মাদকের গডফাদার হিসেবে ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ফারুক চৌধুরীর নাম আসে। ওই তালিকায় তিনি ছাড়াও স্থান পান গোদাগাড়ী উপজেলার শীর্ষ ১০ মাদক কারবারি। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক এই এমপির সখ্য ছিল। তাদের ছায়া হয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় কারও কাছ থেকে নিয়েছেন গাড়ি উপহার, কারও কাছে বিক্রি করেছেন নিজের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের দোকান ও ফ্ল্যাট। এখানেই শেষ নয়। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ বাণিজ্য, দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। যেখানেই টাকার সন্ধান পেয়েছেন, সেখানেই দুই হাতে লুটেপুটে নিয়েছেন মাদকের এই গডফাদার। 

নির্বাচনী হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ছিল শূন্য। গত বছর তিনি হলফনামায় শূন্য থেকে নিজ নামে জমা দেখিয়েছেন ৯ কোটি টাকা। আগে নির্ভরশীলদের নামে কিছু না থাকলেও হঠাৎ বেড়ে হয়েছে ৬০ বিঘা জমি। এর সঙ্গে নতুন করে নিজের আরও ৬০ বিঘা জমি যুক্ত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফারুক চৌধুরী মাদক কারবারিদের গডফাদার হিসেবে কাজ করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে রয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। একইভাবে তাঁর সাহচর্যে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাঙ্গোপাঙ্গ ও সিন্ডিকেটের লোকজন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাদক সাম্রাজ্য ও সম্পদ ফেলে এখন সবাই পলাতক।

মাদক কারবারে বাড়ি-গাড়ি, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা
গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, মাদক মানেই  গোদাগাড়ী। হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল এখানে খুব চলছে। ৫ আগস্টের পর থেকে কারবারিদের স্বর্গরাজ্য হয়েছে। ওমর ফারুক চৌধুরী ১৬ বছর এমপি ছিলেন। তিনি ভদ্র লোকের বাড়িতে না গিয়ে দাওয়াত খেতেন হেরোইন ব্যবসায়ীর বাড়িতে, আবার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। 
গোদাগাড়ী উপজেলা নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম বরজাহান আলী পিন্টু বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা বড় বড় গাড়ি নিয়ে এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে থাকত। তারা কখনও মাইক্রোবাস উপহার দিত, কখনও মোটরসাইকেল। ফারুক চৌধুরীর থিম ওমর প্লাজায় গিয়ে খোঁজ নেবেন– সেখানে যত ফ্ল্যাট ও দোকান বিক্রি হয়েছে, তার সিংহভাগ কিনেছে গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরাই। 

স্থানীয়রা জানান, দেশের হেরোইন কারবারিদের সবচেয়ে বড় রুট গোদাগাড়ী উপজেলা। শুধু এই উপজেলায় রয়েছে কয়েক শত হেরোইন ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে ভূমিহীন, দিনমজুর, বাসের হেলপার থেকে মাদক কারবারি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযানে তারা পালিয়ে যান। নির্বাচনে আবারও ফারুক চৌধুরী এমপি হলে বীরদর্পে বেরিয়ে আসেন আগের ব্যবসায়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাদের অনেকেই ফের আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এখনও পলাতক থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ কারবারি আবদুর রহিম টিপু, তাঁর ভাই পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও সোহেল রানা। মাদক কারবারি পৌর যুবলীগ সভাপতি আবদুল জব্বার, নাসির উদ্দীন ওরফে নয়ন ডাক্তার, শীর্ষ মাদক কারবারি ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আসাদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ওরফে দারোগা পলাতক রয়েছেন। আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি ইয়াবা ডিলার রুমেল বিশ্বাস ও ইউপি সদস্য শীর্ষ মাদক কারবারি সেতাবুর রহমান বাবু কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। মাটিকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহেল রানা শীর্ষ মাদক কারবারি হলেও তিনি অনেকটা আত্মগোপনের মতো করে এলাকায় থেকেই মাদক কারবার করছেন।

গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে যাওয়া গোদাগাড়ীর যুবলীগ নেতা আবদুর রহিম টিপু। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে ১০ নম্বরে। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে এমপি ওমর ফারুককে তিনি একটি হাইয়েস গাড়ি উপহার দিয়ে আলোচনায় আসেন। এমপিকে তিনি ‘মামা’ বলে ডাকেন। বিপুল সম্পদের মালিক এই শীর্ষ মাদক কারবারিকে আশ্রয় ও অনৈতিক সুবিধা দিতেন। বিনিময়ে নিউমার্কেটে এমপির থিম ওমর প্লাজায় প্রায় ২ কোটি টাকায় তিনটি দোকান কেনেন টিপু। তাঁর চার ভাই গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মাসুদ রানা ও সোহেল রানাও মাদক ব্যবসায়ী। 

এ ছাড়া মাদারপুরের মো.

তারেক সাত বছর আগে ছিলেন মহিশালবাড়ীর মফিজুল স্টোর নামের মুদি দোকানের কর্মচারী। তিনি এখন শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে সখ্য কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসার আড়ালে পুলিশ ও র‍্যাবের সোর্সের কাজও করতেন।  

রেলগেট বাইপাসের মজিবুর ড্রাইভারের ছেলে বাসের হেলপার সোহেল রানা এখন শতকোটি টাকার মালিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় তাঁর নাম ৮ নম্বরে। শহরে গড়েছেন দুটি বাড়ি ও রয়েছে একাধিক দোকান। ওমর প্লাজায়ও কিনেছেন দোকান-অ্যাপার্টমেন্ট। ২০২১ সালে মাদকের টাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি হয়েছেন মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর সঙ্গে ফারুক চৌধুরী ও রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের রয়েছে লেনদেনের সম্পর্ক।
এই তালিকার ২ নম্বরে আছেন নওশাদ আলী জামায়াতি। তিনি আগে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন। তাঁর দুই ছেলে জাহাঙ্গীর, আলমগীর মাদকসহ একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। নওশাদ আলী মূলত মাদক নিরাময় কেন্দ্র খুলে আড়ালে ব্যবসা করতেন। ভিন্ন দলের হলেও ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ তিনি। শুধু তারাই নন, এ রকম শতাধিক সম্পাদশালী মাদক কারবারি সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ৫ নম্বরে ছিলেন নজিবুর রহমান। এই তালিকার ৯ নম্বরে থাকা মাটিকাটা ইউপির সাবেক সদস্য সেতাবুর রহমান বাবুর বাড়িতেও অনুসারীদের নিয়ে একাধিকবার দাওয়াত খেয়েছেন ফারুক চৌধুরী। কয়েক মাস আগে সেতাবুর হেরোইনসহ আটক হয়ে এখন কারাগারে। তাদের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম রবি, সেলিম, হযরত আলী, তোফাজ্জল, শীষ মোহাম্মদ এবং হায়দার আলী প্রশ্রয় পেতে সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর থিম ওমর প্লাজায় কেউ দোকান, কেউ আবাসিক ফ্ল্যাট কিনেছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এসব শীর্ষ মাদক কারবারি ফারুক চৌধুরীকে মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দিতেন। শুধু মাদক কারবারিদের কাছ থেকেই মাসে কয়েক কোটি টাকা পেতেন। ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে মাদক কারবারিদের মধ্যস্থতা করে দিতেন গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কাউসার মাসুম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হামিদ রানা এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাদক কারবারি মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ও তাঁর ভাই টিপু নিজেদের ফারুক চৌধুরীর ভাগনে পরিচয় দিতেন।

রাজশাহী শহরের থিম ওমর প্লাজার পাশেই ছিল ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়। এখানে রাত ১১টার পর নেতাকর্মীকে বের করে মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন। 
গোদাগাড়ী উপজেলা যুবদল সভাপতি মাহবুবুর রহমান বিপ্লব বলেন, ১৬ বছর ধরে ফারুক চৌধুরীর গাড়িবহরে এই শীর্ষ মাদক কারবারিরাই ছিলেন। তালিকাভুক্ত সব কারবারি তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। ফলে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে ভয় পেত। 

শতকোটি টাকার নিয়োগ ও ঘুষ বাণিজ্য 
২০০৯ সালে প্রথমবার এমপি হয়ে স্কুল ও কলেজে একজন করে অপারেটর নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য শুরু করেন ফারুক চৌধুরী। তানোরে যুবলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না, গোদাগাড়ীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদের মাধ্যমে এ নিয়োগ বাণিজ্য করতেন। তবে ২০২০ সালে এসে তানোরে সব নিয়োগ বাণিজ্যে যুক্ত হন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সুজন।

প্রতিটি স্কুল-কলেজে শিক্ষক, আয়া, মালী, পিয়ন নিয়োগ দেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। প্রতি পদে ১০ থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নিতেন। প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এই নিয়োগ বাণিজ্য করেই ফারুক চৌধুরী ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছেন। 

একই সময়ে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপে তানোর উপজেলায় ৫০০ জন এবং গোদাগাড়ীতে ৫০০ গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রতিবছর জনপ্রতি ১ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগের তালিকা সরবরাহ করতেন কর্তৃপক্ষের কাছে। গত ১৫ বছর ধরে শুধু অপারেটর নিয়োগ দিয়েই প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। 
এমনকি সংসদীয় আসনের হাট-ঘাট সব জায়গা থেকেই টাকা খেয়েছেন তিনি। নামমাত্র মূল্যে তাঁর হয়ে এসব হাট নিয়ে কোটি টাকা আয় করতেন সুজন। এসব কাজে তাঁর আরেক সহযোগী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন। 

গোদাগাড়ী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, গোদাগাড়ী কলেজ সরকারি করার নামে ফারুক চৌধুরী আমার কাছে ১ কোটি টাকা ঘুষ চান। শিক্ষকদের কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা তুলে দিই। বাকি ৩৫ লাখ টাকার জন্য কলেজে এসে ইউএনও, ওসি, শিক্ষকসহ কয়েকশ মানুষের সামনে আমাকে পিটিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখেন। আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে দেননি। 

টিআর-কাবিখা প্রকল্পে আত্মসাৎ
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৬ সালের পর থেকে টিআর, কাবিখা পুরোটাই ঢাকায় বিক্রি করে দিতেন ফারুক চৌধুরী। এ কারণে এলাকায় কোনো কাজ হতো না। আপত্তি করায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ইউএনও অফিসে ডেকে লাথি মারেন তিনি। ২০২১ সালে এডিপির দেড় কোটি টাকা কাজ ছাড়াই তুলে নেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তবে ভাউচারে সই করবেন না বলায় তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে জুতা দিয়ে পেটান।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থেকেই সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরী আত্মগোপনে। এসব বিষয়ে তাঁর নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টও নিষ্ক্রিয় দেখা যায়। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হায়াতের নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর থিম ওমর প্লাজায় গিয়ে প্রধান নিরাপত্তারক্ষী জোবায়ের হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফারুক চৌধুরী পরিবার নিয়ে এখানেই বসবাস করতেন। গত ৫ আগস্টের পর পরিবারসহ তিনি চলে গেছেন। আর আসেননি।’
গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ফারুক চৌধুরীর নামে ৫ আগস্টের পর থানায় মামলা হয়েছে। তিনি পলাতক। তাঁর মাদক সম্পৃক্ততার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম সমকালকে বলেন, তাঁর নামে মাদক কারবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর এত অর্থের উৎস কী, সে বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হবে।

 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।

নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’

তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার

গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।

ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।

অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ