দেশে চা-শ্রমিকদের নানা বঞ্চনা আর দুর্দশার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে। সোমবার সিলেটের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) এ বৈঠকের আয়োজন করে। নগরীর সোবহানীঘাটের একটি হোটেলে এ সভা হয়।

‘লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট অব টি লেবার ওমেন ওয়ার্কার অন দেয়ার রাইটস’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে বৈঠকে চা-বাগানে মাদকের আগ্রাসন, সঠিকভাবে মজুরি না পাওয়া, অসুস্থ হওয়ার পর সঠিক চিকিৎসার অভাব, নারী শ্রমিকদের ব্রেস্ট ফিডিং রুম না থাকা, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, বাল্যবিয়েসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফামের সহযোগিতায় বৈঠকে চা-শ্রমিকদের বর্তমান জীবনযাত্রা নিয়ে উপস্থাপন করা হয় একটি প্রতিবেদন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সদর উপজেলার ইউএনও খুশনূর রুবাইয়াৎ। একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে বৈঠকে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক শাহিনা আক্তার, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, লাক্কাতুরা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মাদ ফারুকি সিয়াম।

একডোর প্রকল্প সমন্বয়কারী মোমতাহিনুর রহমান চৌধুরী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি তারা সিলেটের দলদলি চা-বাগান, কেওয়াছড়া চা-বাগান, হিলুয়াছড়া চা-বাগানে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সিলেটের এই তিন চা-বাগানে ৮৯০ পরিবারে জনসংখ্যা ৫ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে নারী শ্রমিক আছেন ১ হাজার ৫০৯ জন। তিন চা-বাগানের ৪২ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। চা-বাগানের ৮২ শতাংশ চা-শ্রমিক বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পান না।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, চা-শ্রমিক নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের উত্থাপিত দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলেও তারা আশ্বস্ত করেন।

বৈঠকে চা-শ্রমিকরা জরিপের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটের সব চা-বাগানের চিত্র একই। চা-বাগানে নারী শ্রমিকই বেশি কিন্তু চিকিৎসা, স্যানিটেশনের কোনো সুবিধা পাই না। পর্যাপ্ত মজুরি না পাওয়ার কারণে অনেককে নিম্নমানের এবং কম খাবার খেতে হয়। চা-বাগানে নেই কোনো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের সন্তানরা লেখাপড়া বিমুখ। আবার শ্রমিকদের সামর্থ্য নেই সন্তানকে বাগানের বাইরে লেখাপড়া করানোর।

বৈঠকে মাদকের হাত থেকে নতুন প্রজন্মের চা-শ্রমিকদের বাঁচাতে বাগান কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং চা-শ্রমিক নেতাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দুই উপদেষ্টার গড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে গতিরোধ করা, সরকারি কাজে বাধা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে রোববার রাতে গোয়ানঘাট থানায় ১৫০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন থানার এসআই ওবায়েদ উল্লাহ। মামলার পর সোমবার ভোরে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মামলার ৬নং আসামি কালিনগরের দেলোয়ার হোসেন দুলু, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান মিয়া ও ছৈলাখেল অষ্টম খন্ডের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ।

শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তারা ফেরার পথে জাফলং পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিএনপির সংগঠনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার আটকে নানান স্লোগানে বিক্ষোভ করা হয়। ঘটনার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে বহিষ্কার ও জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে শোকজ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সমকালকে জানান, গতকাল রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে। দ্বিতীয় আসামি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সোহেল আহমদ, ওমর ফারুক, সুমন শিকদার, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আব্দুস সালাম ও আব্দুল জলিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ