১. প্রথমেই প্রশ্ন বিশ্লেষণ

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রথম ধাপ ছিল বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ। এতে প্রশ্নের ধরন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যেমন, বাংলার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ এবং সাহিত্য অংশে কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পায়, ইংরেজিতে গ্রামার এবং ভোকাবুলারির ওপর কতটা জোর দেওয়া হয়—এসবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রশ্ন বিশ্লেষণ আমাকে পড়ার রূপরেখা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। শিখিয়েছে, কীভাবে অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে সঠিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে হয়।

২.

টেক্সট বুকই ভরসা

অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বাজারের সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভর করে। আমি কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের টেক্সট বুকগুলোর ওপরই ভরসা রেখেছি। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল ও আইসিটি বইগুলোতে যা পড়ানো হয়েছে, তার প্রতিটা অধ্যায় বারবার পড়েছি। প্রশ্নের বড় অংশই মূলত এখান থেকে আসে। তাই টেক্সট বুকগুলোকে ভালোভাবে আয়ত্তে আনার পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান এবং বিষয়ভিত্তিক পড়া নিশ্চিত করেছি। অনুশীলনের জন্য কেবল সহায়ক বই নিয়েছি।

আরও পড়ুনপরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ, তাই হাতে হিসাব করার চর্চা করতাম৪ ঘণ্টা আগে৩. সময় ভাগ নয়, পড়াকে টার্গেট করেছি

পড়ার জন্য সময় ভাগ করে নেওয়া অনেকের জন্য কার্যকর। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা কাজ করেনি। বরং প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট টার্গেট নির্ধারণ করতাম। যেমন, আজ বাংলার দুটি অধ্যায় শেষ করব, ইংরেজির গ্রামারের কিছু অংশ অনুশীলন করব বা সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট একটি অংশ পড়ে শেষ করব। এভাবে পড়ার নির্ধারিত অংশ প্রতিদিন সম্পন্ন করতাম। কত সময় ধরে পড়ছি, এটা না ভেবে পড়ার মানের ওপর বেশি জোর দিয়েছি।

৪. চ্যালেঞ্জিং বিষয় সহজ করার কৌশল

আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন মনে হতো সাধারণ জ্ঞান। গৎবাঁধা মুখস্থ করার পদ্ধতি তেমন কাজ করত না। তাই গল্পের মতো করে পড়ার চেষ্টা করতাম। যেমন, ইতিহাসের ঘটনাগুলো কল্পনায় সাজিয়ে গল্প হিসেবে পড়তাম। একইভাবে, ভূগোলের বিষয়গুলো মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পড়েছি। বাংলা সাহিত্য অংশে কবি-লেখকদের জীবন এবং রচনাগুলোও গল্পের মতো কল্পনা করে পড়েছি। বারবার রিভিশন দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।

৫. পরীক্ষার পরিবেশে অনুশীলন ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

পরীক্ষার আগে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করার জন্য নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতাম। এটি পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা এবং চাপ সামলাতে সাহায্য করেছে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, হাঁটাহাঁটি এবং ছোট ছোট বিরতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্ন আটকে গেলে তা নিয়ে সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যেতাম। নেগেটিভ মার্কিং এড়াতে নিশ্চিত প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে দিয়েছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মো. মাহিনুর রহমান

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ