স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বললেন, ১৫ বছরে যা হয়েছে তা নির্বাচন নয়
Published: 14th, January 2025 GMT
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনকে দেখে কেউ যদি কল্পনা করেন, তাহলে কিন্তু তা অন্য জিনিস হয়ে যাবে। আমরা চুন খেয়ে আসছি, এখন দই দেখলে ভয় পাই। সুতরাং একটি ভালো নির্বাচন করতে চিন্তা করতে হবে। আর এ জন্য সবার দায়িত্ব আছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভালো প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, নির্বাচনের খরচ এবং পেশিশক্তির প্রভাব। কিন্তু এগুলো সহজে মুক্ত করার উপায় নেই। কারণ হচ্ছে, সমাজ-সংস্কৃতি এগুলোকে পছন্দ করছে, চাঁদাবাজিকে প্রচ্ছন্নভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে সবারই ভূমিকা আছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়ে যান, চেয়ারম্যান-মেম্বার পালিয়ে যান, এটা কোন দেশ! আপনি, আমি সেই দেশের বাসিন্দা। আমরা কোন দেশে দাঁড়িয়ে আছি তা বুঝতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু এভাবে সব অংশের পালিয়ে যাওয়ার নজির নেই।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের এক রকম নির্বাচন হয়। একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য হন। কিন্তু উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের মিল নেই। উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্ড নেই, ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয় না। একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনজনই কেউ কারও কম নয় বলে নিজেরা ভাবেন। আবার জেলা পরিষদ নির্বাচন আরও ভিন্ন। সেখানে খালুরা, মামুরা মিলে ভোট করেন। পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে জেলা পরিষদে বয়স্ক নেতাদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসিয়ে রাখা হয়। ১২ জন সদস্য ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অফিস করেন আর অফিসে হেঁটে যাওয়ার মতো চেয়ারম্যানের শক্তি নেই। এগুলো কী কোনো সিস্টেম হলো! এটাকে একটা সিস্টেমে আনার জন্য দেশের সবাইকে চিন্তা করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া যাবে না। কারণ, আমাদের দেশের সংবিধান তা সমর্থন করে না। তবে শিক্ষিত ও ভালো প্রার্থীকে ভোটাররা ঠিক করবেন। তাঁরা শিক্ষিত প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। দলীয় প্রার্থীকে স্থানীয় নির্বাচন কেউ চাইছে না। সারা দেশে কেউ চায় না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও এটি নিয়ে কাজ করছে।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা। এ সময় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান, কাজী মারুফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারেস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।
এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’