শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি হলেও এর খুব বড় প্রভাব পড়বে না বলে মনে করে সরকার। সরকারের মতে, এ প্রভাব হবে খুবই ন্যূনতম।

রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের এই অবস্থানের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সরকার রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে দুটি অধ্যাদেশ জারি করে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ের শুরুতেই ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, এ বছর (অর্থবছর) পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন ‘আমরা বলছি না যে কিছু প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটি খুবই ন্যূনতম (মিনিমাম) হবে। আমরা মনে করি না যে এটা খুব বড় প্রভাব (ম্যাসিভ ইমপ্যাক্ট) হবে।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপের কারণে বা তাদের শর্তের কারণে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানেও অর্থনীতিবিদেরা আছেন। আমরা আইএমএফের কথাটাই–বা কেন নেব? তাঁরাও তো বোঝেন কী কাজটা করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা খুবই দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যদি না থাকে, তাহলে আপনি নিজেই দেখবেন যে টাকার মান কমে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ (ট্যাক্স জিডিপির রেশিও) বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে, এটা টেকসই নয়।’

প্রেস সচিব বলেন, সরকার চাচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা স্থিতিশীল করতে, ঠিক করতে; এটি দেশের জন্যই ভালো হবে।

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে এক সাংবাদিক বলেন, বাস্তবতা হলো মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। আপনি নিজে অনুভব করেন কি না যে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে? আর ভ্যাট-শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে সরকার অজনপ্রিয় হচ্ছে কি না? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘অজনপ্রিয় হওয়ার তো আমি কোনো প্রশ্ন দেখছি না; বরং সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি যাতে ভালো থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখছে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকদের কর্তব্য এ বিষয়টি মানুষকে আরও বোঝানো যে আসলে কেন করা হয়েছে, প্রেক্ষাপটটা কী, এটা জানানো আমাদের সবার কর্তব্য।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা অনেক জনপ্রিয় (পপুলিস্ট) কথা বলতে পারি, কিন্তু জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে আমার মনে হয় বাস্তবতাটা কী? যে ধরনের ভঙ্গুর একটি অর্থনীতি রেখে গেছে, আপনি দেখেন কোথায় কোথায় অপচয় হয়েছে, ইয়ত্তা নেই। রেললাইন করেছে, সেখানে দিনে মাত্র একটা ট্রেন চলে।’

ভ্যাটের পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়ানো হচ্ছে, বিশেষ করে নতুন শিল্পে যারা গ্যাস নেবে, তাদের দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এ ব্যাপারে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন।

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অন্যরাও এ নিয়ে বলেছেন। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কমানো বা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সরকারের কোনো ভাবনা আছে কি না? এর জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সরকার তাদের কথাগুলো শুনছে। এটাই তাঁরা বলতে পারেন।

দেশের জনগণের টাকা অপচয় করে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সম্পদ করার কথা বলা হচ্ছে, সেই সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করা বা ট্যাক্স বসানো, এ ধরনের কোনো কাজ কি সরকারের পক্ষ থেকে হচ্ছে—জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এই পুরো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স কাজ করছে। প্রথমেই দেখা হচ্ছে, কীভাবে এই টাকাগুলো আনা যায়। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার অভিযোগ

টাঙ্গাইলের মধুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে নারী অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারকে জুতাপেটা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মধুপুরের আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল জব্বার। গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই কয়েকজন নারী অভিভাবক তাঁর কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা করেন। এ সময় সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগমসহ কয়েকজন তাদের হাত থেকে শিক্ষককে রক্ষার চেষ্টা করেন। এতে তাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হন হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।

হামলায় অংশ নেওয়া জাহিন ওরফে জাহি ও ঝুমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার পড়ানোর সময় মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। একই অভিযোগ করেন সুমি বেগম নামে আরেকজন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমি বিষয়টি সকালেই জানতে পেরে স্যারকে জানিয়েছিলাম। স্যার তখন অফিস কক্ষেই ছিলেন। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা অফিসে প্রবেশ করে হামলা করেন। এক পর্যায়ে জুতা দিয়ে পেটাতে থাকেন। আমরা অনেক কষ্টে তাঁকে হামলাকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করি।’

মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্থানীয় এক যুবক উত্ত্যক্ত করত। তাকে বিভিন্ন সময়ে বোঝানো হয়েছে। কথা না শোনায় তাকে শাসন করা হয়েছিল। সেই ছেলে ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত করলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো দেখি। সেভাবেই আদর-শাসন করি। তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি বের করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, বিষয়টি জেনে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ