ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে পরিচালিত করতো: সারজিস
Published: 16th, January 2025 GMT
ভারতের বিএসএফ কর্তৃক কুড়িগ্রাম সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানী হত্যাসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করার দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কলেজমোড় থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ গ্রামে ফেলানীর বাড়ি পর্যন্ত এ লং মার্চ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক ড.
এদিন সকাল ১১টার দিকে জেরা শহরের কলেজ মোড়ে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কুড়িগ্রাম জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয় সারজিস আলম বলেছেন, “আর যদি আমার কোনো ভাই বা আমার কোনো বোন আমাদের ওই সীমান্তে আমাদের তারকাঁটায় লাশ ঝুলে থাকে তাহলে কাঁটাতারকে লক্ষ্য করে আজকের মার্চ ফর ফেলানীর মত লং মার্চ করা হবে। আর যদি পরবর্তীতে আমাদের সেই মার্চ তাঁরকাটাকে উদ্দেশ্য করে হয়, তাহলে আমাদের লক্ষ্য তারকাঁটাকে ভেদ করে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশকে একটি কথাই বলতে চাই, এই যে সীমান্ত হত্যা, তারকাঁটা দেওয়ার নামে জোর করে বাধা দেওয়ার জন্য যে প্রয়াস তা রুখে দেওয়ার জন্য নতুন করে যে অভ্যুথান হয়েছে এই অভ্যুথানের স্ফুলিঙ্গ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী থেকে বলতে চাই আমরা বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো লাশ দেখতে চাই না। বাংলাদেশের যত নাগরিককে সীমান্তে লাশ করা হয়েছে তার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে। ছাত্রজনতা আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে, সেই ছাত্র জনতা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি মেনে নিবে না। আগামীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য কোন দেশের দালাল হন তাহলে তাদের পরিণতি খুনি হাসিনার মতো হবে।”
লং মার্চের শুরুতে ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে সকল নাগরিক হত্যার বিচার, সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্র বন্ধ, শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল করে সাম্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও কুড়িগ্রামের চরের জীবনজীবিকা উন্নয়নে নদী সংস্কারের পাঁচ দফা দাবি জানান সারজিস আলম।
লং মার্চটি সকাল ১১ টার পরে কুড়িগ্রামের জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লং মার্চটি জেলা শহরের রিভারভিউ মোড়ে এসে ভ্যানে করে ফেলানীর বাড়ির দিকে রওনা দেয়। জেলা শহর থেকে ফেলানীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বিভিন্ন হাট বাজারে লং মার্চ থামিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার করতে বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম।
পরে বিকেল ৪টার দিকে ফেলানীর বাড়ির পাশে রামখানা ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকায় জনসভায় বক্তব্য দেন সারজিস আলমসহ ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা।
নাগেশ্বরী উপজেলার দীঘির পাড় মাঠের জনসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশে যত পিতা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য ফেলানীর পিতা। ভারতের বিএসএফ যখন অন্যায়ভাবে তার মেয়ের লাশ ঝুলিয়ে রাখে, শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারেনি। শেখ হাসিনা কতটা জিম্মি, কতটা পুতুল ছিল যে ভারত সরকার তাকে পরিচালিত করত। এতটাই পুতুল যে, একটা খুনের পর্যন্ত বিচার করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা খাটিয়েছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর। কিন্তু সেই শেখ হাসিনা কাঁটাতারের ওপারে ভারতে মোদির পায়ের তলায় গিয়ে বসে থাকতো। খুনি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারের উপরে হত্যা করেছে।
খুনি হাসিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। খুনি হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের টুল বানিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিজিবিকে বিএসএফের অনুগত বানিয়ে রেখেছে। সবগুলো অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রত্যেক অফিসে টাকা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারত প্রীতির কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি।”
জনসভায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৪ বছরেও আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার পাইনি। আর্ন্তজাতিক আদালতে আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার দাবি করছি। আমার চোখের সামনে আমার মেয়েকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।”
এদিন সন্ধ্যার আগে জনসভা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
ঢাকা/বাদশাহ/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক ষমত শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।