টানা বৃষ্টিতে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচের দাম
Published: 11th, July 2025 GMT
কয়েক দিনের বৃষ্টিতে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচের দাম। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে মরিচের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে তিন গুণ। তিন দিন আগের প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মরিচ গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজকুনিপাড়া, মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তিন দিনের বৃষ্টিতে অনেক এলাকার মরিচ ক্ষেতে পানি জমে গেছে। ফলে কৃষকরা মরিচ তুলতে পারছেন না। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিতে মরিচের ফুল ঝরে গেছে। এসব কারণে বাজারে মরিচের সরবরাহ কমেছে। কিন্তু চাহিদা না কমায় দাম বেড়েছে। তবে আমদানিকারকরা ভারত থেকে আমদানি বাড়িয়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
রাজধানীর খুচরা বাজারে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার ভ্যান কিংবা স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের থেকে কিনতে গেলে কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার মতো। যদিও কারওয়ান বাজারে দাম অনেকটাই কম দেখা গেছে। সেখানে মানভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন সমকালকে বলেন, তিন-চার দিন আগে মরিচের কেজি ৮০-৯০ টাকা ছিল। বৃষ্টিতে বাজার বেড়ে গেছে। তাঁর ভাষ্য, বর্ষার সময় বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় দাম বাড়বেই। তবে ভারত থেকে আমদানি করা মরিচ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
চার দিনে দাম বেড়েছে চার গুণ
ঢাকার পাশাপাশি উৎপাদন এলাকাগুলোতেও দর বেড়েছে ঝালজাতীয় পণ্যটির। চার-পাঁচ দিন আগে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। প্রায় চার গুণ দাম বেড়ে গতকাল সেখানকার পাইকারি বাজারে ২১০ থেকে ২৫০ টাকা এবং খুচরায় ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে মরিচ।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা ঝিটকা পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবুল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও এখানে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে। তবে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মরিচ এসেছে। টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে মরিচ তুলতে না পারায় বাজারে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চরমত্ত গ্রামের কৃষক রহিজ উদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ মরিচ তোলা হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজে বুধবার মাত্র ২৫ কেজি তুলতে পেরেছি। টানা বৃষ্টির কারণে মরিচ ফুল ঝরে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমেছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ বি এম শামছুন্নবী তুলিপ জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টির অজুহাতে ৮০ টাকার কাঁচামরিচ ৩০০ টাকা হতে পারে না। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং করা উচিত।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক ডক্টর রবীআহ নূর আহমেদ সমকালকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪২৮ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়েছে। তবে জুলাই মাস থেকে মরিচের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে আসে।
হিলি স্থলবন্দর এলাকায়ও বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। সর্বশেষ ২০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে মরিচের দাম। দাম বাড়ায় গতকাল থেকে হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু করেছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় ভারত থেকে হিলি বন্দরে প্রবেশ করে ১০ টন মরিচবোঝাই দুটি ট্রাক। বন্দরের এনপি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে এই মরিচ আমদানি করে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে মরিচ আমদানি হবে। বন্দরের তথ্যমতে, গেল বছরের ১৫ নভেম্বর এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার এসেছে মরিচ।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন মানিকগঞ্জ ও হিলি প্রতিনিধি)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক চ মর চ সবজ ম ন কগঞ জ ব যবস য় ৮০ ট ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি
দেখলে মনে হবে চাষ দেওয়া কোনো জমি। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির স্তূপ, তাতে বড় বড় গাড়ির চাকার দাগ। কোথাও গভীর গর্ত হয়ে জমে আছে পানি। যশোরের অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চিত্র এখন এমনই। এতে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়ক চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গর্তে জমা পানি, কাদামাটির কারণে রাস্তাটি চেনার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক। খানাখন্দে চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানীকৃত সার মোংলা থেকে নদীপথে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে এনে খালাস করা হয়। সেই সার ট্রাকের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বেহাল সড়কের কারণে নদীবন্দরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। ফলে আমনের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম পাটোয়ারী বলেন, সড়কটির কারণে নওয়াপাড়া মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বন্দরের বার্জ কার্গো থেকে সারসহ বিভিন্ন পণ্য সঠিক সময়ে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে অতিরিক্ত সময় লাগায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার কুণ্ডু বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্তে পানি জমে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে ওড়ে ধুলা। মোটরসাইকেলচালকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ মোবাইল ফোনে জানান, ঠিকাদারদের ডাকা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ইট ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসও অভয়নগর হয়ে যাতায়াত করে। খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। এখন বাসগুলোকে মনিরামপুর, সাতক্ষীরা ঘুরে যেতে হয়।
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ২ হাজার ৩৫২ মিটার কাজের মধ্যে ৭০২ মিটার পড়েছে যশোর মুরলী মোড়ে। বাকিটা নওয়াপাড়া থেকে প্রেমবাগ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে। কাজটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
এর আগে ২০১৮ সালে দু’জন ঠিকাদার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের অভয়নগরের রাজঘাট থেকে যশোরের পালবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। ওই সময় কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিন বছরের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়ে পড়ায় আবার সংস্কারকাজ করতে হচ্ছে।