Prothomalo:
2025-10-13@04:04:46 GMT

দুই প্রশ্নের গণভোটের বিপদ

Published: 13th, October 2025 GMT

৩২টি দল মিলে টানা কয়েক মাস সংবিধান সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করার পর যেভাবে বৈঠকটির পরিসমাপ্তি টানা হলো, তাতে পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া টালমাটাল হয়ে পড়েছে।

সনদে ৮৪টি প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে ৩৯টি প্রস্তাব মানে প্রায় অর্ধেক প্রস্তাবে কোনো না কোনো দলের দ্বিমত আছে। ২৫টি প্রস্তাবে আংশিক আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে ৩৯ প্রস্তাবে সবাই সম্মত, সেগুলো একটি তালিকা করে নাগরিকদের সম্মতি বা অসম্মতি জানার জন্য গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। সেসব প্রস্তাব নিয়ে টানা দুই মাস আলাপ করে দেশের সব দল ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, সেগুলো নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন হবে।

নাগরিকদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলতে হলে তাঁদের তো বুঝতে হবে, কী তাঁরা মত দিচ্ছেন। যেসব বিষয়ে তাঁদের পছন্দের রাজনৈতিক দলগুলো একমত পোষণ করেছে, সেসব বিষয়ে সম্মতি দেওয়াটা সহজ। কারণ, তাঁরা ভেবে নিতে পারেন যে যেসব বিষয়ে সব নেতা একমত হয়ে বসে আছেন, সেখানে তাঁর ‘হ্যাঁ’ বলাতে কোনো ঝুঁকি নেই। প্রতিটি প্রস্তাব নিয়ে তাঁর গবেষণা করার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু যেসব বিষয়ে কোনো না কোনো দল আপত্তি তুলেছে, সেই ব্যালটের কী হবে? কোনো প্রস্তাবে যদি কোনো দলের আপত্তি থাকে, তাহলে একজন নাগরিকের দায়িত্ব হবে সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখা বা তাঁর দল যেদিকে রায় দিয়েছে, সেদিকে থাকা। সে ক্ষেত্রে তাঁর দল যেগুলোতে সায় দিয়েছে, শুধু সেগুলোতে তিনি সম্মতি দিতে চাইবেন। কিন্তু ব্যালটে তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে যেসব প্রস্তাবে তিনি নিজে বা তাঁর দল সম্মতি দেয়নি, সেগুলোতেও তাঁর সম্মতি দেওয়া হয়ে যাচ্ছে।

আর যদি ‘না’ বলেন, তাহলে যেসব প্রস্তাবে তাঁর নিজের বা দলের সমর্থন আছে, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে, গণভোটের এই দ্বিতীয় প্রস্তাব কোনোভাবেই কোনো অর্থবহ জনমত বিচার করতে পারবে না। অতএব গণভোটের ব্যালটে এই দ্বিতীয় প্রশ্ন রাখাটা অর্থহীন, অন্যায্য ও অবিবেচনাপ্রসূত।

সংবিধান ‘পিপলস উইল’ বা জনগণে সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ। অতএব সেটির ছায়াতলে সবাই এক হবে, সেটিই কাম্য। সেই সংবিধানের জন্যই জাতি যদি বিভাজিত হয়, তাহলে সেটি হবে চরম স্খলন।

সংবিধান দেশের আইনের ভিত্তি। এ জন্য সেটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হওয়া বাধ্যতামূলক। দেশের একটি ছোট অংশও যদি মনে করে যে তাদের জন্য এই সংবিধান অন্যায্য, তাহলে ঐক্যের বদলে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যায্য না হলেও যদি জনমত সংবিধানের পক্ষে না থাকে, তবে যত ভালো বিশেষজ্ঞ দিয়েই সংবিধান তৈরি হোক না কেন, সেই সংবিধান দেশের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসতে পারে না।

কমিশনের বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলাপ না করে কমিশন শেষে এসে এককভাবে গণভোটে দুটি প্রশ্ন নিয়ে নাগরিকদের কাছে রায় চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তারা শুধু বলল, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে এই কাজ করা হলো। বিশেষজ্ঞদের অজুহাত দিয়ে এ রকম অস্বচ্ছ গণভোট চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা খুবই অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত।

সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো যদি ধরে নিই, দেশের মানুষ পার্টি লাইনে বা দলীয়ভাবে বিভক্ত, তাহলে বিএনপি যেখানে আপত্তি দিয়েছে, সেটি হ্যাঁ ভোটে পাস হলে দেশের একটি বড় অংশ এই সংবিধান সংস্কারের বিপক্ষে চলে যাবে।

সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে একই সমস্যায় আমরা পড়ব। দেশের এক অংশের মানুষের কাছে চারটি মূলনীতি তাঁদের দেশভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। সেটি নিয়ে তাঁরা যে আপস করবেন না, সেটি কমিশনেই তাঁরা ওয়াকআউট করে জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে পাস করিয়ে নিলে দেশের মানুষ বিভাজিত হবেন। তখন দেশকে মূল্য দিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা দিয়ে।

সংবিধান ‘পিপলস উইল’ বা জনগণে সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ। অতএব সেটির ছায়াতলে সবাই এক হবে, সেটিই কাম্য। সেই সংবিধানের জন্যই জাতি যদি বিভাজিত হয়, তাহলে সেটি হবে চরম স্খলন।

ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে যত কষ্টই হোক, ঐকমত্যে পৌঁছানো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আমাদের বুঝতে হবে যে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানোর তুলনায় বিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নয়। ইতিহাস আমাদের শেখায় টেকসই সংবিধান করতে দু–তিন বছর ধরে আলাপ করাটাই শ্রেয়। নেপাল রাজতন্ত্র বিলোপের সংবিধান করতে নেয় ৯ বছর। আর ইন্দোনেশিয়া তাদের স্বৈরাচার আমলের সংবিধান সংস্কার করতে নিয়েছিল তিন বছর। আমাদের আর এক বছর এই আলাপ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে।

আমাদের দেশকে স্থিতিশীল রাখতে ও জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে সামনের গণভোট জুলাই সনদকে জন–আকাঙ্ক্ষা হিসেবে বৈধতা দেবে এবং পরবর্তী সংসদকে সেই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করার ক্ষমতা দেবে। যেসব প্রস্তাবে সব দলের ঐকমত্য আছে, সেসব প্রস্তাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাস করবে; যেসব বিষয়ে আপত্তি আছে, সেসব বিষয়ে আগামী সংসদকে প্রয়োজনীয় আলাপ করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টা ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছালে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য দুই–তৃতীয়াংশের সম্মতিতে পাস করবেন।

আমাদের সবাইকে, বিশেষ করে ঐকমত্য কমিশনকে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র খুব নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। অতএব সমস্যার সমাধানের দিকে না থেকে সমস্যার কারণ হয়ে উঠলে দেশ মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। ইতিহাস এ প্রক্রিয়াকে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত করবে। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে না এনে, তাড়াহুড়া না করে দুই ধাপে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করাই এখন কমিশনের কর্তব্য।

সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কর্মী

মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র জন য ঐকমত য আম দ র গণভ ট আপত ত সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে মুষলধারে বৃষ্টিতেই ড. ইকবালের গণসংযোগ  

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও- সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এমপি প্রার্থী প্রিন্সিপাল ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বৃষ্টি উপেক্ষা করে পিরোজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলেরগাঁও, বটতলা বাজার, শান্তির বাজার, দুধঘাটা ও পাঁচআনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হাসপাতাল গেইট মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুস সালামকে তার বাসায় দেখতে যান। 

শনিবার (১১ অক্টোবর ) সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও তিনি তার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেননি। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও অবিরাম গণসংযোগ চালিয়েছেন সকাল ০৯টা থেকে দুপুর ২:১৫ মি. পর্যন্ত। 

এ সময় প্রার্থী প্রিন্সিপাল ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া পাঁয়ে হেঁটে হেঁটে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান এবং ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিক দাঁড়িপাল্লায় ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, আমরা পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদের গুরুত্বসহ জামায়াতের ৫ দফা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোট চাই ভোটারের ও দোয়া চাই সকলের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, প্রিন্সিপাল ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, দলের কর্মীদের প্রতি ও জনগণের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং তাদের সমর্থন আমাকে এই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও থামতে দেয়নি। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি সফল করতে হবে আমি বিশ্বাস করি। বৃষ্টির মতো সামান্য বাধা আমাদেরকে এই দায়িত্ব থেকে দূরে সরাতে পারেন না।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, জনগণের সেবা করাই আমার প্রধান কর্তব্য। বৃষ্টির মতো সামান্য বাধা আমাদেরকে থামাতে পারে না। বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জনগণের কাছে যাওয়া, তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা এখন আমরা দ্বায়িত্ব মনে করছি।

তাই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের কাছে পৌছতে চাই। মানুষের দুঃখ কষ্টের সঙ্গী হতে পারলেই তো একজন নেতা সত্যিকারের নেতা হতে পারেন। আমি সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ দক্ষিণ এর বায়তুল মাল সেক্রেটারি এবং পিরোজপুর ইউনিয়ন পূর্ব সভাপতি নুরুল ইসলাম, পিরোজপুর ইউনিয়ন পশ্চিম সভাপতি জহিরুল ইসলাম সরকার, উপজেলা কর্ম পরিষদ সদস্য খন্দকার শাহ আলম সেক্রেটারি আবু তালিব, সহ-সভাপতি শাহ আলম খন্দকার, সোনারগাঁ থানা কর্মপরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক  মামুনুর রশিদ, শাহ জালাল, দুধঘাটা ইউনিট সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম, দুর্গা প্রসাদ ইউনিক সভাপতি আলী আকবর, পাঁচআনি ইউনিট সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্দায় আড়াল করা নীতি থেকে সরে আসুন
  • সুপারিশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়ার চিন্তা
  • সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত
  • পিআর আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন বিলম্বিত করা: মির্জা ফখরুল
  • পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যার দাবি কাবুলের, ১৯ আফগান ফাঁড়ি ‘দখল’ ইসলামাবাদের
  • সোনারগাঁয়ে মুষলধারে বৃষ্টিতেই ড. ইকবালের গণসংযোগ  
  • দুই দিন পিছিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ১৭ অক্টোবর
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে: বদিউল আলম
  • যাঁরা গণভোট দেবেন তাঁরা গণভোট নিয়ে কতটা জানেন