শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে পাবনায় বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের ১১তম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে পাবনা শহরের গোপালপুর হেমাসাগর লেনের পৈত্রিক ভিটায় সুচিত্রা সেনের ভাস্কর্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহাঙ্গীর আলম। 

পরে সুচিত্র সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পরিষদের সদস্যরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। 

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড.

নরেশ মধুর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

 

সভায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি উদ্ধারের দীর্ঘদিন পার হলেও বাড়িটিতে স্মৃতি সংগ্রহশালা গড়ে না ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, বাড়িটিতে এখনো সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করার কোনো কাজ হয়নি। দিনে দিনে বিষয়টি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। 

প্রসঙ্গত, একজন সাধারণ বাঙালি নারী থেকে নায়িকা হয়ে ওঠা, তারপর মহানায়িকা হয়ে অনেকটা নীরবে চলে যাওয়া। যার ভুবন ভোলানো হাসিতে আজও বুদ হয়ে আছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। তার নাম সুচিত্রা সেন। আজ ১৭ জানুয়ারি, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবস। 

২০১৪ সালের এইদিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর পাবনায় সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজড়িত পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত হলেও অনেকটা অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের দখলে থাকা বাড়িটি যেন প্রাণহীন। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। বাড়ি উদ্ধারের প্রায় ১১ বছর পার হলেও বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ গড়ে তোলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই পাবনাবাসীর।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, “সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার জন্য আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে  প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেটি আজও সেই প্রস্তাবনা হিসেবে তাদের কাছে পড়ে আছে।” 

তিনি আরো বলেন, “সুচিত্রা সেনের বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা করার প্রকল্পটি দেশের আরো অনেকগুলো প্রকল্পের সাথে অন্তর্ভুক্ত। সেখান থেকে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রকল্পটি আলাদা করে আলাদা প্যাকেজে বাড়িটি সংস্কার করা দাবি জানাচ্ছি।” 

জানা জায়, ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় জন্ম সুচিত্রা সেনের। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতীশ রায় তা বদলে রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু পাবনার মহাকালী পাঠশালার খাতায় তার নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমাসাগর লেনের একতলা পাকা পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে।

 

তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগ না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয় প্রিয় ও পছন্দের ছিল সুচিত্রা সেনের। 

১৯৪৭ সালে দেশভাগের কয়েকমাস আগে সুচিত্রার বাবা সপরিবারে ভারত চলে যান। কলকাতা যাবার বছর দুয়েক পরেই দিবানাথ সেনের সঙ্গে রমাদাশ গুপ্ত ওরফে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়।

ঢাকা/শাহীন/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ