সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে যাতায়াতের ঘটনায় প্রত্যাহারের দুই মাস পর এবার বরখাস্ত হলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার নাজমুল করিম খান।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।

সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বরাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গাজীপুর মহানগর পুলিশের-জিএমপি কমিশনার (কর্মস্থল থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রত্যাহৃত) মো.

নাজমুল করিম খানকে জনস্বার্থে সরকারি কর্ম থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন। সেহেতু নাজমুল করিম খানকে সরকারি চাকরি আইনের বিধান মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

এতে আরো বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের স্বাক্ষরিত এক আদেশে জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-গাজীপুরে যাতায়াতের সময় তার চলাচলের জন্য রাস্তা বন্ধ করে রাখার খবর প্রকাশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

বিসিএস ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. নাজমুল করিম খান পুলিশ সুপার থাকার সময় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি ফিরে পান তিনি। এরপর দ্রুত দুটি পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন নাজমুল।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘তোমরাও তো এমনই ছিলে, আল্লাহ তোমাদের অনুগ্রহ করেছেন’

জীবনের পথে চলতে গেলে মাঝেমধ্যে আমরা অন্যের ভুল দেখে তিরস্কার করি, কিন্তু নিজের অতীত ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের এই দুর্বলতা থেকে সতর্ক করেছে।

সুরা নিসার ৯৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, যখন তোমরা আল্লাহর পথে সফর করো, তখন ভালো করে যাচাই করে নাও। যে তোমাদের দিকে সালাম ছুঁড়ে দেয়, তাকে বলো না যে তুমি মুমিন নও—দুনিয়ার সম্পদের লোভে। আল্লাহর কাছে তো অনেক “গনিমত” আছে। তোমরাও তো আগে এমনই ছিলে, অতঃপর, আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং ভালো করে যাচাই করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৪)

তোমরা আগে কাফির ছিলে, শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইসলামে প্রবেশ করেছ। যদি কেউ তোমাদের ইসলামকে সন্দেহ করত, তাহলে কি তোমাদের ভালো লাগত?

এই আয়াতের শেষাংশ ‘কাজালিকা কুনতুম মিন কাবলু ফামান্নাল্লাহু আলাইকুম’—অর্থাৎ ‘তোমরাও তো আগে এমনই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন’—এতে লুকিয়ে আছে গভীর শিক্ষা।

ইমাম ইবনে আশুর (রহ.) তাঁর তাফসিরে বলেন, এই কথায় তিরস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বড় একটা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তোমরা আগে কাফির ছিলে, শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইসলামে প্রবেশ করেছ। যদি কেউ তোমাদের ইসলামকে সন্দেহ করত, তাহলে কি তোমাদের ভালো লাগত? (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৪, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫

এটা আমাদের শেখায় যে অন্যকে দোষ দেওয়ার আগে নিজের অতীত অবস্থা স্মরণ করতে হবে। যেমন একজন শিক্ষক ছাত্রের ভুল দেখে রাগ করেন, কিন্তু ভুলে যান যে তিনিও একসময় ছাত্র ছিলেন এবং ভুল করতেন।

এই শিক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাঁরা ছাত্রদের পরীক্ষা নেন, তাঁরা যেন অযথা কঠিন না হন, ছোটখাটো ভুল খুঁজে না বেড়ান। কর্মকর্তারা যেন তার অধীনদের প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ করেন। মা–বাবা যেন সন্তানদের সাধারণ খেলাধুলা বা অসুস্থতার কষ্টে বকাঝকা না করেন। এতে সমাজে সহানুভূতি ও ভালোবাসা বাড়ে। ইমাম ইবনে আশুর বলেন, এটা মানুষকে নিজের অবস্থার সঙ্গে অন্যের অবস্থা মিলিয়ে দেখতে শেখায় (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৫, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

একবার সন্দেহের দরজা খুললে, তা বন্ধ করা কঠিন। যে সন্দেহ করে, তার প্রতিও সন্দেহ করা যায়। ফলে বিশ্বাস উঠে যায়, দুর্বল ইমানের লোকেরা ধর্মত্যাগ করে।

আয়াতটি মুসলিম সমাজের ঐক্য রক্ষার বড় একটা হেকমত শেখায়। ইসলামে কেউ প্রবেশ করলে তাকে সন্দেহ করলে বিশ্বাসের ভিত্তি নষ্ট হয়। একবার সন্দেহের দরজা খুললে, তা বন্ধ করা কঠিন। যে সন্দেহ করে, তার প্রতিও সন্দেহ করা যায়।

ফলে বিশ্বাস উঠে যায়, দুর্বল ইমানের লোকেরা ধর্মত্যাগ করে। সত্যবাদী ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। নবীজি (সা.) মুনাফিকদের সঙ্গেও মুসলিমদের মতো আচরণ করতেন-নামাজে তাদের পেছনে দাঁড়াতেন, জানাজা পড়তেন। এতে সমাজে শান্তি বজায়া থাকত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৬৮)

আরও পড়ুনকোরআনের অনুপ্রেরণাদায়ী কয়েকটি আয়াত০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলাম হৃদয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যারা নতুন করে ইসলামে আসে, তাদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি না করে গ্রহণ করলে তারা ধীরে ধীরে এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। প্রথমে সন্দেহ নিয়ে এলেও সময়ের সঙ্গে ইমান মজবুত হয়। পূর্ববর্তী মুসলিমদের পরবর্তী মুসলিমদের প্রতি বিশ্বাস এতে সাহায্য করে।

ইমাম ইবনে আশুর বলেন, এ জন্যই আল্লাহ আবার বলেন, ‘ফাতাবাইয়্যানু’—যাচাই করো এবং শেষে যোগ করেছেন ‘ইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা’মালুনা খাবিরা’—আল্লাহ তোমাদের কাজের খবর রাখেন। এতে সতর্কতা ও প্রতিদান—দুটিই আছে (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ৫/২১৬, আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তিউনিস, ১৯৮৪)

এই আয়াত আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রয়োগ করা যায়। একজন নতুন মুসলিম যখন মসজিদে আসেন, তাকে সন্দেহের চোখে না দেখে হাসিমুখে গ্রহণ করলে তার হৃদয়ে ইসলামের ভালোবাসা জাগে।

একজন ছাত্র যদি ভুল করে, শিক্ষক যদি নিজের ছাত্রজীবন স্মরণ করে ক্ষমা করেন, তাহলে ছাত্র আরও ভালো করার চেষ্টা করে।

একজন ছাত্র যদি ভুল করে, শিক্ষক যদি নিজের ছাত্রজীবন স্মরণ করে ক্ষমা করেন, তাহলে ছাত্র আরও ভালো করার চেষ্টা করে। মা–বাবা যদি সন্তানের ছোট্ট দুষ্টুমি বা অসুস্থতার কান্নাকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, তাহলে সন্তানের মনে নিরাপত্তা জাগে।

সমাজে যখন বিশ্বাসের সংকট দেখি, তখন এই আয়াত স্মরণ করা উচিত। একে অপরের প্রতি সন্দেহ ছড়ালে শান্তি নষ্ট হয়। নবীজির যুগে মুনাফিকরা ছিল, কিন্তু তাদের বাহ্যিক ইসলামকে মেনে নেওয়া হতো। এতে সমাজের ঐক্য রক্ষা পেত। আজও আমরা যদি নতুনদের প্রতি বিশ্বাস রাখি, তাহলে ইসলামের আলো আরও ছড়াবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিজের অতীত স্মরণ করার তাওফিক দিন। অন্যের প্রতি যেন সহানুভূতি রাখি, সন্দেহ না করি। কারণ, আমরাও তো একসময় অজ্ঞ ছিলাম, আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দিয়েছেন। এই অনুগ্রহের কথা ভুললে আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে যাই।

আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ