Prothomalo:
2025-11-27@20:19:31 GMT

দুই প্রশ্নের গণভোটের বিপদ

Published: 13th, October 2025 GMT

৩২টি দল মিলে টানা কয়েক মাস সংবিধান সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করার পর যেভাবে বৈঠকটির পরিসমাপ্তি টানা হলো, তাতে পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া টালমাটাল হয়ে পড়েছে।

সনদে ৮৪টি প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে ৩৯টি প্রস্তাব মানে প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে কোনো না কোনো দলের দ্বিমত আছে। ২৫টি প্রস্তাবে আংশিক আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে ৩৯ প্রস্তাবে সবাই সম্মত, সেগুলো একটি তালিকা করে নাগরিকদের সম্মতি বা অসম্মতি জানার জন্য গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। সেসব প্রস্তাব নিয়ে টানা দুই মাস আলাপ করে দেশের সব দল ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, সেগুলো নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন হবে।

নাগরিকদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলতে হলে তাঁদের তো বুঝতে হবে, কী তাঁরা মত দিচ্ছেন। যেসব বিষয়ে তাঁদের পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলো একমত পোষণ করেছে, সেসব বিষয়ে সম্মতি দেওয়াটা সহজ। কারণ, তাঁরা ভেবে নিতে পারেন যে যেসব বিষয়ে সব নেতা একমত হয়ে বসে আছেন, সেখানে তাঁর ‘হ্যাঁ’ বলাতে কোনো ঝুঁকি নেই। প্রতিটি প্রস্তাব নিয়ে তাঁর গবেষণা করার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু যেসব বিষয়ে কোনো না কোনো দল আপত্তি তুলেছে, সেই ব্যালটের কী হবে? কোনো প্রস্তাবে যদি কোনো দলের আপত্তি থাকে, তাহলে একজন নাগরিকের দায়িত্ব হবে সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখা বা তাঁর দল যেদিকে রায় দিয়েছে, সেদিকে থাকা। সে ক্ষেত্রে তাঁর দল যেগুলোতে সায় দিয়েছে, শুধু সেগুলোতে তিনি সম্মতি দিতে চাইবেন। কিন্তু ব্যালটে তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে যেসব প্রস্তাবে তিনি নিজে বা তাঁর দল সম্মতি দেয়নি, সেগুলোতেও তাঁর সম্মতি দেওয়া হয়ে যাচ্ছে।

আর যদি ‘না’ বলেন, তাহলে যেসব প্রস্তাবে তাঁর নিজের বা দলের সমর্থন আছে, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে, গণভোটের এই দ্বিতীয় প্রস্তাব কোনোভাবেই কোনো অর্থবহ জনমত বিচার করতে পারবে না। অতএব গণভোটের ব্যালটে এই দ্বিতীয় প্রশ্ন রাখাটা অর্থহীন, অন্যায্য ও অবিবেচনাপ্রসূত।

সংবিধান ‘পিপলস উইল’ বা জনগণে সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ। অতএব সেটির ছায়াতলে সবাই এক হবে, সেটিই কাম্য। সেই সংবিধানের জন্যই জাতি যদি বিভাজিত হয়, তাহলে সেটি হবে চরম স্খলন।

সংবিধান দেশের আইনের ভিত্তি। এ জন্য সেটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হওয়া বাধ্যতামূলক। দেশের একটি ছোট অংশও যদি মনে করে যে তাদের জন্য এই সংবিধান অন্যায্য, তাহলে ঐক্যের বদলে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যায্য না হলেও যদি জনমত সংবিধানের পক্ষে না থাকে, তবে যত ভালো বিশেষজ্ঞ দিয়েই সংবিধান তৈরি হোক না কেন, সেই সংবিধান দেশের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসতে পারে না।

কমিশনের বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলাপ না করে কমিশন শেষে এসে এককভাবে গণভোটে দুটি প্রশ্ন নিয়ে নাগরিকদের কাছে রায় চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তারা শুধু বলল, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এই কাজ করা হলো। বিশেষজ্ঞদের অজুহাত দিয়ে এ রকম অস্বচ্ছ গণভোট চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা খুবই অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত।

সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো যদি ধরে নিই, দেশের মানুষ পার্টি লাইনে বা দলীয়ভাবে বিভক্ত, তাহলে বিএনপি যেখানে আপত্তি দিয়েছে, সেটি হ্যাঁ ভোটে পাস হলে দেশের একটি বড় অংশ এই সংবিধান সংস্কারের বিপক্ষে চলে যাবে।

সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে একই সমস্যায় আমরা পড়ব। দেশের এক অংশের মানুষের কাছে চারটি মূলনীতি তাঁদের দেশভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। সেটি নিয়ে তাঁরা যে আপস করবেন না, সেটি কমিশনেই তাঁরা ওয়াকআউট করে জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে পাস করিয়ে নিলে দেশের মানুষ বিভাজিত হবেন। তখন দেশকে মূল্য দিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা দিয়ে।

সংবিধান ‘পিপলস উইল’ বা জনগণে সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ। অতএব সেটির ছায়াতলে সবাই এক হবে, সেটিই কাম্য। সেই সংবিধানের জন্যই জাতি যদি বিভাজিত হয়, তাহলে সেটি হবে চরম স্খলন।

ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে যত কষ্টই হোক, ঐকমত্যে পৌঁছানো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আমাদের বুঝতে হবে যে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানোর তুলনায় বিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নয়। ইতিহাস আমাদের শেখায় টেকসই সংবিধান করতে দু–তিন বছর ধরে আলাপ করাটাই শ্রেয়। নেপাল রাজতন্ত্র বিলোপের সংবিধান করতে নেয় ৯ বছর। আর ইন্দোনেশিয়া তাদের স্বৈরাচার আমলের সংবিধান সংস্কার করতে নিয়েছিল তিন বছর। আমাদের আর এক বছর এই আলাপ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে।

আমাদের দেশকে স্থিতিশীল রাখতে ও জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে সামনের গণভোট জুলাই সনদকে জন–আকাঙ্ক্ষা হিসেবে বৈধতা দেবে এবং পরবর্তী সংসদকে সেই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করার ক্ষমতা দেবে। যেসব প্রস্তাবে সব দলের ঐকমত্য আছে, সেসব প্রস্তাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাস করবে; যেসব বিষয়ে আপত্তি আছে, সেসব বিষয়ে আগামী সংসদকে প্রয়োজনীয় আলাপ করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টা ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছালে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য দুই–তৃতীয়াংশের সম্মতিতে পাস করবেন।

আমাদের সবাইকে, বিশেষ করে ঐকমত্য কমিশনকে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র খুব নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। অতএব সমস্যার সমাধানের দিকে না থেকে সমস্যার কারণ হয়ে উঠলে দেশ মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। ইতিহাস এ প্রক্রিয়াকে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত করবে। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে না এনে, তাড়াহুড়া না করে দুই ধাপে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করাই এখন কমিশনের কর্তব্য।

সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কর্মী

মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র জন য ঐকমত য আম দ র গণভ ট আপত ত সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলামী শাসনের বিকল্প নেই : ইলিয়াস আহমদ

​নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিস মনোনীত এমপি প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ বলেন, সমাজে চলমান দুর্নীতি ও অনাচার দূর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী শাসনের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, "আজ দেশের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি শিকড় গেড়ে বসেছে। সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। এই দুর্নীতি শুধু আইন বা লোকদেখানো অভিযানের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নৈতিক ভিত্তি এবং আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার অনুভূতি।

"ইসলামী শাসনব্যবস্থা মানুষকে শুধুমাত্র আইনের ভয় দেখায় না, বরং আল্লাহর ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি থেকে বিরত রাখে। এটাই দুর্নীতির মূল উৎপাটনের অধিক কার্যকরি পন্থা। 

​তিনি আরো বলেন, ইসলামী শাসনের অধীনে শাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সবাই আল্লাহ এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। সমাজের সকল মানুষের জন্য, ধনী-গরিব নির্বিশেষে, দ্রুত ও নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

যাকাত ও ওশরের মতো সুষম অর্থনৈতিক নীতিমালার মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হবে এবং সমাজ থেকে অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা দূর করে সৎ ও আদর্শিক মানুষ তৈরি করা হবে।

 

​ইলিয়াস আহমদ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জনগণের উদ্দেশে বলেন, "আমি আপনাদের মাঝে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে এসেছি। যেখানে জনগণের হক্ব রক্ষা করাই হবে আমার রাজনীতির মূল লক্ষ্য।"

​তিনি সকলকে খেলাফত মজলিসের পতাকাতলে একত্রিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়পরায়ণ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিস মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ নিজ সংসদীয় এলাকায় ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৬ নভেম্বর-২০২৫, বুধবার বিকালে ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। 

 

ফতুল্লা তাবলীগী মার্কাজ মসজিদ থেকে শুরু করে লামাপাড়া, লাখিবাজার, কুতুবপুর, কায়েমপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে শিবু মার্কেট এসে শেষ করেন। এসময় নেতৃবৃন্দ জনসাধারণের মাঝে খেলাফত মজলিস ও দেওয়াল ঘড়ি মার্কার পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেন। 

 

গণসংযোগে এমপি প্রার্থী ইলিয়াস আহমদের সাথে খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শরীফ মিয়াজী, মহানগর সহ-সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সমাজকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল করীম মিন্টু, ফতুল্লা থানা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শরীফ মাহমুদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, ডাঃ সাইফুল ইসলাম ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈশ্বরদীতে যা ঘটে গেল তা হঠাৎ করে হয়নি: জামায়াত আমির
  • সিলেটের ছয়টি আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ: বিএনপি নেতা কাইয়ুম চৌধুরী
  • জনগণের সম্পত্তির প্রতি শেখ হাসিনার ছিল লোভাতুর দৃষ্টি: আদালত
  • দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলামী শাসনের বিকল্প নেই : ইলিয়াস আহমদ
  • ইজমা: ইসলামি আইনের অন্যতম ‘দলিল’
  • ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জনগণের টাকা লুট হয়েছে: সাইদ আহমেদ
  • স্টিমরোলার নির্যাতনেও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি: মির্জা ফখরুল
  • গণভোটের ব্যালট পেপার হবে রঙিন
  • ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে’: জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • সংবাদমাধ্যম কখন নিজেকে প্রশ্ন করার সাহস রাখে