জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব
Published: 11th, January 2025 GMT
জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারণ করার নিয়ম চালু হওয়ার পর জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় হলে জ্বালানির দাম অনেক কমে আসবে। দুর্ভাগ্যবশত সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় জ্বালানি তেলের দামে যথেষ্ট পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। বরং এ সময়কালে জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুনাফা করতে দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত মোট তিনবার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব বিইআরসির পরিবর্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রদান করে। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ আগস্ট অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারে ছয় টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ৩১ অক্টোবর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম শূন্য দশমিক ৫ টাকা কমিয়ে আনা হয়, যদিও পেট্রল ও অকটেনের দাম অপরিবর্তিত থাকে।
সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা কমানো হয়েছে। সিপিডির (২০২৪) পরিচালিত গবেষণামতে, এ ধরনের মূল্য সমন্বয় বাজারভিত্তিক মূল্যকাঠামোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সিপিডির মতে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব।
গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেল, বিশেষত ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন ও জেট ফুয়েলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণী ব্যবস্থা চালু করেছে। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী জ্বালানি খাতে সরকারের আর্থিক দায় কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের আর্থিক দায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক দশক ধরে জ্বালানি তেলের দাম প্রশাসিত মূল্য (অ্যাডমিনিস্টার্ড প্রাইসিং) ব্যবস্থায় নির্ধারণকে দায়ী করা হয়।
প্রশাসিত নীতির অধীন জ্বালানির দাম নির্ধারণ করার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নিম্নমুখী হলেও বাংলাদেশের বাজারে তা পরিলক্ষিত হতো না। দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অধিক দামে বিপিসি স্থানীয় বাজারে তেল বিক্রি করেছে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। প্রতি লিটারে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা পর্যন্ত দামের তারতম্য লক্ষ করা গেছে।
বিপিসি ও বিইআরসির গৃহীত জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণের সূত্রগুলো সংশোধন প্রয়োজন। ফলে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানো সম্ভব হবে। প্রচলিত উপায়ে ভোক্তার কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের দায় চাপিয়ে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের নামে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।আইএমএফের শর্তাবলির অধীন জ্বালানি খাতে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ইতিবাচক হলেও তা ত্রুটিমুক্ত নয়। বিপিসি কর্তৃক ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণী পদ্ধতির পাশাপাশি বিইআরসি কর্তৃক জ্বালানির মূল্য নির্ধারণী পদ্ধতি আগে থেকেই বিদ্যমান। যদিও বিইআরসির পদ্ধতিটি এখনো চালু হয়নি। তবে ভবিষ্যতের নিরিখে বিইআরসি মূল্য নির্ধারকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে বিইআরসি কর্তৃক গৃহীত পদ্ধতির গুরুত্ব বাড়বে।
লক্ষণীয়, ২০১৫ সালের পর বিপিসিকে কোনো সরকারি ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন হয়নি। এমনকি কোভিড–পরবর্তী সময়কালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যখন বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তখনো প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো ভর্তুকি বা ঋণ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। বিপিসি কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে মূল্য সমন্বয় এবং লাভের মাধ্যমে তার ক্ষতি সামঞ্জস্য করে আসছে। এমনকি বিপিসি বেশ কয়েক বছর ধরে আমদানি খরচ ও জ্বালানির উৎপাদন খরচের তুলনায় উচ্চ মার্জিনে মূল্য নির্ধারণ করে লাভজনক অবস্থানে আছে। ভোক্তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে বিপিসির ঊর্ধ্বমুখী মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে ভর্তুকি কমানোর যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিপিসি বর্তমানে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানীয় বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকে, সেই পদ্ধতির কিছু গঠনগত ত্রুটি রয়েছে। যেমন গত বছর মার্চ থেকে জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা নিম্নগামী হলেও বাংলাদেশের বাজারে তা বেড়েছে। এর কারণ, দাম নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করার পদ্ধতিতে এক্সচেঞ্জ রেটের (ডলার-টাকা বিনিময় মূল্য) সমন্বয় করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে গত বছর মার্চ থেকে জুনে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে ডলারের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পায়।
বিপিসি ও বিইআরসি কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতিগুলোর একটি বড় পার্থক্য দেখা যায় জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সেবায় আরোপিত কর ও ভ্যাটের প্রয়োগ ও মাত্রার ক্ষেত্রে। বিপিসির পদ্ধতিতে যেখানে ৬ ধাপে কর ও ভ্যাট আরোপ করা হয়, সেখানে বিইআরসি প্রণীত পদ্ধতিতে মাত্র ২ ধাপে কর ও ভ্যাট আরোপের কথা বলা আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একই নীতিমালার অধীন দুই ভিন্ন ধরনের কর-ভ্যাট ব্যবস্থা বিপিসির পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ ছাড়া বিপিসির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে বিপিসির নিজস্ব মার্জিন হিসেবে ৩ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়, যা বিইআরসি প্রণীত পদ্ধতিতে ধরা হয়নি। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিইআরসিকে, তবু মন্ত্রণালয় নিজেই এই দায়িত্ব পালন করে আসছে।
বিপিসি ও বিইআরসি প্রণীত পদ্ধতিতে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ২০ টাকার মতো পার্থক্য থাকার কথা, কিন্তু বিইআরসি দায়িত্ব গ্রহণের পরও জ্বালানি তেলের দাম খুব বেশি কমেনি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিপিডি একটি বাজারভিত্তিক মূল্যব্যবস্থা নির্ধারণের পদ্ধতি নির্ণয়ের ওপর গবেষণা করে। সিপিডি প্রস্তাবিত মূল্য নির্ধারণী পদ্ধতিতে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছে। সিপিডির প্রস্তাবে বাজারভিত্তিক মূল্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের চাহিদা, ক্রয়ক্ষমতা এবং সরবরাহকারীদের খরচ, উৎপাদন খরচ, আমদানি খরচ, অর্থাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারী—একটি বাজারের দুই অংশগ্রহণকারীকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু বিপিসি ও বিইআরসি কর্তৃক ব্যবহৃত পদ্ধতিতে শুধু সরবরাহকারীদের দিকটিই বিবেচনায় নেওয়া হয়, যাতে জ্বালানি তেলের দাম শুধু সরবরাহকারীদের স্বার্থই পূরণ করে।
স্পষ্টত, সিপিডির প্রস্তাবিত মূল্য নির্ধারণী পদ্ধতিতে বিইআরসিকে বাজারের রেগুলেটর হিসেবে ধরা হয়েছে। সিপিডির প্রস্তাবিত মূল্যে এক্সচেঞ্জ রেটের ওঠানামার কারণে মূল্যের ওপর হওয়া প্রভাবকে প্রশমিত করার পদ্ধতিও বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই পদ্ধতিতে এমনভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, যেন গ্রাহকের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে বা নিতান্তই গুরুতর অবস্থায় স্বল্প পরিসরে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
২০২৪ সালের জুনের তথ্য অনুযায়ী, সিপিডির প্রস্তাবিত মূল্যে বিপিসির অনুসৃত পদ্ধতিতে কর-ভ্যাট, বিপিসির মার্জিন ও বাড়তি খরচ ইত্যাদি ধরার পরও প্রতি লিটারে অকটেন ও ডিজেলে ৬ টাকা, পেট্রলে ১০ টাকা কমানো সম্ভব ছিল। যদিও বিইআরসি প্রণীত জ্বালানি তেলের দাম বিপিসির তুলনায় কম, বিইআরসির পদ্ধতির তুলনায় সিপিডির প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটার পেট্রলে আরও ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে অন্য জ্বালানি তেলের দামের হিসাব বিইআরসির সূত্র অনুযায়ী নির্ণয় করা যায়নি।
সুতরাং বিপিসি ও বিইআরসির গৃহীত জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণের সূত্রগুলো সংশোধন প্রয়োজন। ফলে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানো সম্ভব হবে। প্রচলিত উপায়ে ভোক্তার কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের দায় চাপিয়ে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের নামে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।
জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণী পদ্ধতি সংশোধিত হলে, মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় গণশুনানির ব্যবস্থা না হলে এবং তা বিইআরসি কর্তৃক বাস্তবায়ন হলে ন্যায্যমূল্যে জ্বালানি তেল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। জ্বালানি তেলের নিম্নমুখী মূল্যের সমন্বয় সামগ্রিক পণ্য উৎপাদন ব্যয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এমনকি বিদ্যুতের দাম কমাতেও ভূমিকা রাখবে।
● খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, হেলেন মাশিয়াত ও ফয়সাল কাইয়ূম: লেখকেরা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি স্টাডিজে কর্মরত
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন হজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজে অন্তর্ভূক্ত।
গতবারের চেয়ে এবার বিমান ভাড়া কমিয়ে সবগুলো হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর দুটি হজ পাকেজ থাকলেও এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার মতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
শাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বহিষ্কার
সরকারিভাবে খরচ কমিয়ে হজের তিন প্যাকেজ ঘোষণা
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নয়াপল্টনে একটি হোটেলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এসব হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
এ সময় সভাপতি সৈয়দ গোলাম সারওয়ারও উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদ আহমেদ জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য তিনটি হজ প্যাকেজ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য খাওয়া ও কোরবানিসহ বিশেষ হজ প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাধারণ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে ব্যয় হবে সর্বমোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের খাবার খরচ প্যাকেজের বাইরে থাকলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত সার্ভিসের জন্য খাবারের মূল্য প্রতিটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত বলেও জানান তিনি।
প্রতি সৌদি রিয়াল ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা ধরে প্যাকেজের খরচ হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে ফরিদ আহমেদ জানান, পরবর্তী সময়ে এ রেটে কোন পরিবর্তন আসলে তা প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
হজ এজেন্সিগুলোর জন্য সাধারণ হজ প্যাকেজ ও সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে বিশেষ প্যাকেজ থেকে কম-বেশি করে তারা নিজস্ব প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন হাব মহাসচিব।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজের সব টাকা পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, “বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রী কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। হজ প্যাকেজের বাকি অর্থ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা করে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কছে কোনো প্রকার লেনদেন করবেন না।”
কোনো এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছাড়া শিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজযাত্রী বহন করতে পারবে না জানিয়ে মহাসচিব বলেন, “প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার কোনো খাতে খরচ বাড়ালে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।”
হাব মহাসচিব বলেন, “গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বিমান ভাড়া আরও কমানো হলো প্যাকেজের মূল্য কমানো হবে।”
তিনি বলেন, “এর আগে গত দুই বছর অন্যায়ভাবে ২ লাখ টাকা করে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া আদায় করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, যেটি হজযাত্রীদের প্রতি জুলুম ছিল, অন্যায় ছিল। হজযাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা লুট করা হয়েছিল বলে আমরা মনে করি। কারণ তখন এক ডলারের দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন এক ডলারের বিপরীতে টাকা ১২২ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল।”
বিশেষ হজ প্যাকেজ : হাব মহাসচিব জানান, বিশেষ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৭০০ মিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় 'ডি' ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ।
এছাড়া, মক্কার হোটেল বা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত; এটাচড্ বাথ সহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।
সাধারণ হজ প্যাকেজ: হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হবে।
মক্কার হোটেল বা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।
সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ: এ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব হবে ৬/৭ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন হবে। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে এ প্যাকেজে।
এছাড়া, মক্কার হোটেল বা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ট্রেনযোগে যাতায়াত; অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে সাশ্রয়ী প্যাকেজে।
গতবছর খাবার খরচ যুক্ত করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজের খরচ ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা।
এবার খরচ কমিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘোষণা করেন।
প্যাকেজ–১ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এছাড়া, হজ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা ও হজ প্যাকেজ-৩ এ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এ প্যাকেজ নিয়ে এজেন্সিগুলো অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা