ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)৷ রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই মনোনয়নপত্র বিক্রি চলে। এনসিপির মনোনয়নপত্র কেনা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত।

এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বেশির ভাগই এখনো দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেননি৷ তবে গতকাল রাতে ঢাকা-৯ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা৷

ঢাকা-৯ সংসদীয় আসনটি সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা ও মান্ডা থানা নিয়ে গঠিত৷ বিএনপি ঢাকার বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও এই আসন ফাঁকা রেখেছে৷ এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারার জন্যই আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷

গতকাল সোমবার রাতে বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তি ও তাঁদের সমর্থকেরা সেখানে ভিড় করেছেন৷ সমর্থকেরা প্রার্থীদের পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন৷ প্রার্থী ও সমর্থকদের অনেককে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সুপরিচিত নেতাদের অনেকের সঙ্গে ছবি তুলতেও দেখা গেল।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মনোনয়নপত্র বিতরণ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী৷ প্রতিটি মনোনয়নপত্রের মূল্য ১০ হাজার টাকা৷ তবে জুলাই যোদ্ধা এবং স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের জন্য মনোনয়নপত্রের দাম ২ হাজার টাকা৷

এনসিপির কতটি মনোনয়নপত্র বিক্রি হলো, তা এখনই জানাতে চান না নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী৷ তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়নপত্র বিতরণ চলছে৷ অনেক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিচ্ছেন৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেওয়া যাবে৷ কত মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে, তা পরে জানানো হবে৷

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত সন ম জ র এনস প র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গতবার আলোচনায় ছিলেন, এবার উধাও সাত্তার ভূঁইয়া ও আমিনীর ছেলে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের ধানের শীষ প্রতীকের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের দুই সন্তান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে থেকে ব্যাপক আলোচিত হলেও এবার মাঠে নেই। এমনকি তাঁদের দেখাও মিলছে না।

এই দুজন হলেন ছয়বারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির দলছুট নেতা প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান ভূঁইয়া এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের নেতা প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবুল হাসানাত আমিনী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী ছিলেন না। আওয়ামী লীগের ছাড়ের আশায় তাঁরা দুজনই নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঈন উদ্দিন জয় লাভ করেন। নির্বাচনে মাইনুল হাসান তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪ হাজার ৩১৮ ভোট পান। আর আবুল হাসানাত আমিনী দলীয় প্রতীক মিনার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৯৯৪ ভোট পান। দুজনই জামানত হারিয়ে নির্বাচনের পর এলাকা ছাড়েন।

আবুল হাসানাত আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের আমিনপুরের ভোটার ছিলেন। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। বাবার মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করে সরাইল উপজেলা সদরের হালুয়াপাড়া গ্রামের ভোটার হন। তবে এখানে তাঁকে দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রাজনীতি–পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে দল (বিএনপি) যদি আমাকে ডাকে অবশ্যই সাড়া দেব। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে আমি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিলাম।মাইনুল হাসান ভূঁইয়া, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে২০১৬ সালে আমরা বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে এসেছি। এর পর থেকে আমরা স্বতন্ত্র হয়েই আছি। এখনো কোনো জোটে যাওয়ার চিন্তা করিনি। ২০২৪ সালে আমি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে শুধু প্রতীকের প্রচারণার জন্য নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিল।আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে

আর প্রয়াত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরবেষ্টিত পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি দল ত্যাগের আগপর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ছয়বারের মধ্যে চারবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আসনটি চারদলীয় জোটের নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে ছেড়ে দেন। তখন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী হন।

ওই নির্বাচনে মুফতি ফজলুল হক আমিনী ৪৩ হাজার ২৬১ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমকে পরাজিত করে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে একাধিকার নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন। মুফতি আমিনী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধার লাঙ্গল প্রতীকের কাছে ৪৯ হাজার ৩৯৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি) হয়ে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি সাত্তারকে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর ওই বছরের ৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ফের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই উপনির্বাচনের আগে সাত্তারপুত্র মাইনুল হাসান ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের শাহজাহান আলমকে। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ থাকা ওই নির্বাচনে শাহজাহান আলম বিজয়ী হলেও মেয়াদ–স্বল্পতার কারণে সংসদে একমুহূর্তের জন্যও বসতে পারেননি তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও মাইনুল হাসান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। অতঃপর যোগ দেন তৃণমূল বিএনপিতে। আসনটি ছেড়ে দেওয়া হবে আওয়ামী লীগের নিকট থেকে এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন মাইনুল হাসান। ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েও ৪ হাজার ৩১৮ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি। এরপর ৫ আগস্টের পর তিনি এলাকা ছাড়েন।

বর্তমানে সরাইল, আশুগঞ্জ এবং বিজয়নগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৭টি। সম্প্রতি বিএনপি ২৩৭টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে প্রার্থী স্থগিত রাখা হয়েছে। আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানা। কিন্তু প্রাথমিক মনোনয়নে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এতে রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। নানা সমীকরণে আসনটিতে শেষ পর্যন্ত কে সংসদ সদস্য হবেন, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও আছে নানা আলোচনা।

এবারের নির্বাচনে কোনো তৎপরতা না দেখা গেলেও রাজনীতি ছাড়েননি বলে জানান মাইনুল হাসান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি–পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে দল (বিএনপি) যদি আমাকে ডাকে অবশ্যই সাড়া দেব। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে আমি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিলাম।’

গত নির্বাচনে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর ঝিমিয়ে পড়া নিয়ে আবুল হাসানাত আমিনীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই (তারেক রহমান) দেশে না আসা পর্যন্ত কোনোটাই বলা যায় না। বর্তমানে আমি মনে করি উনি বাংলাদেশের জন্য একটা স্তম্ভ। উনার দেশে না আসাটা অনেক কিছুই ইঙ্গিত করে। উনার আইসা পড়া উচিত। ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার আমি তো কোনো সিম্পটম দেখি না। এখনো কিছুই করা হয়নি। নির্বাচন হওয়ার মতো পরিবেশ হলে মাঠে নামব।’

জোট ছাড়া ও গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রশ্নে আবুল হাসানাত বলেন, ‘২০১৬ সালে আমরা বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে এসেছি। এর পর থেকে আমরা স্বতন্ত্র হয়েই আছি। এখনো কোনো জোটে যাওয়ার চিন্তা করিনি। ২০২৪ সালে আমি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে শুধু প্রতীকের প্রচারণার জন্য নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিল।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গতবার আলোচনায় ছিলেন, এবার উধাও সাত্তার ভূঁইয়া ও আমিনীর ছেলে
  • ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দলীয় প্রার্থী চান বিএনপির নেতা–কর্মীরা