মাগুরায় খালে গোসল করতে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু, পাশাপাশি কবরে দাফন
Published: 12th, October 2025 GMT
তিনটি শিশুর বয়স প্রায় কাছাকাছি। তিনজনের বাড়িও পাশাপাশি। তারা একসঙ্গে গিয়েছিল বাড়ির পাশেই খালে গোসল করতে। সেখানে ডুবে তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামের এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আজ রোববার সকালে স্থানীয় কানুটিয়া স্কুল মাঠে জানাজা শেষে ওমেদপুর গোরস্তানে তাদের পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।
মৃত তিন শিশু হচ্ছে উপজেলার চাপাতলা গ্রামের তরিকুল বিশ্বাসের মেয়ে তানহা ইসলাম তরী (৯), সাজ্জাদ মল্লিকের মেয়ে সামিয়া আক্তার সিনথিয়া (৯), আনারুল ইসলামের মেয়ে তারিন ইসলাম (৮)। এর মধ্যে তানহা ইসলাম ও সামিয়া আক্তারের বাবা–মা একে অপরের মামাতো–ফুফাতো ভাই–বোন। আর তারিন ইসলাম তাঁদের প্রতিবেশী। তিনটি শিশু এলাকার তিনটি আলাদা প্রতিষ্ঠানে নার্সারি, প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তিনজনই ছিল পরিবারের বড় সন্তান।
আজ দুপুর ১২টার দিকে চাপাতলা গ্রামে তানহা ইসলামের বাড়িতে কথা হয় তার মা রত্না বেগমের সঙ্গে। তাঁর চোখে পানি, জানালেন, কয়েক বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ফরিদপুরের একটি জুটমিলে চাকরি করে দুই সন্তানকে বড় করছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে মেয়েকে বাড়ি রেখে কাজে চলে যাই। বেলা ২টার দিকে ফ্যাক্টরিতে থাকতে খবর পাই পেয়ের কোনো সমস্যা হইছে। সেখান থেকে এসে মেয়ের লাশ দেখলাম। আমার মেয়েটা কীভাবে চলে গেল?’
পাশেই সামিয়া আক্তারের বাড়ি। তার বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছেন সাজ্জাদ মল্লিক। পরিবারের সদস্যরা জানান, মেয়ে হারানোর শোকে বাবা-মা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই।
সামিয়ার দাদা আবু তালেব বলেন, ‘আমি তখন কেবল নামাজে দাঁড়িয়েছি। ওই দুইটা মেয়ে এসে সিনথিয়াকে ডাকল চল খালে গোসল করতে যাই। আমি নামাজে দাঁড়িয়ে বলে নিষেধ করতে পারিনি। কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাওয়ার খবর শুনে খালপাড়ে ছুটে যাই।’
তিন শিশুর মধ্যে সামিয়া সাঁতার জানত। অন্য দুজন সাঁতার জানত না। তারিন ইসলামের মা রাফেজা বেগম বলেন, ‘তারিন সাঁতার জানত না। প্রতিদিন টিউবওয়েলে গোসল করে। খালে গেলে বড় কারও সঙ্গে যায়। গতকাল বলল পাশের বাড়ির দাদির সঙ্গে গোসল করতে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা নিজেরাই চলে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চাপাতলার খালে বেশির ভাগ সময় পানি অল্প থাকে। যখন স্লুইসগেট বন্ধ থাকে তখন পানি বেশি থাকে। গতকাল খালে পানি বেশি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘গতকাল ওদের যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়, সেখানে পানির গভীরতা ৬–৭ ফুট। ডুবে যাওয়ার পর আমরা খবর পাই। ওরা হয়তো না বুঝেই খালের খাদে পড়ে যায়। এমন ঘটনা এর আগে এলাকায় ঘটেনি। ঘটনার পর পুরো এলাকার লোকজন শোকাহত।’
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুপুরে গোসলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় ওই তিন শিশু। বেলা দুইটার দিকে চাপাতলা খালে তারা গোসল করতে নামে, একপর্যায়ে ডুবে যায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে খালে নেমে শিশু তিনটিকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিন শিশুকেই মৃত ঘোষণা করেন।
আজ তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক। তাঁদের একজন মতিয়ার মল্লিক বলেন, ‘এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। শিশুদের প্রতি আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের সাঁতার শেখানোর কোনো বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুনমাগুরায় খালে গোসলে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু১১ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনে-মা-বাবাকে বেত্রাঘাত, জরিমানা
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানোর অপরাধে বেত্রাঘাতের শিকার হলেন বিয়ের কনে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলে। ক্ষমা চেয়েও পরিত্রাণ মেলেনি। মোটা অঙ্কের টাকাও জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানার টাকা দিতে না পারায় মেয়ের জামাইয়ের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশা আটকে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারটি অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
ধামরাইয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা
ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা
বুধবার (২৬ নভেম্বর) হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সালিশে এই রায় দেওয়া হয়।
কনের বাবা মো. শাহজাহান বলেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। আমার মেয়ের বিয়েতে শখ করে মাইক বাজিয়েছি। এর জন্য স্থানীয় আফছার, ছারোয়ার ও মালেক আমাদের পরিবারের সবাইকে মারধর করে। তারা এ জন্য সালিশ বাসায়। আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন সালিশে আমাদের সবাইকে ১৫টি করে বেত্রাঘাতের রায় দেন। আমি এবং পরিবারের সবাই বার বার ক্ষমা চাওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করেনি। সবাইকে বেত্রাঘাত করার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।’’
তিনি বলেন, ‘‘জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আফছার আমার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে। সমাজে অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো বিচার পাইনি।’’
সালিশে উপস্থিত থাকা আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর বিষয়ে আফছার জিজ্ঞেস করার কারণে হট্টগোল বাধে। ওখানে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা তার সঠিক প্রমাণ পাইনি। তবুও আমাদের মধ্যে একজন সালিশদার এই টাকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দিয়েছেন।’’
বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সালিশের মধ্যে মহিলাদের বেত্রাঘাত করা হয়নি। পুরুষদের করা হয়েছে। মহিলাদের শাসন করার জন্য ঘরের মুরুব্বি হিসেবে শাহাজান নামে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই ঘরে নারীদের বেত্রাঘাত করেছেন।’’
সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি উভয়পক্ষকে বলেছি, আইনি ব্যবস্থা নিতে। তারা গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করায় আমি আর সেখানে থাকিনি। এরপর তারা আমাকে আর কিছু জানায়নি।’’
এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল