কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুজন মারা যাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মীমাংসার অংশ হিসেবে নিহত দুই ব‌্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। 

এই দফারফার চেষ্টার সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জড়িত বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া দুই ব‌্যক্তির স্ত্রীকে হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের চাকরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা.

হেলিশ রঞ্জন সরকার টাকার বিনিময়ে ঘটনা মীমাংসার চেষ্টার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করলেও, নিহত দুজনের স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। 

তিনি বলেন, “হাসপাতালে অনেক রোগী মারা যায়। এজন‌্য রোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। এ ধরনের কোনো তহবিলও নেই।”

নিহত জহিরুলের বড়ভাই মাসুক মিয়া জানিয়েছেন, ঘটনার দিনই একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা বিষয়টি মীমাংসার জন‌্য প্রস্তাব দিয়েছে। তাকে আগামী ২৫ জানুয়ারি হাসপাতালে যেতে বলেছে। 

তিনি বলেন, “রোগী মৃত‌্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির ডাকে আমি বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কমিটির কাছেও ওই প্রস্তাবের কথাটি তুলে ধরেছি। তাছাড়া হাসপাতালের পরিচালক চাকরির যে প্রস্তাব দিয়েছে সে কথাও কমিটিকে জানিয়েছি।”

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ভুল ইনজেকশনে রোগী মারা যাওয়ায় রোগীদের মধ‌্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, বুধবারের ঘটনার পর এ ওয়ার্ড থেকে অন্তত ছয়জন অস্ত্রোচারের রোগী পালিয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, খাদ‌্যনালিতে ছিদ্র থাকায় পেটে ব‌্যথাজনিত সমস‌্যা নিয়ে গত ১২জানুয়ারি হাসাপাতালে ভর্তি হন জেলার নিকলীর নোয়াপাড়া গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক জহিরুল ইসলাম (২৮) এবং হার্নিয়ার অপারেশনের জন‌্য গত ৭ জানুয়ারি ভর্তি হন কটিয়াদীর পূর্ব সহস্রাম গ্রামের মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২)। দুজনেরই গত বুধবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অপারেশনের আগে প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে নার্স নাদিরা বেগমের ভুল ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যান দুই রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই নার্স অ‌্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে অ‌্যানেসথেশিয়ার ইনজেকশন দেওয়ায় তাদের মৃত‌্যু হয়।

এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের ডা. অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। অভিযুক্ত নার্সকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রুজু হচ্ছে। 

ঘটনার দিন নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তারা থানায় হত‌্যা মামলা দায়ের করবে। কিন্তু দুদিন হয়ে গেলেও কেউ থানায় মামলা করতে যায়নি।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা আল মামুন জানিয়েছেন, নিহত দুজনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। যদি মামলা হয় তদন্ত করে আইনগত ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/রুমন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ জন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ

মণিপুরি শাড়ি, গামছা, লিচু, আম, মধুসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪টি পণ্যকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এই সনদ দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

সভায় শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেধাসম্পদ দিবসের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী, অভিনেত্রী ও সংগীত পরিচালক আরমিন মুসা। 

সভায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি শাড়ি। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল। জিআই পণ্য দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে। এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে।

এ সময় তিনি জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করার আহ্বান জানান। 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব গান। এ দেশের মানুষ গানের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সংগীত নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। দেশের মানুষ কিছু দিনের মধ্যে তা দেখতে পাবে। সংগীতের কপিরাইট নিশ্চিত করতে হবে। 

নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হলো– নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই, মাগুরার হাজরাপুরী লিচু, সিরাজগঞ্জের গামছা, সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, মিরপুরের কাতান শাড়ি, ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা, কুমিল্লার খাদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না, সুন্দরবনের মধু, শেরপুরের ছানার পায়েস, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি, গাজীপুরের কাঁঠাল, কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান, অষ্টগ্রামের পনির, বরিশালের আমড়া, কুমারখালীর বেডশিট, দিনাজপুরের বেদানা লিচু, মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর, নওগাঁর নাকফজলি আম, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ এবং ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ। 

সভায় এসব জিআই সনদ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ