শুল্ক–কর বৃদ্ধিতে বড় প্রভাব পড়বে না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
Published: 12th, January 2025 GMT
শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি হলেও এর খুব বড় প্রভাব পড়বে না বলে মনে করে সরকার। সরকারের মতে, এ প্রভাব হবে খুবই ন্যূনতম।
রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের এই অবস্থানের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সরকার রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে দুটি অধ্যাদেশ জারি করে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের শুরুতেই ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, এ বছর (অর্থবছর) পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন ‘আমরা বলছি না যে কিছু প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটি খুবই ন্যূনতম (মিনিমাম) হবে। আমরা মনে করি না যে এটা খুব বড় প্রভাব (ম্যাসিভ ইমপ্যাক্ট) হবে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপের কারণে বা তাদের শর্তের কারণে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানেও অর্থনীতিবিদেরা আছেন। আমরা আইএমএফের কথাটাই–বা কেন নেব? তাঁরাও তো বোঝেন কী কাজটা করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা খুবই দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যদি না থাকে, তাহলে আপনি নিজেই দেখবেন যে টাকার মান কমে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ (ট্যাক্স জিডিপির রেশিও) বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে, এটা টেকসই নয়।’
প্রেস সচিব বলেন, সরকার চাচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা স্থিতিশীল করতে, ঠিক করতে; এটি দেশের জন্যই ভালো হবে।
ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে এক সাংবাদিক বলেন, বাস্তবতা হলো মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। আপনি নিজে অনুভব করেন কি না যে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে? আর ভ্যাট-শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে সরকার অজনপ্রিয় হচ্ছে কি না? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘অজনপ্রিয় হওয়ার তো আমি কোনো প্রশ্ন দেখছি না; বরং সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি যাতে ভালো থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখছে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকদের কর্তব্য এ বিষয়টি মানুষকে আরও বোঝানো যে আসলে কেন করা হয়েছে, প্রেক্ষাপটটা কী, এটা জানানো আমাদের সবার কর্তব্য।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা অনেক জনপ্রিয় (পপুলিস্ট) কথা বলতে পারি, কিন্তু জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে আমার মনে হয় বাস্তবতাটা কী? যে ধরনের ভঙ্গুর একটি অর্থনীতি রেখে গেছে, আপনি দেখেন কোথায় কোথায় অপচয় হয়েছে, ইয়ত্তা নেই। রেললাইন করেছে, সেখানে দিনে মাত্র একটা ট্রেন চলে।’
ভ্যাটের পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে, বিশেষ করে নতুন শিল্পে যারা গ্যাস নেবে, তাদের দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এ ব্যাপারে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন।
ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অন্যরাও এ নিয়ে বলেছেন। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কমানো বা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সরকারের কোনো ভাবনা আছে কি না? এর জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সরকার তাদের কথাগুলো শুনছে। এটাই তাঁরা বলতে পারেন।
দেশের জনগণের টাকা অপচয় করে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সম্পদ করার কথা বলা হচ্ছে, সেই সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করা বা ট্যাক্স বসানো, এ ধরনের কোনো কাজ কি সরকারের পক্ষ থেকে হচ্ছে—জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এই পুরো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কাজ করছে। প্রথমেই দেখা হচ্ছে, কীভাবে এই টাকাগুলো আনা যায়। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাক্ষাৎ
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সভাপতি মাসউদুল হক জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবালয় বিটে কর্মরত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পত্র পাঠানো হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের জন্য সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা চালুর বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের পাশাপাশি ৫ নম্বর গেট দিয়েও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বিএসআরএফের সভাপতির প্রস্তাব আন্তরিকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেন পিন্নু, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদলসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী