স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনকে দেখে কেউ যদি কল্পনা করেন, তাহলে কিন্তু তা অন্য জিনিস হয়ে যাবে। আমরা চুন খেয়ে আসছি, এখন দই দেখলে ভয় পাই। সুতরাং একটি ভালো নির্বাচন করতে চিন্তা করতে হবে। আর এ জন্য সবার দায়িত্ব আছে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভালো প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, নির্বাচনের খরচ এবং পেশিশক্তির প্রভাব। কিন্তু এগুলো সহজে মুক্ত করার উপায় নেই। কারণ হচ্ছে, সমাজ-সংস্কৃতি এগুলোকে পছন্দ করছে, চাঁদাবাজিকে প্রচ্ছন্নভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে সবারই ভূমিকা আছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়ে যান, চেয়ারম্যান-মেম্বার পালিয়ে যান, এটা কোন দেশ! আপনি, আমি সেই দেশের বাসিন্দা। আমরা কোন দেশে দাঁড়িয়ে আছি তা বুঝতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু এভাবে সব অংশের পালিয়ে যাওয়ার নজির নেই।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের এক রকম নির্বাচন হয়। একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য হন। কিন্তু উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের মিল নেই। উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্ড নেই, ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয় না। একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনজনই কেউ কারও কম নয় বলে নিজেরা ভাবেন। আবার জেলা পরিষদ নির্বাচন আরও ভিন্ন। সেখানে খালুরা, মামুরা মিলে ভোট করেন। পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে জেলা পরিষদে বয়স্ক নেতাদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসিয়ে রাখা হয়। ১২ জন সদস্য ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অফিস করেন আর অফিসে হেঁটে যাওয়ার মতো চেয়ারম্যানের শক্তি নেই। এগুলো কী কোনো সিস্টেম হলো! এটাকে একটা সিস্টেমে আনার জন্য দেশের সবাইকে চিন্তা করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া যাবে না। কারণ, আমাদের দেশের সংবিধান তা সমর্থন করে না। তবে শিক্ষিত ও ভালো প্রার্থীকে ভোটাররা ঠিক করবেন। তাঁরা শিক্ষিত প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। দলীয় প্রার্থীকে স্থানীয় নির্বাচন কেউ চাইছে না। সারা দেশে কেউ চায় না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও এটি নিয়ে কাজ করছে।’

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা। এ সময় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান, কাজী মারুফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারেস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

কামরুল হাসান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান খান, সিঙ্গাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র খোরশেদ আলম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশ্ন করেন এবং মতামত দেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ