আজই ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ক্ষমতার ব্যাটন নেবেন। সারাবিশ্বের চোখ এখন ওয়াশিংটনের দিকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরায়েলের আগ্রাসন সম্পর্কে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কৌতূহল ব্যাপক।

প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব একটি বৈদেশিক ও সামরিক নীতির চোরাবালিতে আটকে যেতে পারে পশ্চিম এশিয়াতেই। ইউরেশিয়া বা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয়, যদিও এ দুটি ক্ষেত্রে ঝুঁকি একেবারে কম নয়। কারণ ইসরায়েলের নিরাপত্তা মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরই একটি বিষয়!

এ পর্যন্ত ট্রাম্প বেশ ঠান্ডা মাথায় খেলেছেন এবং পশ্চিম এশিয়া নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা নিজের কাছেই রেখেছেন। পশ্চিম এশিয়ার জন্য তাঁর বিশেষ দূত হিসেবে ধর্মে ইহুদি স্টিভ উইটকফকে ট্রাম্প বেছে নিয়েছেন। বিষয়টি তুলনামূলক অলক্ষ্যে ঘটেছে। উইটকফ ট্রাম্পের আসন্ন দলে একজন অজ্ঞাত ও রাজনৈতিকভাবে নবাগত। তবে এটি ট্রাম্পের বড় জামাতা জ্যারেড কুশনারের প্রান্তিকীকরণ এবং আব্রাহাম চুক্তির সমাধিস্থল হতে পারে।

নিশ্চিতভাবেই স্ব-নির্মিত বিলিয়নেয়ার (নিউইয়র্ক সিটির একজন মহিলা কোট প্রস্তুতকারকের ছেলে) উইটকফ একটি আকর্ষণীয় পছন্দ। ট্রাম্প আলোচনায় উইটকফের দক্ষতা, কংক্রিটের দেয়াল ভেঙে চুক্তি সম্পাদন এবং কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ভাবনী নকশা তৈরি করার দৃঢ়তা সম্পর্কে জানেন। নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের সঙ্গে হাঁটতে বাধ্য করার ক্ষমতা উইটকফই রাখেন বলে ট্রাম্প মনে করেছেন। বাইডেন পশ্চিম এশিয়ায় যে বিপর্যয়কর অচলাবস্থা রেখে যাচ্ছেন, নেতানিয়াহুর সঙ্গে জোট বেঁধে ট্রাম্প তা টেনে নেবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কারণ তাতে আঞ্চলিকভাবে মার্কিন প্রভাব, মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের সুনাম অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উইটকফ তেল আবিবে উড়ে এসে নেতানিয়াহুকে এই আশ্চর্যজনক বার্তা পৌঁছে দেন যে, ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সময় গাজায় একটি চুক্তি করতে চান। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-তে দ্রুত খবর প্রচার হয়, ট্রাম্প তেল আবিবের কর্মকর্তাদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে ইসরায়েলকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ উত্তেজনা এড়াতে এবং আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে পরিচালিত করতে পারে– এমন বিবৃতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু হওয়ার আগে ক্রান্তিকালে।

চ্যানেল ১২ আরও জানিয়েছে, ‘ট্রাম্পের সহযোগীরা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, আসন্ন মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা এবং চলমান যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার ওপর মনোযোগ দিচ্ছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম দিনগুলোতে নতুন যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা তাঁর ছিল না। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিতে চান।’

স্পষ্টতই ট্রাম্প বুঝতে পেরেছিলেন, নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে জোর করে একটি কেয়ামতের পরিস্থিতি তৈরি করছেন, যখন তেহরান বারবার ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবের পাশাপাশি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
স্যাক্স আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাতের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রচুর উস্কানি আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আসন্ন মার্কিন প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন, নেতানিয়াহু আবারও এগিয়ে আসছেন। এবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করার জন্য এবং ট্রাম্পের সেই ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়।

নিঃসন্দেহে সর্বশেষ গাজা চুক্তিটি উইটকফ নেতানিয়াহুর গলা টিপে চাপিয়ে দিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রতিবেদন অনুসারে, গত সপ্তাহান্তে দোহা থেকে নেতানিয়াহুর অফিসে ফোন করে উইটকফ জানান, শুক্রবার ইহুদিদের বিশ্রামের সময়। এর পর উইটকফ একটি অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করেন এবং নেতানিয়াহুকে একটি বৈঠকে ডেকে পাঠান। নেতানিয়াহু তা মেনে চলেন। 
ট্রাম্পের অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে উইটকফ অবশ্যই ‘চুক্তিটির ভেঙে পড়া ঠেকাতে এ অঞ্চলে তাঁর প্রায় স্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছেন’ এবং যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান থাকা একজন অন্তর্বর্তীকালীন কর্মকর্তার মতে, ‘ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সঠিক পথে রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গাজা উপত্যকা সফরের কথা বিবেচনা করছেন।’ 
ট্রাম্প হয়তো গাজা চুক্তির বাইরেও তাকাচ্ছেন। তেহরান ও আরব রাজধানীগুলোর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া (সেই সঙ্গে অপ্রতিরোধ্য আন্তর্জাতিক সমর্থন) ট্রাম্পকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অনুপ্রেরণা জোগায়। ট্রাম্প বুঝতে পারছেন, তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর পশ্চিম এশিয়া ধারণার বাইরে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ইরান-সৌদি সম্পর্ক; এর ফলে সৌদি কৌশলে ঐতিহাসিক পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ নমুনা। 
বড় প্রশ্ন হলো, ইতিহাসের ধারা বদলে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প কতদূর যাবেন? বিশেষ করে তিনি কি তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় জড়াবেন? নিঃসন্দেহে পেছনের চ্যানেলগুলো কাজ করছে। যেমন ১১ নভেম্বর ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইলন মাস্ক এবং জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। সব ধরনের সম্ভাবনা বিদ্যমান।

এম কে ভদ্রকুমার: ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক, ভূরাজনীতি 
বিশ্লেষক; ইংরেজি থেকে ভাষান্তরিত 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য র জন ত ইসর য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ঘিরে উত্তেজনা এখন চূড়ান্তে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি একটি পরিণতির লড়াই হিসেবে সমাসন্ন। তবে ঠিক এই সময়েই বড় দুঃসংবাদ এসে আঘাত হেনেছে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে। ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ নির্ধারণী ওভাল টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।

বুধবার (৩০ জুলাই) ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ওভালে মাঠে নামা হচ্ছে না স্টোকসের। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্টে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী স্টোকস ছিলেন দলের ভারসাম্য ধরে রাখার অন্যতম স্তম্ভ। তার অনুপস্থিতি তাই শুধু একজন খেলোয়াড়কে হারানো নয়, বরং একটি জয়ের প্রত্যয়ের বড় চ্যাপ্টারও হারানো।

এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাবেন ওলি পোপ। যিনি প্রথমবারের মতো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় দলের।

আরো পড়ুন:

শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ

ওভাল টেস্টের ইংল্যান্ড দল ঘোষণা, ওভারটনের প্রত্যাবর্তন

স্টোকস ছাড়াও ওভাল টেস্টে দেখা যাবে না জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনকে। চোট ও ফিটনেস ইস্যুর কারণে তারা বাদ পড়েছেন স্কোয়াড থেকে।

অবশ্য একাদশে ফিরেছেন দুই পরিচিত মুখ জশ টাঙ ও জেমি ওভারটন। বিশেষ নজর কেড়েছেন গাস অ্যাটকিনসন। যিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মে মাসে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিলেন মাঠের বাইরে। সারে কাউন্টির হয়ে ফের মাঠে ফিরে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় দলে। ইংল্যান্ডের পেস বিভাগে তার উপস্থিতি বাড়াবে গতি ও ধার।

চলতি সিরিজে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস। চার ম্যাচে তার ঝুলিতে ১৭ উইকেট। ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার ও ব্যাটে সেঞ্চুরি করে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছিলেন। লর্ডসেও দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ৭৭, নিয়েছেন আরও পাঁচ উইকেট।

তাই ইংলিশ শিবির শুধু একজন ব্যাটার বা একজন বোলার হারায়নি, তারা হারিয়েছে একজন পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ উইনারকে। স্টোকসের মতো একজন অলরাউন্ডার যিনি প্রয়োজনের সময় ছায়ার মতো আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং ব্যাট হাতে গড়েন ম্যাচের ভিত, তার অভাব যে দলকে নাড়া দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ‘অতিশয় বিরক্তিকর’: ট্রাম্প
  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ