১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পাওয়া সিইউএফএল কর্মকর্তা এনামুলের কারামুক্তি
Published: 16th, January 2025 GMT
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দুই মামলায় খালাস পাওয়ায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
একই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাতীয় পার্টি নেতা পটিয়ার হাফিজুর রহমানের সাজাভোগ শেষ হওয়ায় শিগগিরই তিনি মুক্তি পাবেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র ও চোরাচালানের দুই মামলায় খালাস পাওয়ায় কে এম এনামুল হককে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে খালাসের কাগজপত্র কারাগারে আসার পর যাচাই শেষে বিকেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পান। পরে ১৪ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ উলফা’র সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানোর রায় দেন। রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে পরেশ বড়ুয়ার সাজা ১৪ বছর করা হয়েছে। আর চার আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তার মধ্যে পটিয়ার হাফিজুর রহমান রয়েছেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন।
রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাড়ে ৬ মাস পর গ্যাস পেয়ে সিইউএফএলে সার উৎপাদন শুরু
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ইউরিয়া উৎপাদন আবার শুরু হয়েছে। গ্যাসসংকটে সাড়ে ছয় মাস বন্ধ থাকার পর আজ রোববার ভোরে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল থেকে কারখানাটিতে ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ অক্টোবর থেকে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে কারখানাটিতে। এরপর কারখানাটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস পাওয়ার পর যাবতীয় স্টার্টআপ (কারখানা চালুর প্রক্রিয়া) শেষে ভোরে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই খুশি।
কারখানা সূত্র জানায়, সিইউএফএল চালু থাকলে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা যায়। প্রতি মেট্রিক টন সার ৩৮ হাজার টাকা হিসেবে কারখানাটিতে দৈনিক ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সার উৎপাদিত হয়। কারখানা বন্ধ থাকায় গত সাড়ে ছয় মাসে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার সার উৎপাদন করা যায়নি।
কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর ধরে কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো গ্যাসসংকটে দীর্ঘ সময় বন্ধ থেকেছে কারখানা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল সিইউএফএল কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। টানা ১০ মাস বন্ধের পর ১৩ অক্টোবর সিইউএফএল চালু হয়। তবে এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হলেও ১১ এপ্রিল গ্যাসসংকটে আবারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা ছিল। তবে বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম কারখানাটি। পাশাপাশি দৈনিক ৮০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।
সিইউএফএল সূত্র আরও জানায়, পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসসংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।