তিনটি শিশুর বয়স প্রায় কাছাকাছি। তিনজনের বাড়িও পাশাপাশি। তারা একসঙ্গে গিয়েছিল বাড়ির পাশেই খালে গোসল করতে। সেখানে ডুবে তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামের এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ রোববার সকালে স্থানীয় কানুটিয়া স্কুল মাঠে জানাজা শেষে ওমেদপুর গোরস্তানে তাদের পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।

মৃত তিন শিশু হচ্ছে উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তরিকুল বিশ্বাসের মেয়ে তানহা ইসলাম তরী (৯), সাজ্জাদ মল্লিকের মেয়ে সামিয়া আক্তার সিনথিয়া (৯), আনারুল ইসলামের মেয়ে তারিন ইসলাম (৮)। এর মধ্যে তানহা ইসলাম ও সামিয়া আক্তারের বাবা–মা একে অপরের মামাতো–ফুফাতো ভাই–বোন। আর তারিন ইসলাম তাঁদের প্রতিবেশী। তিনটি শিশু এলাকার তিনটি আলাদা প্রতিষ্ঠানে নার্সারি, প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তিনজনই ছিল পরিবারের বড় সন্তান।

আজ দুপুর ১২টার দিকে চাপাতলা গ্রামে তানহা ইসলামের বাড়িতে কথা হয় তার মা রত্না বেগমের সঙ্গে। তাঁর চোখে পানি, জানালেন, কয়েক বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ফরিদপুরের একটি জুটমিলে চাকরি করে দুই সন্তানকে বড় করছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে মেয়েকে বাড়ি রেখে কাজে চলে যাই। বেলা ২টার দিকে ফ্যাক্টরিতে থাকতে খবর পাই পেয়ের কোনো সমস্যা হইছে। সেখান থেকে এসে মেয়ের লাশ দেখলাম। আমার মেয়েটা কীভাবে চলে গেল?’

পাশেই সামিয়া আক্তারের বাড়ি। তার বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছেন সাজ্জাদ মল্লিক। পরিবারের সদস্যরা জানান, মেয়ে হারানোর শোকে বাবা-মা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই।

সামিয়ার দাদা আবু তালেব বলেন, ‘আমি তখন কেবল নামাজে দাঁড়িয়েছি। ওই দুইটা মেয়ে এসে সিনথিয়াকে ডাকল চল খালে গোসল করতে যাই। আমি নামাজে দাঁড়িয়ে বলে নিষেধ করতে পারিনি। কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাওয়ার খবর শুনে খালপাড়ে ছুটে যাই।’

তিন শিশুর মধ্যে সামিয়া সাঁতার জানত। অন্য দুজন সাঁতার জানত না। তারিন ইসলামের মা রাফেজা বেগম বলেন, ‘তারিন সাঁতার জানত না। প্রতিদিন টিউবওয়েলে গোসল করে। খালে গেলে বড় কারও সঙ্গে যায়। গতকাল বলল পাশের বাড়ির দাদির সঙ্গে গোসল করতে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা নিজেরাই চলে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চাপাতলার খালে বেশির ভাগ সময় পানি অল্প থাকে। যখন স্লুইসগেট বন্ধ থাকে তখন পানি বেশি থাকে। গতকাল খালে পানি বেশি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘গতকাল ওদের যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়, সেখানে পানির গভীরতা ৬–৭ ফুট। ডুবে যাওয়ার পর আমরা খবর পাই। ওরা হয়তো না বুঝেই খালের খাদে পড়ে যায়। এমন ঘটনা এর আগে এলাকায় ঘটেনি। ঘটনার পর পুরো এলাকার লোকজন শোকাহত।’

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুপুরে গোসলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় ওই তিন শিশু। বেলা দুইটার দিকে চাপাতলা খালে তারা গোসল করতে নামে, একপর্যায়ে ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে খালে নেমে শিশু তিনটিকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিন শিশুকেই মৃত ঘোষণা করেন।

আজ তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক। তাঁদের একজন মতিয়ার মল্লিক বলেন, ‘এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। শিশুদের প্রতি আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের সাঁতার শেখানোর কোনো বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুনমাগুরায় খালে গোসলে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু১১ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা

জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ