রানওয়ে সম্প্রসারণ ও আনুষঙ্গিক উন্নয়নে অর্থ পেলে আগামী এক বছরের মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ উড্ডয়নসেবা চালু করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আজ রোববার বগুড়া বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালুর জন্য রানওয়ে সম্প্রসারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমরা অনেকবার বোর্ড গঠন করেছি, অনেকবার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তৎকালীন সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আমরা বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক সেবা চালুর জন্য নতুন করে সরকারকে প্রস্তাব দেব। রানওয়ে সম্প্রসারণে বাজেট পেলে স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক সেবা চালু করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।’

বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ উড্ডয়নসেবা চালুর জন্য চার ধাপে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান বিমানবাহিনীর প্রধান হাসান মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ছোট বিমান চলাচলের জন্য ৬ হাজার ফুট রানওয়ে দরকার। বড় বিমান চালুর জন্য ৮ হাজার ফুট রানওয়ে লাগবে। এর চেয়ে বড় বিমান চলাচলের জন্য ১০ হাজার ফুট রানওয়ে লাগবে। এখন এই বিমানবন্দরে রানওয়ে আছে ৪ হাজার ৭০০ ফুট। কম তেল এবং কম যাত্রী নিয়ে বর্তমান রানওয়েতে বিমান ওঠানামা সম্ভব। তবে পুরোদমে বগুড়া বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু হলে দেড় থেকে দুই হাজার ফুট রানওয়ে সম্প্রসারণ করতে হবে। বিমানবন্দরের পূর্ব পাশে পাকা রাস্তা আছে। এ জন্য বিমানবন্দরে পশ্চিমে থাকা একটি গ্রামের মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে।

বগুড়া বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি সক্ষমতা শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে মন্তব্য করে এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানসেবা চালু করতে হলে রানওয়ে সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা প্রস্তাব করব। অর্থ পেলে বিমানসেবা চালু সম্ভব। আর না পেলে নির্বাচিত সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

বগুড়া জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শনে এসে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালুর জন্য রানওয়ে সম্প্রসারণের গুরুত্বের কথা বলে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ উদ্যোগ আর এগোয়নি।

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে বগুড়া জেলা শহরের এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১১০ একর জায়গার ওপর আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর কাজটি শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০০০ সালে বিমানবন্দরটি তৈরির কাজ শেষ হলেও গত ২৪ বছরে যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক কোনো বিমান আর ওঠানামা করেনি এ বিমানবন্দরে। পরে সেখানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ