গুগলের ওয়েমো রোবোট্যাক্সি চলবে নতুন তিন শহরে
Published: 11th, November 2025 GMT
গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ি নির্মাতা ওয়েমো। ওয়েমো যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট, লাস ভেগাস ও সান ডিয়েগো শহরে রোবোট্যাক্সি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহ থেকে নতুন তিন শহরে পরীক্ষামূলকভাবে রোবোট্যাক্সি সেবা শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে ওয়েমো বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে সেলফ ড্রাইভিং যানবাহন প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করা ওয়েমো। প্রযুক্তি গবেষণা থেকে সরে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক সেবায় মনোযোগ দিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি টেকক্রাঞ্চ ডিজরাপ্ট ২০২৫ সম্মেলনে ওয়েমোর সহপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (কো-সিইও) টেকেড্রা মাওয়াকানা বলেন, ‘এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দ্রুত সম্প্রসারণ। ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ আমরা সপ্তাহে অন্তত ১০ লাখ ট্রিপ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছি। বর্তমানে ওয়েমো সপ্তাহে প্রায় আড়াই লাখ রোবোট্যাক্সির ট্রিপ সম্পন্ন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।’
ওয়েমো দীর্ঘদিন সিলিকন ভ্যালিতে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তি পরীক্ষা চালাচ্ছে। ওয়েমো প্রথম বাণিজ্যিক রোবোট্যাক্সি সেবা চালু করে ফিনিক্স শহরে। পরে সেবা সম্প্রসারিত হয় সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলেসে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি আটলান্টা ও অস্টিনে উবারের সঙ্গে অংশীদারত্বে রোবোট্যাক্সি সেবা চালু করে। ২০২৬ সালের মধ্যে ডেনভার, মায়ামি, ন্যাশভিল, লন্ডন, সিয়াটল ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন ঘোষণায় ওয়েমো জানায়, ডেট্রয়েট, লাস ভেগাস ও সান ডিয়েগো শহরে তারা জাগুয়ার আইপেস ও জিকার আরটি মডেলের সেলফ ড্রাইভিং গাড়ি ব্যবহার করবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের জন্য সেবা উন্মুক্ত করা হবে না। প্রতিষ্ঠানটির প্রচলিত কৌশল অনুযায়ী, প্রথমে মানবচালক গাড়ি চালিয়ে শহরের রাস্তার মানচিত্র তৈরি করবেন। পরবর্তী ধাপে মানবচালক সরিয়ে দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে সব গাড়ি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল শুরু করবে। গাড়িগুলোতে উন্নত মানের ক্যামেরা, রাডার, লিডার সেন্সর এবং সেলফ ড্রাইভিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। কিছু সময় পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পর সেবা সীমিত আকারে ওয়েমোর কর্মী, সংবাদমাধ্যমকর্মী ও নির্বাচিত কিছু ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হবে। ধীরে ধীরে তা সাধারণ মানুষের জন্য চালু করা হবে। লাস ভেগাসের মেয়র শেলি বার্কলি বলেন, ‘ওয়েমো ও তাদের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আগমন কোনো পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নয়। এটি আমাদের শহরের বাসিন্দা ও লাখো পর্যটকের জন্য নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও আধুনিক পরিবহনের বিকল্প। শহর প্রশাসন এই প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ওয়েমো আগেও ডেট্রয়েট, লাস ভেগাস ও সান ডিয়েগোতে পরীক্ষামূলকভাবে সেলফ ড্রাইভিং গাড়ি চালিয়েছে। ডেট্রয়েট অঞ্চলে সংস্থাটির প্রকৌশলীদের একটি দল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তুষারপূর্ণ পরিবেশে গাড়ি চালানোর সক্ষমতা উন্নত করতে টানা কয়েক মৌসুম ধরে ডেট্রয়েট শহর ও আশপাশের এলাকায় গাড়ি চালানো হয়েছে। ওয়েমোর দাবি, তাদের সেলফ ড্রাইভিং প্রযুক্তির সাধারণ নকশা দ্রুত সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নই তাদের রোবোট্যাক্সি বাজারে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তবে প্রতিযোগিতায় ওয়েমো একা নয়। জুক্স বর্তমানে লাস ভেগাসে বিনা মূল্যে রোবোট্যাক্সি সেবা দিচ্ছে। অন্যদিকে টেসলা অস্টিন শহরের কিছু এলাকায় মানবচালকসহ পরীক্ষামূলক রোবোট্যাক্সি সেবা চালাচ্ছে।
সূত্র: টেকক্রাঞ্চ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বয় ক র য় ব যবহ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের নজর এবার নিউইয়র্ক রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ, লড়বেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এলিস স্টেফানিক
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির কাছে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর পরাজয়কে যেন মেনে নিতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তিনি এবার নিউইয়র্ক রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। এ কারণেই কিনা তাঁর ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান (প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য) এলিস স্টেফানিক নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর পদে লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন।
২০২৬ সালের নভেম্বরে এই রাজ্যে গভর্নর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ডেমোক্রেটিক দলীয় গভর্নর ক্যাথি হচুল।
নিজের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়ে স্টেফানিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ (সাবেক টুইটার) ক্যাথি হচুলকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বাজে গভর্নর’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, হচুলের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে নিউইয়র্ক বর্তমানে ‘দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র৪১ বছর বয়সী এলিস স্টেফানিক ২০১৪ সাল থেকে নিউইয়র্কের ২১তম কংগ্রেসনাল আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসনের সময় স্টেফানিক তাঁর অন্যতম প্রধান সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হন।
স্টেফানিক তাঁর সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী হচুলকে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রতি দেরিতে সমর্থন জানানোরও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, হচুল ‘নিউইয়র্ক পুলিশের তহবিল বন্ধ এবং কর বৃদ্ধির উদ্যোগী কমিউনিস্ট’ জোহরান মামদানির কাছে মাথা নত করেছেন। জোহরানের এসব উদ্যোগ নিউইয়র্কে বসবাসরত পরিবারগুলোর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
হচুলের পাল্টা জবাবস্টেফানিকের ঘোষণার পরপরই গভর্নর ক্যাথি হচুলও কড়া জবাব দিয়েছেন। তিনি রিপাবলিকান প্রতিনিধিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘কংগ্রেসে এক নম্বর চিয়ারলিডার এবং নিউইয়র্কের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যুদ্ধে ডান হাতের নারী’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন দূত পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রক্ষার কথা বিবেচনা করে পরে সেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
জরিপ ও চ্যালেঞ্জগত সেপ্টেম্বরে সিয়েনা কলেজের এক জরিপে দেখা যায়, হচুলের প্রতি জনসমর্থন রয়েছে ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে স্টেফানিকের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নিউইয়র্কের ২৭ শতাংশ ভোটার। সেই দিক বিবেচনায় নিলে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হচুল অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।
তবে সিয়েনার ওই জরিপে হচুলের নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষের চিত্রও উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ ভোটার জানান, তাঁরা ২০২৬ সালে অন্য কাউকে গভর্নর হিসেবে দেখতে চান।
স্টেফানিককে গভর্নর পদে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে (দলীয় প্রাথমিক বাছাই) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হতে পারেন। আবার হচুলও তাঁর লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্টনি ডেলগাডোর কাছ থেকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।
নিউইয়র্কে রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত সর্বশেষ গভর্নর ছিলেন জর্জ পাটাকি। তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজ্যের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।