স্মৃতি ও অভিজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
Published: 13th, January 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির চিরকালের গৌরবের অর্জন। মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা চলবে আনন্দ-বেদনায়। চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলার সাহস ও প্রেরণা লাভ করবে ভবিষ্যতের বাঙালিরা। সেই সূত্রেই বছরের শুরুর মাসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হলো আজ সোমবার।
জাপানপ্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল হকের ইংরেজিতে লেখা ‘আ টাইম টু ড্রিম অ্যান্ড আ টাইম অব ডিসপায়ার’ নামের বইটির মোড়ক উন্মোচন হলো বারিধারার গার্ডেন গ্যালারি কসমসে। কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বইটি প্রকাশ করেছে কসমস বুক। এতে মোট ১৪টি অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে রয়েছে সেই বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শিল্পী সৌরভ চৌধুরীর শিল্পকর্ম।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মঞ্জুরুল হকের প্রথম বই ‘আ স্টোরি অব মাই টাইম’ কসমস বুকস প্রকাশ করেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ‘আ টাইম টু ড্রিম অ্যান্ড আ টাইম অব ডিসপায়ার’ আগের বইটির দ্বিতীয় অংশ। আত্মজৈবনিক রীতির এই দুই বইয়ে লেখক মঞ্জুরুল হক তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধ এবং তাঁর নিজের যুদ্ধে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
বিকেলে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সমাগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, তাঁর সঙ্গে লেখক মঞ্জুরুল হকের দীর্ঘ ৬০ বছরের বন্ধুত্ব। এখনো তাঁদের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা প্রথম বইটি পাঠকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এখন পরের অংশটি প্রকাশ করায় এ বিষয়ে তাঁর লেখা পূর্ণতা পেল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, এনায়েত উল্লাহ খানের বন্ধুভাগ্য ভালো। মঞ্জুরুল হক, আফসান চৌধুরী, হাসান ফেরদৌস, ড.
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ঢাকা কলেজ থেকে মঞ্জুরুল হকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। তাঁরা একসঙ্গে ষাট দশকে শিল্প–সাহিত্যের চর্চা করেছেন। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আমাদের সমাজ থেকে কীভাবে ১৯৭১ উঠে এল, সেই পরিপ্রেক্ষিত এই বইতে তুলে ধরেছেন লেখক। ১৯৭১ সালে ছিল আমাদের সমাজের মুক্ত হওয়ার চেষ্টা। এই চেষ্টার বিষয়টি বইটিতে উঠে এসেছে।
প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, সমাজ, দেশ, মানুষ সময় দিয়ে শাসিত হয়। এই দুই বইতে লেখক আমাদের ইতিহাসের একটি গৌরবময় সময়কে তুলে ধরেছেন।
বরেণ্য শিল্পী ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী বই। লেখক মঞ্জুরুল হক তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করেছেন। এই বইয়ের অনেক ঘটনা সেই সময়ের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ‘আ টাইম টু ড্রিম অ্যান্ড আ টাইম অব ডিসপায়ার’–এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এনায়েত উল্লাহ খান, পাশে লেখক মঞ্জুরুল হকউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।