হলের নাম পরিবর্তনসহ বাকৃবি শাখা শিবিরের ৩২ দফা
Published: 14th, January 2025 GMT
দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন, লাইব্রেরি থেকে বঙ্গবন্ধু কর্নার বাতিল, হলের নাম পরিবর্তনসহ ৩২ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে বাকৃবি প্রশাসনের কাছে তারা এসব দাবি তুলে ধরেন। শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপ্তিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সংক্রান্ত, হল সংক্রান্ত, ফ্যাসিবাদের মূলোচ্ছেদ সংক্রান্ত, পরিবহন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত, লাইব্রেরি সংক্রান্ত এবং বিবিধ বিষয়ে দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অসংখ্য শহীদের রক্তে অর্জিত এ স্বাধীন দেশে শিক্ষার্থীদের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের রোষানলমুক্ত একটি ক্যাম্পাস উপহার দেবে বাকৃবি নতুন প্রশাসন, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষার মানোন্নয়ন, মেধাবীদের মূল্যায়নসহ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা সম্ভব। ফ্যাসিবাদের আমলে নিয়মে পরিণত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অন্যায় এবং অনিয়মের ইতি টানার সময় এসেছে। এজন্য বাকৃবি শাখার পক্ষ থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করে ৩২ দফা দাবি উত্থাপন করা হলো।
দাবিগুলো হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম আধুনিকায়ন করে সকল কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতা ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূর করতে হবে; যেসব বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন, তা ক্রয়ের জন্য শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; শিক্ষার্থীদের জন্য যৌক্তিক স্টাইপেন্ড নিশ্চিত করতে হবে; ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকট নিরসন করতে হবে; সেশনজট নিরসনের জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে; মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে; ফ্যাসিবাদের আমলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্যের শিকার প্রার্থীদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে; হেলথকেয়ার থেকে সার্বক্ষণিক, দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভালো মানের ঔষধ সরবরাহ করতে হবে।
অন্য দাবিগুলো হলো- অবৈধ উপায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অদক্ষ ডাক্তারদের অপসারণ করে মেধাবী ও বিভাগভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে; গত ১৫ বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নিয়োগ বাণিজ্যের খবর সাপেক্ষে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী নিয়োগগুলো দ্রুত বাতিল করতে হবে; হল পরিচালনা, সিট বন্টনসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে; নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রথম বর্ষ থেকেই আবাসিকতা দিতে হবে; আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং, ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে এবং উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভর্তুকি দিতে হবে; হলে সার্বিক কার্যক্রমে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে।
এছাড়া তারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজনৈতিক ও ধর্মীয়সহ নানাভাবে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ; শেখ মুজিব, শেখ ফজিলাতুন্নেছা ও রোজী জামাল এর নামে করা হলের পুনরায় নামকরণ করতে হবে।
ক্যাম্পাসে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষার্থে স্থাপনা তৈরি ও নামকরণ ছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা মাদক ও অস্ত্রমুক্ত, পরিবহনের রুট বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে নতুন বাসের ব্যবস্থা, রাস্তাগুলো সংস্কার, নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সিসি ক্যামেরা ও পুলিশবক্স স্থাপন, লাইব্রেরির আধুনিকায়নসহ বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবি জানানো হয়।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।