ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। পাঁচ দিনেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অনাবৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। দেশটির দক্ষিণে ঠিক বিপরীত চিত্র। সেখানে উষ্ণ হিসেবে পরিচিত অনেক অঙ্গরাজ্যে এখনো কনকনে শীত, চলছে তুষারপাত।

প্রতিবছরে সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ঠান্ডা মাসগুলোতে ক্যালিফোর্নিয়ার ওপর দিয়ে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। সান্তা আনা নামের এই বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠে। কমিয়ে দেয় বাতাসের আর্দ্রতা। এ কারণে আগেও অঙ্গরাজ্যটিতে দাবানল হয়েছে। তবে এবার আরেকটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনাবৃষ্টি। গত মে মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

মূলত ঝড়ো বাতাস এবং অনাবৃষ্টিই লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলকে এতটা ভয়াবহ করে তুলেছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে দাবানলের কারণে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো। শুক্রবার পর্যন্ত দাবানলে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।

বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয় দাবানল জ্বলছে। তবে কয়েকটি দাবানল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দাবানল থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ শহরটি ছেড়েছেন। এখন শহরের পশ্চিম দিকে সান্তা মোনিকা থেকে মালিবু এলাকা পর্যন্ত জ্বলতে থাকা ‘প্যালিসেইডস’ দাবানল থেকে বাঁচতে সেখানকার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরে যেতে বলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার থেকে দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে দাবানল। দাবানল এখন আরও পূর্ব থেকে উত্তর–পূর্ব দিকে ধাবিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এখনো ছয়টি দাবানল জ্বলছে।

এদিকে দাবানল নিয়ে নতুন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল শনিবার দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দাবানল একেবারে নজিরবিহীন। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় আগুন ছড়িয়ে পড়া আংশিক ঠেকানো গেছে। তবে আগামী সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত ঝড়ো বাতাস থাকতে পারে। এই দাবানলের সঙ্গে লড়াই করতে ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে যেন সম্ভাব্য সবকিছু থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।

দাবানলের পেছনে কী

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হলো বজ্রপাত। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের শুরু হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পূর্ব দিক থেকে। সেখানকার প্যালিসেইডস এলাকা বা ইটনের দাবানলকবলিত এলাকার আশপাশে বজ্রপাত হয়েছে বলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপর আরও দুটি সাধারণ কারণের প্রসঙ্গ চলে আসে। এর একটি হলো ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং বিদ্যুতের লাইনে স্ফুলিঙ্গ হওয়া।

বিদ্যুতের পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন শুক্রবার পাসাডেনার নিকটবর্তী ইটন এলাকার দাবানল নিয়ে সিপিইউসিতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা বলছে, ওই দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সরঞ্জামের যোগসূত্র থাকার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে বিমা কোম্পানির আইনজীবীদের কাছ থেকে প্রমাণ সংরক্ষণের নোটিশ পাওয়ার পর সতর্কতামূলকভাবে তারা প্রতিবেদনটি দিয়েছে।

বজ্রপাত, অগ্নিসংযোগ, বিদ্যুতের লাইন ছাড়াও অনেক সময় আবর্জনা পোড়ানো এবং আতশবাজি ফুটানো থেকেও দাবানলের সূত্রপাত হতে পারে। তা ছাড়া দুর্ঘটনায় অসংখ্য উৎস থেকেই আগুন ছড়াতে পারে।

১৯৯১ সালে অকল্যান্ড হিলসের দাবানলসহ ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় বড় দাবানলের ঘটনায় তদন্ত করার অভিজ্ঞতা আছে জন লেন্টিনির। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সায়েন্টিফিক ফায়ার অ্যানালিসিসের স্বত্বাধিকারী তিনি। লেন্টিনি বলেন, ‘এটা একসময় ছোট আকারের দাবানল ছিল। কোথায় দাবানলের শুরুটা হয়েছে, দাবানলের উৎস কী, তা নির্ধারণ, উৎসের আশপাশ খতিয়ে দেখা এবং এর কারণ নির্ধারণের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিস্থিতির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি যুক্ত আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

দক্ষিণে ঠান্ডা–তুষারপাত

পশ্চিমে যখন দাবানল, তখন দক্ষিণ ও মধ্যপশ্চিমে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আবহাওয়া। সাধারণত উষ্ণ হিসেবে পরিচিত নিউ মেক্সিকো, জর্জিয়া ও টেক্সাসসহ দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয় চলছে তুষারপাত ও বৃষ্টি। তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাঙ্কের নিচে। সেখানে ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মেক্সিকো উপসাগর থেকে বয়ে আসা বাতাস মিলে সৃষ্টি হওয়া ঝড় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

জর্জিয়ার আটলান্টায় তুষারঝড়ে কয়েক ইঞ্চি পুরু তুষার জমে। ১০ জানুয়ারি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ