধারণত একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। সেই সঙ্গে ছবি, পুরোনো পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব প্রমাণ ও পুলিশ রিপোর্ট জমা দিতে হয়। এটি সীমিত সময়ের জন্য ইস্যু হয়, যা মূলত দেশে ফেরার উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।’

ভ্রমণের আগে কাগজপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দেন সাবিক মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ‘সব সময় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ডিজিটাল কপি (স্ক্যান বা ছবি) গুগল ড্রাইভ অথবা ই-মেইলে সেভ করে রাখুন। আর হার্ড কপি ও পাসপোর্ট আলাদা জায়গায় রাখুন। সব কাগজপত্র একটি ব্যাগে না রাখাই ভালো। হোটেলের সেফ বক্সে মূল পাসপোর্ট রেখে বাইরে সব সময় কপি নিয়ে বের হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সেই সঙ্গে পাসপোর্টের কভারে নিজের নাম ও ফোন নম্বর লিখে রাখুন। এ ছাড়া যেকোনো জরুরি প্রয়োজনের জন্য দূতাবাস ও ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর সংরক্ষণ করে রাখুন।’

ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স প্রসঙ্গে সাবিক মাহমুদ খান বলেন, ‘ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স থাকলে অনেক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সহায়তা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে পরিচয় প্রমাণের ঝামেলা অনেকটা সহজ হয় এবং অতিরিক্ত খরচের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তাও মেলে। দূতাবাসে যোগাযোগ ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও ইনস্যুরেন্স সহায়ক ভূমিকা রাখে।’

সাবিক মাহমুদ খান আরও জানান, এসব বিষয়ে সহায়তা পেতে অবশ্যই পুলিশ রিপোর্ট ও সব ধরনের ব্যয়সংক্রান্ত রসিদ সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।

ট্রাভেল ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি এমন পরিস্থিতে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো থেকেও বেশ কিছু কার্যকর সহায়তা পাওয়া যায়।

সাবিক মাহমুদ খান বলেন, ‘বিশ্বস্ত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো, যেমন গোযায়ান ফ্লাইট টিকিট হারিয়ে গেলে গ্রাহকের তথ্য যাচাই করে পুনরায় টিকিট পাঠাতে বা রিইস্যু করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন ও যোগাযোগের তথ্য দিয়ে দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। প্রয়োজনে তারা নতুন রিটার্ন ফ্লাইট বা বিকল্প ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে, যাতে ভ্রমণকারীর যাত্রা ব্যাহত না হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ভ ল ইনস য র ন স ক গজপত র পর স থ ত প রক র র জন য ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

কাপড় খোলা বাজারে বিক্রি: অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারকে নোটিশ

তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার’ বন্ড সুবিধা নিয়ে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৩ কেজি  বা প্রায় ৩ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন কাপড় আমদানি করেছে। এর প্রায় অর্ধেক কাপড়ই খোলা বাজারে বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনৈতিক কাজের মাধ্যমে পোশাক কোম্পানিটি সরকারের কোটি কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্ড সুবিধা ব্যবহার করে খোলাবাজারে কাপড় বিক্রি করার অভিযোগের প্রমান পাওয়া তৈরি পোশাক কোম্পানি অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির ৬৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দিয়েছে এনবিআর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার ২০১০ সালে বন্ড লাইসেন্স পেয়েছে। এরপর থেকেই কোম্পানিটি বন্ড সুবিধায় কাপড় আমদানি করে আসছে। এসব আমদানি করা কাপড়ের অধিকাংশই খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয় অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার-এমনই অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খোজ নেয় ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।

এদিকে, চলতি গত ২৩ সেপ্টেম্বর বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারের ওয়্যারহাউস পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে কোম্পানির আমদানি করা কাগজপত্র যাচাই ও ইনভেন্ট্ররি করা হয়। এ সময় আমদানি রপ্তানির কাগজপত্র যাচাই ও মজুত পণ্যে বেশ গরমিল পায় বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির প্রমাণ পায় বন্ড কর্মকর্তারা। কোম্পানির আমদানি করা কাপড় খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মশিউর রহমান স্বীকার করেছেন। গত ৬ অক্টোবর কোম্পানিটি পরিদর্শনের প্রতিবেদন জমা দেয় কর্মকর্তারা।

অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারের চেয়ারম্যান সালাম হোসেন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাপড় খোলাবাজারে বিক্রি করেনি। বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা ওয়্যারহাউস পরিদর্শন করে কি পেয়েছে সেটি আমাদেরকে জানায়নি। বুঝেন তো .......তারা কিছু ...চায়।”

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার লিমিটেড ২০২৪ সালের ৪ মার্চ থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৩ কেজি কাপড় আমদানি করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে আগের কাপড় মজুত রয়েছে ৯৩ হাজার ৪৫৪ কেজি। আগের মজুতসহ প্রতিষ্ঠানটিতে কাপড় থাকার কথা ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ২০৭ কেজি। প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী, ১৭ লাখ ১৪ হাজার ৩২৮ কেজি বা ১ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে তা রপ্তানি করা হয়েছে। তবে এসব পণ্য সত্যিই রপ্তানি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।রপ্তানির তৈরি পোশাক বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়্যারহাউসে আমদানি করা বাকি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৭ কেজি বা ১ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৪৬৭ মেট্রিক টন কাপড় থাকার কথা। কিন্তু ওয়্যারহাউসে এসব বিপুল পরিমাণ কাপড় নেই। এই কাপড় ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ করেনি, বন্দর থেকে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অবৈধভাবে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করা এই কাপড়ের মূল্য প্রায় ৮০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় ৬৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।পরিদর্শন প্রতিবেদনে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ঝুঁকি থাকায় ফাঁকি দেওয়া শুল্ককর আদায়ে দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ ও অনিয়ম, জালিয়াতির ঝুঁকি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করার সুপারিশ করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১২ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে বিক্রি করে ১ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন কাপড়ের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ৬৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা পরিশোধে দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা জানান, পোশাক কারখানা অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারের বন্ড লাইসেন্সের বিপরীতে কাপড় আমদানি করত। একই সঙ্গে তারা অবৈধভাবে খোলা বাজারে আমদানি করা কাপড় বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিত। বিষয়টি যাচাই করে প্রমান পাওয়া গেছে। আগেও এমন ঘটনার প্রমান পেয়েছিল বন্ড কমিশনারেট, প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হলেও অদৃশ্য কারণে প্রতিষ্ঠানটি ছাড় পেয়ে যায়। লাইসেন্স বাতিল করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে সেটি হয়নি। এবারও ম্যানেজের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাবের পর আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক মানিকগঞ্জের ঘিওর পুখরিয়া এলাকায় অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারের কারাখানা।  এই পোশাক কোম্পানিটি ২০১০ সালে বন্ড লাইসেন্স পেয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স এ্যাটায়ার। কোম্পানিটি শার্ট, বোতাম, প্যান্ট, জ্যাকেট উৎপাদন ও রপ্তানি করে।  

ঢাকা/নাজমুল/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিডিআর বিদ্রোহ : কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন ৩৫ জন
  • ভূমিকম্পর সতর্কতা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে বিমা, কমবে ক্ষতি
  • কাপড় খোলা বাজারে বিক্রি: অ্যাডভান্স এ্যাটায়ারকে নোটিশ