বৃষ্টিঝরা এক সকালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউস থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম, যাকে বলে মর্নিং ওয়াক। পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে বাজার ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের পাশের রাস্তা বেয়ে গ্রামের পথ ধরলাম। পাশে একটা শীর্ণ খাল ধুঁকে ধুঁকে বয়ে চলেছে—অনেকটাই দখলকারীদের দখলে চলে গেছে। খানিকটা দখল করেছে বুনো কচু–ঘেঁচুগাছ আর আগাছা; পাড়ে ভাঁটগাছ ও বুনো ঝোপঝাড়।
অথচ এ খালটিকেই প্রায় ৩৫ বছর আগে দেখেছিলাম জোয়ার–ভাটা খেলানো, নৌকার চলাচল ছিল। এ দৃশ্য দেখে মন খারাপ হলো। তবে উপাচার্য বাংলোর প্রাচীরের ওপর প্রবলভাবে লতিয়ে ওঠা প্যাশন ফলের গাছগুলো দেখে হঠাৎ মন ভালো হয়ে গেল। কাঁচা কাঁচা সবুজ রঙের গোল গোল ফল ঝুলছে। ফুল ফুটেছে দু–চারটি। মনে পড়ল, গত মাসে চট্টগ্রামের খুলশীতে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাচায় ঝোপালো হয়ে অনেকগুলো প্যাশন ফুলের গাছ দেখেছিলাম। সেগুলোয় কুঁড়ি আর ফুল ছিল, ফল ছিল না। কয়েক বছর আগে প্যাশন ফল ধরতে দেখেছিলাম রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অনেক গৃহস্থবাড়ির আঙিনায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গায়ই এখন শৌখিন ফলচাষি ও নার্সারির মালিকেরা সীমিত আকারে প্যাশন ফলের চাষ করছেন। এবার বৃক্ষমেলায় গিয়েও দেখা পেলাম প্যাশন ফলের।
প্যাশন ফলের শরবতের স্বাদ ‘ট্যাং’ ড্রিংকসের মতো। সে জন্য প্যাশন ফল এ দেশে ট্যাং ফল বা শরবতি ফল নামে পরিচিত, অন্য নাম খাসিয়া বেল। প্রকৃতি থেকে পাওয়া ভিটামিন-সি প্যাশন ফলে এত বেশি পরিমাণে আছে যে একটা ফলের শরবত চারজনে ভাগ করে খেলেই নিত্যদিনের ভিটামিন সির চাহিদা মিটে যায়। প্যাশন ফলের ফুল দেখতে চমৎকার—একেবারে ঝুমকা ফুলের মতো। তবে রংটা সাদা, মাঝখানটা বেগুনি। এর ইংরেজি নাম ‘Passion fruit’। প্যাশন শব্দের অর্থ গভীর প্রণয় বা আসক্তি। লতানো বর্ষজীবী এ গাছ তার অবলম্বনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে তার জন্য বিজ্ঞানীরা এ ফলের নাম দিয়েছেন ‘প্যাশন ফল’। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Passiflora edulis, গোত্র বা পরিবার প্যাসিফ্লোরেসি।
এ গাছ লতানো স্বভাবের বীরুৎ—পাতা গভীরভাবে খাঁজ কাটা, সবুজ। ফল অনেকটা বড় সফেদা আকারের হয়, সুগোল, খোসা মসৃণ ও চকচকে। কখনো কখনো ফল টেনিস বলের আকারেও হয়। ফলের খোসা শক্ত, কাঁচা ফলের রং চকচকে সবুজ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হালকা ছিট ছিট দাগ আছে খোসায়। ফল পাকলে জাতভেদে হলুদ বা বেগুনি হয়ে যায়। পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্র খাগড়াছড়ির বিজ্ঞানীরা হলুদ প্যাশন ফলের একটি জাত উদ্ভাবন করেছিলেন, যা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ‘বারি প্যাশনফল ১’ নামে ২০০৩ সালে অনুমোদন পায়।
একটি প্যাশন ফলে ১০০ থেকে ১৫০টি বীজ থাকে। ফল কাটলে দেখা যায়, বীজগুলো পেঁপের মতো ফলের শাঁসের সঙ্গে লেগে রয়েছে। বীজাবৃত রসালো শাঁস খাওয়া হয়, স্বাদে রস টক-মিষ্টি। বেশ পুষ্টিকর। ব্রাজিলে প্যাশন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে রস উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়। প্যাশন ফল যদিও স্বপরাগায়িত গাছ, তথাপি পর-পরাগায়নে ভালো ফল দেয়। এর জন্য ফলের সংখ্যা ও ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা বাড়ে, এতে ফলের ওজনও বাড়ে। সৌভাগ্য যে প্রাকৃতিকভাবে মৌমাছিরাই এ কাজ করে থাকে।
বীজ থেকে ও অঙ্গজ উপায়ে প্যাশন ফলের চারা তৈরি করা যায়। মাতৃগুণ ঠিক রেখে ভালো চারা তৈরি করতে চাইলে শাখা কলম বা কাটিং উত্তম। গ্রাফটিং বা জোড় কলম করেও নতুন গাছ তৈরি করা যায়। কাটিং সহজ এবং সাধারণত এ পদ্ধতিতেই অধিকাংশ চারা তৈরি করা হয়। পেনসিলের মতো মোটা দুই থেকে চারটি গিঁটবিশিষ্ট অন্তত এক বছর বয়সী লতার অংশ তেরছাভাবে কেটে এক গিঁট মাটির মধ্যে পুঁতে দিলে সেই গিঁট থেকে শিকড় গজায় ও মাটির ওপরের গিঁট থেকে পাতা হয়। চারা লাগানোর ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে। মার্চ মাস ফুল ফোটার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে আসা ফুল থেকে জুন-জুলাই মাসে ফল পাওয়া যায়। এ ফলের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলে, বিশেষ করে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনাকে এ ফলের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুর ভোট আজ, ৭২ বছরে নির্বাচন ১৬ বার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। এটি হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৭২ বছরে রাকসুর ১৭তম নির্বাচন।
১৯৯০ সালের পর দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।
সাড়ে তিন দশক পর রাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভোট গ্রহণের জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭ কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে। ক্যাম্পাস ও আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটাদাগে প্রার্থী, তাঁদের সমর্থকেরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। কাল (বৃহস্পতিবার) এবং পরের দিনটায় (শুক্রবার) যদি তাঁরা এ রকম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যদি এটাকে আমানত হিসেবে দেখেন, তাহলে কাজটা স্বচ্ছ থাকবে।’
ধর্মঘট থেকে প্রথম নির্বাচনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও অফিস কার্যক্রম শুরু ১৯৬৪ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রথমে যে ছাত্র সংসদ গঠিত হয়, তার নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’। ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
‘রাকসু: অতীত ও বর্তমান’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ আছে রাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. আব্দুর রহমানের। তাতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের’ নির্বাচন আদায় করতে তখনকার শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট পর্যন্ত পালন করতে হয়েছিল। পরে প্রশাসন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০০৩ সালে একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করা হয়। সেখানে রাকসু নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে। স্মারকপত্র সূত্রে জানা যায়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’ এবং রাকসু মিলিয়ে ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছে মোট ১৬ বার। এর মধ্যে ১০ বার নির্বাচন হয়েছে দেশের স্বাধীনতার আগে। স্বাধীনতার পর হয়েছে ছয়বার—১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪, ১৯৭৪-৭৫, ১৯৮০-৮১, ১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৮৯-৯০ সময়ে।
স্বাধীনতার পর রাকসুর নির্বাচনগুলোয় সহসভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রলীগ দুবার, ছাত্র মৈত্রী দুবার, ছাত্র ইউনিয়ন একবার এবং ছাত্রদল একবার জয়ী হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জাসদ ছাত্রলীগ তিনবার, ছাত্রলীগ দুবার ও ছাত্র ইউনিয়ন একবার জয়ী হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষে শেষবার নির্বাচন হয়। ওই বছর ভিপি হন ছাত্রদলের রুহুল কবির রিজভী এবং জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস। এরপর আর রাকসু নির্বাচন হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, পঞ্চাশের দশকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে দেখা হতো না। এটা ছিল সামাজিক নেতৃত্ব তৈরির জায়গা। কিন্তু ষাটের দশকে ছাত্ররাজনীতি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেখা গেল, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাঁরা বড় পদ পেতেন, তাঁরা ক্ষমতাসীনদের বিপরীত মতাদর্শের।
আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, ছাত্র সংসদ থেকে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করায় দেশের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ত। এতে সরকারও ভয়ে থাকত। শাসকগোষ্ঠীর ভয়ের কারণ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।
রাকসু ভোট-২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ হবে রাকসুর ভোট।
রাকসুতে পদ ২৫টি। এর মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়া বাকি ২৩টি পদে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকেন। এসব পদে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া প্রতিটি হল সংসদে ১৭টি পদ রয়েছে। সেখানেও সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ ছাড়া বাকি ১৫টি পদে নির্বাচন হয়। এ ছাড়া সিনেটের ৫টি পদে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন রাকসুর সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হবে।
রাকসুর ২৩টি পদে ২৪৭ জন, ১৭টি হলে ১৫টি করে পদে ৫৯৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন ভোটার ৪৩টি পদে ভোট দিতে পারবেন। সময় পাবেন ১০ মিনিট।
রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে ১৬ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন ও ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।
রাকসু নির্বাচনে ১০টি প্যানেল লড়ছে। এগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল আছে মাত্র দুটি-ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ এবং ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এই দুই প্যানেলের পাশাপাশি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট–সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়কের নেতৃত্বাধীন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ এবং নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খানের নেতৃত্বাধীন ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্রতিযোগিতায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে গত ২৮ জুলাই রাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ নানা কারণে ভোট গ্রহণের তারিখ তিনবার পিছিয়ে যায়। প্রার্থীরা পক্ষপাত, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। তবে ভোট বর্জনের ঘটনা ঘটেনি।
‘নিয়মিত রাকসু নির্বাচন হোক’গঠনতন্ত্রে রাকসুর কাজ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অনুষ্ঠান আয়োজন, বছরে অন্তত একবার সাময়িকী প্রকাশ, মানবহিতৈষী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও বক্তৃতার আয়োজন, প্রতিবছর অন্তত একবার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা ও পরিবেশগত সম্মেলনে প্রতিনিধিদের পাঠানো ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে ক্রীড়া, বিতর্ক, সাহিত্য—সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কাজ করতেন। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দিকপালেরা ক্যাম্পাসে আসতেন। এতে নেতৃত্ব বিকাশ হতো। নির্বাচনের আগে সব প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থীরা অনুষ্ঠানে তাঁদের ইশতেহার তুলে ধরতেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। খুব সুশৃঙ্খলভাবে এসব অনুষ্ঠান হতো। নির্বাচনের পর সবাই একসঙ্গে মিলে আবার কাজ শুরু করতেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন হতে থাকে।
সাবেক রাকসু নেতা ও শিক্ষকেরা বলছেন, ছাত্র সংসদের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবি তুলে ধরা এবং তাঁদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা। রাকসু না থাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ছিল না। এ কারণে যখনই শিক্ষার্থীরা অধিকার আন্দোলনের দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের রোষানলে পড়তে হয়েছে। আবাসনসহ বিভিন্ন সংকটের সমাধান হয়নি। বরং ক্যাম্পাসে খুন, সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রাকসু নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাহানি বন্ধ হবে এবং দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রভাব কমবে বলে আশা করা যায়। এতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। তিনি চান, নিয়মিত রাকসু নির্বাচন হোক।