ম্রো ভাষা টিকিয়ে রাখতে এলাকাবাসীর উদ্যোগ
Published: 19th, January 2025 GMT
বাঁশ-কাঠ ও টিন দিয়ে পাচঁটি মাচাং ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ছাত্রাবাস, একটি ছাত্রী নিবাস, একটি অফিস কক্ষ ও অন্যটি রান্নাঘর। এর পাশেই করা হয়েছে পাঠদানের ঘর। ‘ম্রো’ ভাষা পাঠদানের জন্যই এই ঘরগুলো বানানো হয়েছে। ছাত্রাবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরুং আনৈই’। এটি ম্রো ভাষার শব্দ। ‘আরুং’ এর অর্থ হল ঊষা এবং ‘আনৈই’ শব্দের অর্থ আলো।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ৫ নম্বর টংকাবতী ইউনিয়নের ব্রিকফিল বাজার এলাকায় ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গায় এই ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। ক্রামা ধর্মের ধর্মীয় গুরু সিংলক ম্রো, ম্রো জনগোষ্ঠীর ব্যাম্বো ব্যাংক (ম্রো জুমচাষী সমবায় সমিতি) ও টংকাবতী এলাকাবাসী এই ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করেছেন।
আরো পড়ুন: কেমন আছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা?
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ক্রামা ধর্মের ধর্মীয় গুরু লেংইয়াং ম্রো প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এই ছাত্রাবাসটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো, দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পারিং ম্রো, ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো, টংকাবতী ইউপি সদস্য য়ংঙি ম্রোসহ ম্রো জনগোষ্ঠীর শতাধিক নারী-পুরুষ।
এই ছাত্রাবাসে রয়েছে বাংলা-ইরেজি শিক্ষক দুই জন ও ম্রো ভাষার শিক্ষক দুইজন। প্রথম বছরেই ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই ছাত্রাবাস। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ জন ছাত্রী রয়েছেন। এসব শিক্ষার্থী আলীকদম, থানচির বড় মোদক, নাইক্ষ্যংছড়িসহ দূরদূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ম্রো মাতৃভাষার পাঠদান করানো হয়। সন্ধ্যায় বাংলা-ইরেজি ভাষার পাঠদান করানো হয়।
আরো পড়ুন: ভিন্ন ভাষায় পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচনি প্রচার
রাকলাম পাড়ার মেনপং ম্রো তার ছেলেকে এই ছাত্রাবাসে রেখেছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আমাদের পাড়া থেকে স্কুল অনেক দূরে। তাই পড়ালেখা করানোর জন্য ছেলেকে এই ছাত্রাবাসে রেখেছি। এখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি মাতৃভাষার পড়ালেখা করতে পারবে সে।”
ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো এই ছাত্রাবাস নির্মাণের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, “বাংলা-ইংলিশ পড়তে গিয়ে ম্রো মাতৃভাষা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এটাকে কেন্দ্র করে আমরা ম্রো মাতৃভাষার ছাত্রাবাস চালু করেছি। ছাত্রাবাসের পাশেই একটি সরকারি জুনিয়র ইাই স্কুল রয়েছে। সেখানে বাংলা-ইংরেজি পড়বে আর এই ছাত্রাবাসে ম্রো মাতৃভাষায় লেখাপড়া করবে শিক্ষার্থীরা। এভাবে কিছুটা হলেও নিজেদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।”
আরো পড়ুন: ‘আমি মরে গেলে আমাদের ভাষাও মরে যাবে’
দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পারিং ম্রো ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গা এই ছাত্রাবাসের জন্য দান করেছেন। তিনি বলেন, “বান্দরবানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস। তার মধ্যে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এজন্যই ম্রো অধ্যুষিত এলাকায় ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়েছে। ম্রো জনগোষ্ঠী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া ও নিজস্ব মাতৃভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই ছাত্রাবাস করা হয়েছে।”
আরো পড়ুন: রেংমিটচ্য ভাষার স্কুলে পানির ট্যাংক ও শিক্ষা সামগ্রী দিলো ওয়ালটন প্লাজা
টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো বলেন, “বান্দরবান জেলা ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ম্রো দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর মানুষ শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে। এরকম ছাত্রাবাস আরো বেশি বেশি হওয়া দরকার। সরকার যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এরকম সরকারিভাবে ছাত্রাবাসের নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরো বেশি অগ্রসর হবে। এই ছাত্রাবাসের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।”
ঢাকা/চাইমং/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ছ ত র ব স জনগ ষ ঠ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।