পিআর পদ্ধতি ব্যক্তির প্রতিনিধি পছন্দের স্বাধীনতা খর্ব করে: ফখরুল
Published: 13th, October 2025 GMT
এখন দেশে হঠাৎ করে নতুন পদ্ধতি চালু করলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমরা সব সময়ই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন সে চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছু বিষয় আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। পিআর পদ্ধতির মূল সমস্যা হলো, এতে ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী নির্বাচনের স্বাধীনতা খর্ব হয়। ভোটারকে ব্যক্তির বদলে দলকে বেছে নিতে হয়। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্বের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ে।”
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জনতা চায় নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, এটিই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন ফখরুলের
মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত পিআর–পদ্ধতি এখন বাস্তবায়ন করা উচিত নয়। এটি জনগণের কাছে নতুন ও অপরিচিত একটি ব্যবস্থা। তাই বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও দ্রুত নির্বাচন চাওয়া মানুষের জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়।”
মির্জা ফখরুল জানান, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন; কিন্তু এখন বাংলাদেশকে একটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিভিন্ন রকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা আশা করছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ আরেকবার রায় দেবে যে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক। আর তারা বাংলাদেশি জাতীয়তা বিশ্বাস করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আজকের রাজনীতিতে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে তারা যে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলেন একটি আলাদা পরিচয়ের জন্য, সে পরিচয় ভুলিয়ে দিয়ে নতুন করে কতকগুলো চিন্তাভাবনা সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।”
“আমরা সবাই বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ। জাতি হিসেবে এটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই কথাগুলো তারা যখন সামনে আনেন, তখন একটা চেতনা, একটা ধারণা তৈরি হয়। সেই চেতনা-ধারণাকে তারা ধারণ করতে চান।”
“আমরা এ কথা খুব পরিষ্কার করে ও অত্যন্ত উচ্চ কণ্ঠে বলতে চাই, উচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করতে চাই যে আমরা বাংলাদেশি এবং ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছি। এটা আমাদের বলতে হবে, প্রতিমুহূর্তে মনে রাখতে হবে।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশকে একটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তারা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছেন।”
“আমরা খুব আশা করে আছি যে আগামী নির্বাচনে জনগণ আরেকবার রায় দেবেন যে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থেই তারা অসাম্প্রদায়িক এবং তারা বাংলাদেশি জাতীয়তা বিশ্বাস করেন,” বলেন তিনি।
মতবিনিময়ে খ্রিষ্টান ফোরামের নেতারা তাদের একজনকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আবেদন দলীয় প্রধানের কাছে পৌঁছে দেবেন। বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র র স ব ধ নত র জন য আম দ র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
জনতার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়
কুড়িগ্রামের রৌমারীর বকবান্ধা ও ব্যাপারীপাড়া এলাকায় জিঞ্জিরাম নদের তীরের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ভাঙনের প্রতিকূলতায় দীর্ঘদিন ধরে জীবন যাপন করে আসছেন। অতিবৃষ্টিতে ঢল ধরলে ঘরবাড়ি, জমিজমা, এমনকি অনেকের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে যায়। কিন্তু এই ভাঙনের বিপদ ঠেকানো নিয়ে প্রশাসনের দায় বা দায়িত্ব দুটোই যেন হারিয়ে গেছে নীরবতায়।
প্রথম আলোর খবরে এসেছে, প্রশাসনের আশায় বসে না থেকে স্থানীয় লোকজনই উদ্যোগ নিয়ে নদের তীরে অস্থায়ী বাঁশের বান্ডাল এবং জিও ব্যাগ স্থাপন করেছেন নদীভাঙন মোকাবিলা করতে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের ‘ট্রোসা-২’ প্রকল্পের সহায়তায় এবং স্থানীয় লোকজনের স্বেচ্ছাশ্রমে ৬০০ মিটার এলাকায় ২৭টি বাঁশের বান্ডাল নির্মাণ করা হয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগও যোগ হয় এই উদ্যোগে। এতে অন্তত ৪০০ পরিবার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় লোকজন নিজ অর্থায়ন ও শ্রম দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করেছেন; যাঁদের বেশির ভাগই নানাভাবে নদীভাঙনের ভুক্তভোগী।
এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, প্রশাসন কেন দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেনি? যে সংস্থাগুলো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে পারত, তারা কেন স্থানীয় মানুষের ওপর এই দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে? এটি স্পষ্ট করে যে স্থানীয় প্রশাসন ক্রমেই উদাসীন হয়ে পড়েছে। উপায় না পেয়ে জনগণই যেই কাজ করছে, যা প্রশাসনের করার কথা। তবে স্থানীয় লোকজনের এই উদ্যোগ আপাতত কাজ চালানোর মতো হলেও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়।
বাঁশ ও জিও ব্যাগের সমন্বয় সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ না হলে নদীভাঙনের আতঙ্ক ফেরার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম ও স্থানীয় এ উদ্যোগকে সহায়তা করে স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। না হলে কেবল অস্থায়ী সুরক্ষা নয়, বরং জনসাধারণের দুর্দশা ও ঝুঁকি বারবার পুনরাবৃত্তি হবে।
বকবান্ধা ও ব্যাপারীপাড়ার জনগণকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, প্রকৃত প্রয়াস থাকলে ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো সমস্যার সমাধান কেবলই সময়ের ব্যাপার। স্থানীয় জনগণকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন দ্রুতই ওই এলাকায় নদীভাঙন মোকাবিলায় কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেবে। নিজেদের সমস্যা মোকাবিলায় যেই দায়িত্বশীলতা স্থানীয় জনগণ দেখিয়েছেন, তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রশাসনও টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে।
জনগণ দায়িত্বশীল হলেও প্রশাসন যদি উদাসীন থেকে যায়, তাহলে প্রকৃত সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় না। তাই প্রশাসনকে জনগণের এই সংকটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে টেকসই সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।