যুক্তরাজ্যে ১৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের ডাইনোসরের ২০০টি পায়ের ছাপের সন্ধান
Published: 14th, January 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের ডুয়ার্স ফার্ম কোয়ারিতে ডাইনোসরের প্রায় ২০০টি পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ডাইনোসরের পায়ের এই ছাপগুলো ১৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের (মধ্য জুরাসিক যুগ) বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে সড়ক নির্মাণের জন্য চুনাপাথর উত্তোলনের সময় গ্যারি জনসন নামের এক খননশ্রমিক মাটিতে ‘অস্বাভাবিক ধাক্কা’ অনুভব করেন। এরপর শুরু হয় গবেষণা।
গবেষণায় প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ডাইনোসরের চলাচলের একাধিক পথ ও পায়ের ছাপ আবিষ্কৃত হয়। এই পথগুলোকে ‘ডাইনোসর হাইওয়ে’ নামে ডাকা হয়।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে ডাইনোসরের চলাচলের পথের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো নথিভুক্তও করা হয়েছে।
অক্সফোর্ডশায়ারে সম্প্রতি আবিষ্কৃত এই ‘ডাইনোসর হাইওয়ে’ যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় ডাইনোসর চলাচলের পথ।
ডাইনোসর চলাচলের এই পথ নিয়ে গত বছরের জুন মাসে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী যৌথভাবে এক সপ্তাহ কাজ করেন। তাঁরা বিস্তৃত জায়গায় খননকাজ করেন। এলাকাটি সম্পর্কে যা যা তথ্য পাওয়া গেছে, তা নথিভুক্ত করেন।
১৮২৪ সালে অক্সফোর্ডশায়ারে প্রথম মেগালোসরাস প্রজাতির ডাইনোসর সম্পর্কে তথ্য জানা গিয়েছিল। এর ২০০ বছরের মাথায় নতুন এই আবিষ্কারকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোপ্যালিওন্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক কার্স্টি এডগার এই খননকাজ ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আসলেই এই এলাকায় ডাইনোসরের রোমাঞ্চকর পথ ও দেহের জীবাশ্ম থাকার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যগত অনুক্রম রয়েছে।
১৯৯৭ সালে এই অক্সফোর্ডশায়ারেই ডাইনোসরের চলাচলের একটি পথের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই পথটি এখন আর সুগম নয়।
নতুন আবিষ্কৃত ডাইনোসরের চলাচলের পথগুলো বিজ্ঞানীদের এই প্রাণী সম্পর্কে আরও বিশ্লেষণের সুযোগ করে দেবে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বিজ্ঞানীরা বহু আগে বিলুপ্ত এই প্রাণীর গতিবিধি, খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন অজানা তথ্য উন্মোচন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খননকাজ চালানোর সময় বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের চলাচলের পাঁচটি পথ আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ পথটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটারের বেশি।
অধ্যাপক এডগারের তথ্য অনুসারে, ডাইনোসর চলাচলের এই পথগুলোর মধ্যে চারটিতে লম্বা গলার ও চার পাওয়ালা বিশাল আকৃতির ডাইনোসর চলাচল করত। তৃণভোজী এই প্রজাতিটি সরোপডস নামে পরিচিত।
আর পঞ্চম পথটিতে মেগালোসরাস প্রজাতির মাংসখেকো ডাইনোসরের পদচিহ্ন পাওয়া গেছে। মেগালোসরাস ৯ মিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হতো বলে ধারণা করা হয়।
অক্সফোর্ডশায়ারের গবেষকেরা ৬৫ সেন্টিমিটার (২ দশমিক ১ ফুট) পর্যন্ত লম্বা পদচিহ্নের সন্ধান পেয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানের সময় অগ্নিসংযোগ, পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ জিপ
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ অর্থাৎ জিপ গাড়ি কেনা হবে। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র ডাকা হবে না। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে। প্রতিটি পিকআপের দাম ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০০ পিকআপ কেনায় ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ব্যবহৃত প্রচুর গাড়ি অগ্নিসংযোগে নষ্ট হয়। তাই নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গাড়িগুলো কিনতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
নীতিগত অনুমোদনের প্রস্তাবে জননিরাপত্তা বিভাগ বলেছে, দেশে মোট ৬৩৯টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও এর জেরে উদ্ভূত ঘটনায় ৪৬০টি থানার পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ হয়। এ কারণে পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়ে যায়। সে জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি কেনা দরকার।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলসের ১ দশমিক ৩৬ একর জমি বিক্রির প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। ১৯৬১ সালে ২৭ দশমিক ২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় কারখানাটি।
২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রির প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। তখন কারখানাটির অব্যবহৃত জমি বিক্রির পরিবর্তে সরকারের উন্নয়নমূলক বা জনহিতকর কাজে ওই জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ দুটির পাশাপাশি কমিটি ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ, ২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের লট-২ এর আওতায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন মুদ্রণের কাজ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব।
এর আগে প্রকল্পটির লট-১–এর আওতায় মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে মাঠপর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানায় নির্বাচন কমিশন। আরেক প্রস্তাবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণকাজেরও নীতিগত অনুমোদন দেয় কমিটি।
বৈঠকে হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বার্জ মাউন্টেড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রকল্পের উদ্যোক্তা কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রা. লি. এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) সঙ্গে বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য দুই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।
আসছে তিন কার্গো এলএনজি
এদিকে আজ মঙ্গলবার ক্রয় কমিটিতে আগামী মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য তিন কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ)। এক কার্গোর কাজ পেয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ কিনতে ব্যয় হবে ১১ দশমিক ১৫ মার্কিন ডলার। এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
আরেক প্রস্তাবে গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়বে ১১ দশমিক ২৭ ডলার। ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড আরেক কার্গো সরবরাহের কাজ পেয়েছে। এখানে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হয় ১১ দশমিক ৩৫ ডলার।