‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে’ চিরুনি অভিযান চায় ডাকসুসহ ৪ ছাত্র সংসদ
Published: 11th, November 2025 GMT
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ তুলে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। একই সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র সংসদগুলোর চার ভিপি (সহসভাপতি)।
আজ মঙ্গলবার দেওয়া এই বিবৃতিতে সই করেছেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসুর আব্দুর রশিদ জিতু, চাকসুর ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)। ‘সম্মিলিত ছাত্র সংসদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ মুক্তিকামী জনগণ ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ বছরের দুঃসহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ যখন ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর চিরস্থায়ী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।’
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপিরা বলেন, ইতিপূর্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডব থেকে শুরু করে দেড় দশক ধরে গুম-খুন, গণহত্যা ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।
ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক দেশজুড়ে নাশকতা, চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিকাণ্ড, ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হলেও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে এই দেশদ্রোহী গণহত্যাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে এবং দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জাতিকে নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান উন্নতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে ‘আওয়ামী দুর্বৃত্তপনার’ বিরুদ্ধে সরকারকে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণেরও দাবি জানান চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপিরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা ইতিমধ্যে শুরু করেছে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা। জনগণের জানমালের হেফাজত এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শিকড় সমূলে উৎপাটনে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই গণহত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এখনো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এসব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একই সঙ্গে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলমত–নির্বিশেষে দেশের সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত র স দ র ও সন ত র স গণহত য সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সতর্ক পুলিশ
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে আজ সোমবার ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ১৩ নভেম্বর, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের এ কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, রাজধানীতে ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থাকবেন অন্তত ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে ১৩ নভেম্বর। ওই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী)। জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা, যেটির রায় ঘোষণার তারিখ জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পেজসহ নেতাদের পেজে ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের কথা বলা হচ্ছে। পুলিশও কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ঢাকায় অভিযান ও তল্লাশি চালাচ্ছে। এরই মধ্যে চোরাগোপ্তা হামলার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। আজ ঢাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয় এবং ছয়টি জায়গায় নয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আজ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মসূচি পালনে রাস্তায় বের হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এ মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। অপ্রীতিকর কিছু করবে—এমন কোনো আশঙ্কাও নেই।
বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ
বাসে আগুন দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটে আজ সন্ধ্যার পর ধানমন্ডির মিরপুর রোডে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে। পুড়ে যাওয়া বাসটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এতে হতাহতের কোনো ঘটেনি। এর আগে আজ ভোরে আধঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতেও কেউ হতাহত হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাশেদ বিন খালেদ বলেন, সোমবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে এবং বাড্ডার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল সোয়া ছয়টার দিকে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
রাজধানীর মিরপুর ও ধানমন্ডির দুটি করে জায়গায় এবং মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁওয়ের একটি করে জায়গায় মোট ৯টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চারটি জায়গাতেই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে আসা ব্যক্তিরা ককটেল ছোড়ে। দুটি জায়গায় কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে খিলগাঁও উড়ালসড়কের ওপরে দুর্বৃত্তরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ বলেছে, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে সকাল সাতটার দিকে মোহাম্মদপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুই দুর্বৃত্ত হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার এক নিরাপত্তাকর্মী। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) ক্যামেরার ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া ভোর পৌনে চারটার দিকে মিরপুর–২ নম্বরের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলে এসে দুই দুর্বৃত্ত এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। চেহারা বোঝা যায়নি। তবে দুজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশপথে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। বাবু বাজার এলাকা, ১০ নভেম্বর