বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাদা-নীল দলে বিভক্ত, এই বিভাজন বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

তিনি বলেছেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ খুবই সামান্য। শিক্ষকরা সাদা-নীল দলে বিভক্ত—এই বিভাজন বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান দিতে হবে, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

সারা দেশে সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা মঙ্গলবার

শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে

সোমবার (১৩ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের আত্মত্যাগ স্মরণে আন্তঃবিভাগ পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেন শিক্ষকদের ওপর কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ বা দমননীতি প্রয়োগ না করা হয়। আগামী বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।”

সাদিক কায়েম বলেন, “স্লোগান আর মুক্তির কথা বলতে গিয়ে আমরা ১৬ বছর ধরে এক যুদ্ধ চালিয়ে গেছি। এ সময়ে ফ্যাসিস্টদের উত্থান দেখেছি, দেখেছি শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের অনেকেই জুলুমের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে মৌন সম্মতি দিয়েছে। তারা মুক্তির কথা বলেছে, কিন্তু হিপোক্রেসির মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদেরই টিকিয়ে রেখেছে।”

তিনি বলেন, “২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনায়ও অনেক বুদ্ধিজীবী নিরব থেকেছেন। তারা সমাজের প্রকৃত মুক্তির কথা কখনো বলেননি। ইসলামি ছাত্রশিবির সবসময় সৃজনশীলতা, কল্যাণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ করে আসছে। সুন্দর সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সব শহীদ ও গাজীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। যারা এখনো হাসপাতালে আছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের হাসিবের প্রতিও রইল শ্রদ্ধা।”

ডাকসু ভিপি বলেন, “আজ আমরা মুক্তভাবে কথা বলতে পারি। একসময় হলে শিবিরের নাম বললেই মারধর, নির্যাতন, এমনকি হত্যা করা হত; হিপোক্রেসির মাধ্যমে। এখন অন্তত নিজেদের পরিচয় বলতে পারি, এটা বড় অর্জন।”

ভিপি আরো বলেন, “সাম্প্রতিক গুম ও নির্যাতনের রিপোর্টে দেখা গেছে, ইসলামি ছাত্রশিবিরের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে। অথচ আমরাই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি, যা ৫ আগস্টের পর সেটা আমরা প্রতিটা ক্যাম্পাসে দেখিয়েছি।”

ছাত্র রাজনীতির সংস্কার নিয়েও কথা বলেন ডাকসু ভিপি। তিনি বলেন, “আগস্টের পরে আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞানের ভাণ্ডার। আগামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির প্যানেল সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

অনুষ্ঠানে শহীদ সাজিদের বোন ফারজানা বলেন, “জকসু নির্বাচনে যে-ই আসুক না কেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কাজ করবে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশা। আর আমি চাই, শহীদ সাজিদের পরিবারের পক্ষ থেকে যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজিদের নামটি যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকে।”

বিশেষ অতিথি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড.

মো. বেলাল হোসাইন বলেন, “বিতর্ক এমন একটি মাধ্যম, যা যুক্তি খণ্ডনের মাধ্যমে চিন্তাশক্তিকে শাণিত করে। আমারও একসময় কিছুটা জড়তা ছিল, কিন্তু বিতর্কে অংশ নেওয়ার পর তা কেটে গেছে। বিতর্ক শুধু আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, পরীক্ষার খাতায়ও যুক্তিনির্ভর ও সুন্দরভাবে মত প্রকাশে সাহায্য করে। যে বিতর্ক করতে পারে, সে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ভাবনা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়।”

তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়াটা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকা অপরিহার্য। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষককে জ্ঞাননির্ভর কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র ব তর ক র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্র্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যাপক ছাড়ের পাশাপাশি নজরদারির সুযোগ রয়েছে: টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট

‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ও ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকার তড়িঘড়ি করেছে। ফলে এগুলোতে কাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রক্রিয়াগত ফাঁক রয়ে গেছে; যা তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বা অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে। অধ্যাদেশ দুটির খসড়ায় রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি নজরদারির সুযোগও রাখা হয়েছে।

আজ সোমবার নীতিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ কথাগুলো বলে।

বিবৃতিতে টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ বলেন, খসড়াগুলো এমন সময়ে অনুমোদিত হয়েছে, যখন নাগরিক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা আরও বিস্তৃত ও স্বচ্ছ পরামর্শ প্রক্রিয়ার আহ্বান করেছিল। সরকারের এখন উচিত খসড়া দুটির অনুমোদনের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রমাণভিত্তিক পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নেওয়া।

যেসব উদ্বেগ তুলে ধরেছে টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট

খসড়া ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ কোনো বিশেষ শর্ত ছাড়াই দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি ডেটা পরিচালকদের জন্য প্রযোজ্য। এটি আইনি অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে, আন্তর্জাতিকভাবে নানা বিষয়ে অসংগতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

আইনগুলো রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থের মতো অস্পষ্ট কারণ দেখিয়ে (নিয়মের ক্ষেত্রে) ছাড় দেয়। এতে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা সীমিত তদারকিতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যা নাগরিকের গোপনীয়তা দুর্বল করে। টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের আগের গবেষণায় দেখা গেছে, এমন ধারা আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রস্তাবিত কাঠামোর বাইরে নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা ব্যক্তিগত অধিকার ও সুনামের সুরক্ষার মতো বিস্তৃত ও অস্পষ্ট কারণ দেখিয়ে কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, সুরক্ষা ব্যবস্থা বা যৌক্তিকতা ছাড়াই ব্যক্তিগত তথ্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপক ক্ষমতা ধরে রেখেছে। পাশাপাশি তথ্যের স্থানীয় সংরক্ষণ বা দেশান্তরিত তথ্য আদান-প্রদানে শর্ত আরোপের ক্ষমতাও বজায় রয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় অপব্যবহার, আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রবাহে বাধা এবং ব্যবসায়ের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়াও এই খসড়া অনুযায়ী যেকোনো তথ্যকে যেকোনো সময় ‘সংবেদনশীল’ ঘোষণা করা যেতে পারে, যা নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সীমিত করতে পারে।

প্রস্তাবিত শাস্তি—সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা অতিরিক্ত এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে অসংগত। সেই তুলনায় ভারত বা শ্রীলঙ্কায় ফৌজদারি শাস্তির পরিবর্তে প্রশাসনিক জরিমানা প্রাধান্য পায়। অতিরিক্ত শাস্তি উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে বাধা দিতে পারে।

অপরাধে জড়িত না থাকার প্রমাণ দিতে না পারলে খসড়ায় কোম্পানির কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায় আরোপের বিধান রয়েছে। করপোরেট অপরাধে ব্যক্তিগত দায় যুক্ত করলে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সামষ্টিক দায় এড়িয়ে শুধু ব্যক্তির ওপর দোষ চাপানোর সুযোগ পেতে পারে।

আরও পড়ুনগোপনীয়তার আশ্রয় ও তড়িঘড়ি করে ব‍্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন১১ অক্টোবর ২০২৫

আইনগুলো রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ‘জনস্বার্থ’ বা ‘সার্বভৌমত্বের’ মতো বিষয়ে অস্পষ্ট নিয়ম, আদেশ বা নির্দেশ জারি করার ক্ষমতা দেয়। স্পষ্ট সীমা বা পর্যবেক্ষণ না থাকায় অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।

যদিও ব্যক্তি তথ্য লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে, খসড়াগুলো এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেয় না। ফলে ক্ষতিপূরণ মামলা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফল তৈরি হতে পারে।

অপরাধে জড়িত না থাকার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে খসড়ায় কোম্পানির কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায় আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। করপোরেট অপরাধে ব্যক্তিগত দায় যুক্ত করলে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সামষ্টিক দায় এড়িয়ে শুধু ব্যক্তির ওপর দোষ চাপানোর সুযোগ পেতে পারে।

খসড়া আইনে রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ‘জনস্বার্থ’ বা ‘সার্বভৌমত্বের’ মতো বিষয়ে অস্পষ্ট নিয়ম, আদেশ বা নির্দেশ জারি করার ক্ষমতা দেয়। স্পষ্ট সীমা বা পর্যবেক্ষণ না থাকায় অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। যদিও ব্যক্তি তথ্য লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে, খসড়াগুলো এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেয় না। ফলে মামলা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ভিন্ন হতে পারে এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফল তৈরি হতে পারে।

খসড়া আইনগুলোতে একটি উচ্চাভিলাষী নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর পরিকল্পনা থাকলেও, তা বাস্তবায়নের মতো প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বর্তমানে বাংলাদেশের নেই। প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ডেটা গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইন্টার–অপারেবিলিটি অথরিটি নীতিনির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তিগত কাজ—সবকিছুই একসঙ্গে দেখবে, কিন্তু এসবের মধ্যে সমন্বয় ও দায়িত্ব বণ্টনের স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় প্রস্তাবিত ধারা প্রশংসনীয় হলেও, কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো অনুপস্থিত।

তথ্য পরিচালনায় যুক্ত সংস্থায় নিয়োগ প্রায় সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ বা স্বচ্ছতা সীমিত। এটি আইনটির স্বাধীনতা ও বৈধতা কমিয়ে দেয়, যা মূলত পুরোনো শাসনব্যবস্থা বা পরিচালনার ধরনকেই অনুসরণ করছে, যেখানে কাজের প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ একই সঙ্গে পর্যাপ্ত জবাবদিহি বা তদারকি ছিল না। ফলে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোরও স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতায় ঘাটতি তৈরির আশঙ্কা রয়ে যায়।

আরও পড়ুনব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ: কর্তৃপক্ষের অবাধ ক্ষমতায় অপব্যবহারের ঝুঁকি১২ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ