কাপ্তাই উপজেলার বুকচিরে বয়ে গেছে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীটি রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, পটিয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। এই নদীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছরই কাপ্তাইয়ে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। তাদের অনেকে কর্ণফুলী নদীতে নৌকাযোগে ভ্রমণে যান। নদীতে বারবার ঘটছে নৌকাডুবির ঘটনা। অনেকে স্বচ্ছ জলরাশি দেখে আনন্দে নদীতে ঝাঁপ দেন, সাঁতার না জানায় তারা আর উঠতে পারেন না। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে ১১ জনের সলিল সমাধি হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে। বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সীতার ঘাট এলাকায়।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাটে ডুবে মৃত্যু হয় দুই পর্যটকের। তারা হলেন প্রিয়ন্ত দাশ (১৭) ও শাওন দত্ত (১৭)। তারা চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটা থেকে ৯ বন্ধু মিলে কাপ্তাই ভ্রমণে আসেন। নৌকাডুবি হয়ে মারা যাওয়া দু’জনের লাশ পাওয়া যায় ৪৩ ঘণ্টা পর। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে কাপ্তাইজুড়ে।
এর আগে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি পর্যটকবাহী নৌকা চন্দ্রঘোনা কয়লার ডিপো সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে টুম্পা মজুমদার (৩০), বিজয় মজুমদার (৫) ও দেবলীনা দে (১০) নামের ৩ জন যাত্রী নদীতে ডুবে মারা যান। একইভাবে ২০২১ সালের গত ২৯ মে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাটে ডুবে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র তন্ময় দাশের (১৯) মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ১১ মে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় কলেজছাত্র লোকেশ বৈদ্য (১৯) ও তার বন্ধু অপূর্ব সাহার (১৮)। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল চিৎমরম নদীর ঘাটে গোসল করতে নামে জয় কান্তি দে (১৩) নামের এক শিশু। পরে তার সলিল সমাধি হয়। অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে মাছ ধরতে গিয়ে চিৎমরম ঘাটে মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা উসালা মারমার (৩৪)। ২০২৩ সালের ১১ মে ব্যাঙছড়ি মুসলিমপাড়া ঘাটে খেলতে গিয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয় মো.

রিয়াদুল ইসলাম (৪) নামের স্থানীয় এক শিশুর।      
কাপ্তাইয়ে বারবার কেন নৌডুবি ও মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে– জানতে চাইলে সাংস্কৃতিককর্মী অর্নব মল্লিক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই অংশে নৌডুবিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সীতার ঘাটে। শহর থেকে আসা পর্যটকরা শহর এলাকায় এমন স্বচ্ছ জলরাশি দেখতে পান না। তাই এমন জলরাশি দেখে তারা আকর্ষিত হয়ে আগপিছে না ভেবে কর্ণফুলী নদীর গভীর জলে নেমে পড়েন। ভালো সাঁতার না জানায় অনেকে স্রোতে ভেসে যান। আবার অনেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তলিয়ে যান। দুর্ঘটনা রোধে পর্যটন স্পট বনশ্রী কমপ্লেক্স থেকে সীতার ঘাট অংশকে বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙানো দরকার। এতে মানুষ সচেতন হবেন।’
কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার কাজী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাপ্তাইয়ে বর্তমান সময়ে যেসব নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে সেগুলো অনুসন্ধান করে জানা যায়, নিহতদের কেউই সাঁতার জানতেন না। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যারা ঘুরতে আসেন তারা কর্ণফুলী নদী সম্পর্কে সচেতন না থাকায় এবং সাঁতার না জানায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি  ঘটছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরি হয়ে পড়েছে।’ 
তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই অংশে কিছু নীরব স্থানে বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা নৌকাযোগে এসে মাদক সেবন করে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। মাদক সেবন করার পর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নদীতে নেমে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে তারা। আবার কর্ণফুলী নদীতে যে পর্যটকবাহী নৌকা আছে সেগুলোয় লাইফ জ্যাকেট নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে।’
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করে পর্যটকসহ স্থানীয়দের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে তিনি জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত য র ঘটন দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে