Samakal:
2025-08-01@04:51:08 GMT

রপ্তানি বাড়ছে কৃষিপণ্যের

Published: 20th, January 2025 GMT

রপ্তানি বাড়ছে কৃষিপণ্যের

দেশের রপ্তানিপণ্যে বৈচিত্র্য না থাকার বিষয়ে অনেক দিন ধরেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোট রপ্তানি আয়ে তৈরি পোশাকের হিস্যা বছর বছর শুধু বাড়ছেই। সম্ভাবনাময় অনেক রপ্তানি পণ্য শেষ পর্যন্ত আর এগোতে পারেনি। এ বাস্তবতার বিপরীতে আশা জাগাচ্ছে কৃষিপণ্য। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও রপ্তানি আয় ৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছর কৃষিপণ্য থেকে ১১২ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। 
কৃষিপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা সুবিধা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। একসময় এ হার ২০ শতাংশ ছিল। পরে তা ১৫ শতাংশ করা হয়। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। 

কৃষিপণ্য খাত থেকে রপ্তানি তালিকায় রয়েছে শুকনো খাবার, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল, চা, তামাক, বিভিন্ন ধরনের মসলা, তেলবীজ, পান, সুপারি ইত্যাদি। কিছুটা অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, কৃষিপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তামাক। কৃষিপণ্যের মোট রপ্তানি আয়ের এক-তৃতীয়াংশই আসে তামাক রপ্তানি থেকে। গত ছয় মাসে এসেছে ১৮ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। 
কৃষিপণ্যের মধ্যে দ্বিতীয় বড় রপ্তানি খাত হচ্ছে শুকনো খাবার। গত ছয় মাসে ১১ কোটি ডলারের শুকনো খাবার রপ্তানি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। তৃতীয় বড় খাত হচ্ছে ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যানিম্যাল ফ্যাট। ছয় মাসে প্রায় ১০ কোটি ডলার এসেছে এসব পণ্য রপ্তানি করে। 

প্রাণ-আরএফএল শুকনো খাবারের বড় রপ্তানিকারক। শত রকমের শুকনো খাবার এখন রপ্তানি হয়। তার পরও রপ্তানির পরিমাণ তামাকের তুলনায়ও কম কেন– জানতে চাইলে গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, শুকনো খাবার রপ্তানিতে অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা অনুযায়ী রপ্তানি না বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ তেল, চিনি, আটার মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। ভারত ও পাকিস্তান এসব পণ্যের বড় রপ্তানিকারক দেশ। এ ছাড়া বড় বাজার ভারতে রপ্তানিতে নানা অশুল্ক, আধা শুল্ক বাধায় দেশটিতে চাহিদামতো রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

কৃষিপণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সবজির সম্ভাবনা নিয়ে অনেক কথা হয় বিভিন্ন ফোরামে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ৬০ ধরনের ২০০ জাতের সবজি ফলান বাংলাদেশের কৃষক। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয়।  তবে ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত ছয় মাসে ৩ কোটি ডলারের কম মূল্যের সবজি রপ্তানি হয়েছে। মসলা আমদানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের মসলা রপ্তানি হয়েছে সবজির চেয়েও বেশি। ৩ কোটি ডলারের মসলা রপ্তানি হয় এ সময়। 
রপ্তানিকারকদের মতে, বড় সম্ভাবনা সত্ত্বেও একাধিক কারণে সবজি রপ্তানি গতি হারাচ্ছে। বড় কারণের মধ্যে রয়েছে বাড়তি উৎপাদন খরচ। দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ব্যাপক। উপকরণ, চারা-বীজের দামও বেড়েছে। বর্ধিত উৎপাদন ব্যয় অনুযায়ী ন্যায্য দর পাওয়া যায় না। প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই সমস্যা নেই। সে কারণে তারা ভালো করছে। পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম সবজির প্রতিযোগী রপ্তানিকারক দেশ। অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে ফ্রেইট কস্ট অর্থাৎ বিমান ভাড়া। করোনার সময় যে বিমান ভাড়া বেড়েছে, তা কিছুটা কমলেও এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি।  মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ  অনেক দেশেই যায় বাংলাদেশের সবজি। এ ছাড়া গত কয়েক মাস দেশের বাজারেই সবজির দাম চড়া ছিল। এ কারণে রপ্তানি লাভজনক ছিল না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন ধরন র সবজ র র সবজ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন