বাকৃবিতে আবারো শুরু হয়েছে ‘গেস্টরুম’
Published: 12th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আবারো শুরু হয়েছে গেস্টরুমের নামে মানসিক নিপীড়ন। সোহরাওয়ার্দী হল, ফজলুল হক হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ও আশরাফুল হক হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, তাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে উদ্ভট নিয়ম শেখানো ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, “গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৯টায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মোবাইল নিজের রুমে রেখে রিডিং রুমে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরে দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী হলের কিছু উদ্ভট নিয়ম আমাদের জানান, যা আমাদের মানতেই হবে। এর মধ্যে রয়েছে- সাইকেল চালানো যাবে না, দ্বিতীয় তলায় যাওয়া যাবে না, বড় ভাইদের সঙ্গে দিনে যতবার দেখা হবে ততবার সালাম, পরিচয় ও হ্যান্ডশেইক করতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, হলের গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া যাবে না, হলের ক্যান্টিনে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “এরপরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া জানতে চান। আমরা তাদের আমাদের হলভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাই। এরপরে তারা চলে গেলে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।”
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, “হাত বাকা রেখে দাঁড়ানো, মাথা উঁচু বা নিচু রাখা ইত্যাদি ছোটখাটো ভুলের জন্য একজন একজন করে ডেকে গালিগালাজ ও শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তিগুলোর মধ্যে ছিল ১০ ধরনের হাসি, ১০ ধরনের সালাম, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয় এবং নাচ। এ ধরনের চাপের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী মাথা ঘুরে পড়ে যান।”
সোহরাওয়ার্দী হলের আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গেস্টরুম চলাকালীন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের বলেছেন, এটি নিয়ে হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে বিচার জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ হলের প্রাধ্যক্ষের কথা অনুযায়ি গেস্টরুম করানো হচ্ছে। সিনিয়ররা বিগত ১ বছর গেস্টরুম সহ্য করেছেন, এখন নবীনদেরও একই নিয়মে গেস্টরুম সহ্য করতে হবে।”
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ফজলুল হক হলের প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, “গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফজলুল হক হলের কমনরুম থেকে এক শিক্ষার্থীকে বেশ কয়েকজন কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীকে দেখে মনে হচ্ছিল, কমনরুমে দীর্ঘক্ষণ থাকায় তিনি কোন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। গেস্টরুমে সাধারণত দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়, সে কারণে অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়ে যায়।”
গেস্টরুমের বিষয়ে ফজলুল হক হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গতকাল (শনিবার) রাতে ফজলুল হক হলের গেস্টরুমে দরজা, জানালা, জানালার পর্দা বন্ধ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম করানো হয়েছে। গেস্টরুম চলাকালীন তাদের মোবাইল ফোনও নিয়ে নেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
তবে অনেকেই জানিয়েছেন, হলের টুর্নামেন্ট আয়োজন উপলক্ষে জুনিয়রদের নিয়ে একসঙ্গে কমনরুমে বসা হয়েছিল।
এদিকে, দুইদিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলেও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডেকে গেস্টরুম করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তাদের হলের অদ্ভুত কিছু নিয়মের তালিকা দেওয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সেগুলো আর মেনে চলা লাগবে না বলে জানানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশরাফুল হক হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল (শনিবার) রাতে তাদের হলের গেস্টরুমে ডেকে পরিচয় দেওয়া শেখানো হয়। হলের সিনিয়রদের সামনে কিভাবে নিজেদের পরিচয় দিতে হবে সেটি তাদের শেখান হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের কোনো গালিগালাজ বা শারীরিক কোন নির্যাতন করা হয়নি।
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, “গেস্টরুম বন্ধে প্রশাসন কঠোর। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ নেওয়ার সময় কিংবা ছক্কা ঠেকাতে গিয়ে অনেক সময় শরীরের ভারসাম্য থাকে না। ফিল্ডাররা তাই বাধ্য হয়েই একটি কৌশল অবলম্বন করেন।
বলটি ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যান। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে থাকতেই লাফ দিয়ে বলটি হাতের ধাক্কায় আবারও ওপরে ছুড়ে দিয়ে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান এবং তারপর ক্যাচটি নেন কিংবা ছক্কা বাঁচান। এই কাজ করতে গিয়ে কেউ কেউ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে একাধিকবার শূন্যে লাফিয়েও বল হাত দিয়ে স্পর্শ করেন।
ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) নতুন নিয়ম অনুযায়ী এভাবে ক্যাচ নেওয়া কিংবা ছক্কা বাঁচানো আর বৈধ থাকছে না।
আরও পড়ুনস্বপ্ন পূরণ হতে ৬৯ রান দরকার, এবার কি পারবে ‘চিরকালের চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা১০ ঘণ্টা আগেইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে নতুন এ নিয়ম কার্যকরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে নিয়মটি সংযুক্ত হবে চলতি মাসেই। এরপর এমসিসির বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে আগামী বছরের অক্টোবরে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একজন ফিল্ডার বাউন্ডারি সীমানার বাইরে লাফিয়ে শুধু একবারই বল স্পর্শ করতে পারবেন। এরপর সীমানার ভেতরে ঢুকে তাঁকে ক্যাচ নিতে হবে। ২০২৩ সালে বিগ ব্যাশে সিডনি সিক্সার্সের জর্ডান সিল্কের ক্যাচ বাউন্ডারি সীমানার বাইরে (লাফিয়ে) দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে সীমানার ভেতরে ফেরত পাঠান ব্রিসবেন হিটের মাইকেল নেসের। শূন্যে লাফিয়ে বলটি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করে তিনি সীমানার বাইরেই পা রাখেন এবং দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ক্যাচটি নেন। এমসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী এমন ক্যাচ আর আইনসিদ্ধ হবে না।
নেসের সেই ক্যাচ নেওয়ার পর ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ২০২০ বিগ ব্যাশে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ অনেকটা এভাবেই নিয়েছিলেন ম্যাট রেনশ—যেখান থেকে তিনি ওভাবে ক্যাচটি নেওয়ার প্রেরণা পান। সে সময় দুটি ক্যাচের বৈধতা নিয়েই বিতর্ক হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিলেন, বাউন্ডারি সীমানার ক্যাচের নিয়ম পাল্টানো হোক, যেটা সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১০ সালে।
আরও পড়ুনম্যাক্সওয়েল, ক্লাসেন, পুরান—জাতীয় দল ছাড়তেই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অধিনায়ক১২ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের শুরুতে ক্যাচ নেওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ এই নিয়ম পুনরায় যাচাইয়ের জন্য এমসিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল আইসিসির ক্রিকেট কমিটি। এরপর দুই পক্ষই এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে এবার সেটি হালনাগাদ করল। এ বিষয়ে এমসিসির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রতিটি সদস্যদেশের বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে আইসিসি। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান নিয়মের অধীন ‘অসাধারণ’ ফিল্ডিং দেখা গেলেও সেটা ‘অস্বাভাবিক কিছু ক্যাচেরও জন্ম দিয়েছে, যা সিংহভাগ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের চোখে অবৈধ’।
নেসেরের ক্যাচের উদাহরণ টেনে এমসিসি বলেছে, ব্রিসবেন হিটের এই ফিল্ডার সীমানার ‘ভেতরে’ ক্যাচটি নেওয়া সম্পন্ন করার আগে ‘বানি হপড’ (ছোট্ট লাফ) করেছেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘এমসিসি নতুন আইন করেছে, যেখানে সীমানার বাইরে “বানি হপড” পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে। তবে এসব ক্যাচে ফিল্ডার সীমানার ভেতরে থেকে বল শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বাইরে পা রাখার পর ক্যাচটি ধরতে ডাইভ দিয়ে ফিরতে পারবেন। আমাদের সমাধান হলো, সীমানার বাইরে চলে যাওয়া ফিল্ডারকে শূন্যে থাকতে একবারই বল স্পর্শ করতে দেওয়ার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া এবং তারপর ডেলিভারিটির বাকি সময় সম্পন্ন করতে সীমানার ভেতরে থাকতে হবে।’
রিলে অর্থাৎ একাধিক ফিল্ডার মিলে ক্যাচের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে বল স্পর্শ করা ফিল্ডারকে সীমানার ভেতরে ফিরতে হবে তাঁর সতীর্থ ক্যাচ নিলেও।
১৭ জুন শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যকার গল টেস্ট দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। এই ম্যাচের সঙ্গে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনও হালনাগাদ করা হবে। নতুন এই নিয়ম কার্যকর হবে আগামী বছরের অক্টোবর থেকে।