অন্তর্বর্তী সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সহজপ্রাপ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করতে চায়।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। মন্ত্রণালয় এই সভার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মালিক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউএসএআইডির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন এবং অধিকারকর্মীরা অংশ নেন। সভায় ওষুধ কোম্পানির মালিকেরা বলেছেন, ওষুধের সঠিক মূল্য না পেলে ওষুধ কোম্পানিগুলো টিকতে পারবে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, দেশের ওষুধশিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটলেও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয়ের বড় অংশ চলে যায় ওষুধের পেছনে। স্বাস্থ্যের রক্ষা, উন্নতি ও অর্জন—এসবের জন্য ওষুধের ব্যবহারকে আরও অর্থবহ করার সুযোগ আছে। বিভিন্ন পক্ষ কীভাবে সেই অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সায়েদুর রহমান বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সহজপ্রাপ্য করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করতে চায়।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অতিশয় কম দামে ওষুধ বিক্রি করে। বাংলাদেশের ওষুধের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার। এতে একজন নাগরিকের বছরে মাথাপিছু ওষুধ বাবদ খরচ হয় ১ হাজার ৭৬৪ টাকা। মাথাপিছু এত কম দামে ওষুধ বিশ্বের আর কোথাও নেই। ওষুধ নীতিতে ধোঁয়াশা আছে উল্লেখ করে সভায় তিনি বলেন, ‘আমাদের বাদ দিয়ে কিছু করবেন না। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধের দাম সীমাহীন জায়গায় চলে যাচ্ছে। ছুরি ধরার মতো ওষুধ কোম্পানিগুলোর ক্যাডার বাহিনী তৈরি হয়েছে। তাদের আচরণ গণশত্রুর মতো।

আলোচনার এক পর্যায়ে সভায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, তথ্য–উপাত্ত ঠিকভাবে না জেনে ওষুধশিল্প ও এর অবদান বিষয়ে অনেকেই কথা বলেন। ওষুধশিল্প এখন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ওষুধ কোম্পানি এক্‌মির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহা বলেন, বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে না।

ওষুধ উৎপাদনে যাওয়ার আগে ৪৯ ধরনের লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেওয়ার দরকার হয় উল্লেখ করে ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বায়োলজিক্যাল পণ্য তৈরির একটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।

অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার অনিন্দ্য রহমান বলেন, মানুষ ১০ শতাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেয়, ৯০ শতাংশ ওষুধ নেয় দোকান থেকে। মানুষ অযৌক্তিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ও সাধারণ ওষুধের ব্যবহার করে।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ (স্বাস্থ্য) আতিয়া হাসান বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় পরিবর্তন এনে তাতে অসংক্রামক রোগের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভোক্তাদেরও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তনের দরকার আছে।

সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন একাধিক আলোচক। একজন বলেন, ওষুধ প্রতিনিধিদের পেছনে ব্যয় না করলে ওষুধের দাম কমবে।

নির্দিষ্ট একটি ওষুধের নাম উল্লেখ করে নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক কাজী বেননূর বলেন, একই ওষুধ কোম্পানিভেদে দাম ১০ টাকা ও সাড়ে ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীর্ষ ১০ কোম্পানির ওষুধই ভালো, তার নিশ্চয়তা নেই।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে পক্ষ–বিপক্ষ বলে কিছু নেই। আমাদের প্রত্যেকের দরিদ্র আত্মীয়স্বজন আছে। আমাদের এমন কিছু করতে হবে, যেন কেউ বলতে না পারে যে আমার ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই।’ তিনি বলেন, ইডিসিএলকে বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সবার সহায়তা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রেনেটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার কবির, ইউএসএআইডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক লিজা তালুকদার, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মাসুদুল আলম।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ