ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশের (সিসিডিএম) দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়াই ছিল। ক্লাবগুলো বেঁকে না বসলে গতকাল থেকে মাঠে গড়াত ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ।
২০টি ক্লাবে ৩০০ বা তারও বেশি ক্রিকেটারের পদচারণায় মুখরিত হতো ঢাকার ক্লাবপাড়া। সেখানে বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটির একটি প্রস্তাবনার প্রতিবাদে স্থগিত হয়ে গেছে প্রথম বিভাগ লিগ। সেটি হলো, সিসিডিএম বা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট থেকে ১২ জনের পরিবর্তে মাত্র চারজন পরিচালক নির্বাচিত করার বিধানের সুপারিশ। নিজেদের স্বার্থ ও আধিপত্য খর্ব হওয়ার শঙ্কায় ঢাকার ৭৬টি ক্লাব একাট্টা হয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রস্তাবনা বাতিল চেয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটিও প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে বোর্ড সভাপতির কাছে। শিগগির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচনা করে ক্লাব ক্যাটেগরির প্রস্তাবনার ও ক্লাবের দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় সংস্কার কমিটির দেওয়া ক্লাব ক্যাটেগরির প্রস্তাবনা বাতিল করা হতে পারে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছর আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা– ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরের কমিটি অনুমোদন করা হয়। অথচ কোনো সংস্থা এখন পর্যন্ত নিজেরা ক্রিকেট লিগ বা টুর্নামেন্ট পেশাদারভাবে আয়োজন করতে পারেনি। চট্টগ্রাম কোনোরকমে একটি টি২০ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল বিসিবির অনুদান পাওয়ার জন্য।
এ রকম পরিস্থিতিতে ঢাকার ক্লাবের ক্ষমতা হ্রাস করতে গিয়ে দেশের ক্রিকেটকে অকার্যকর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিসিবির একজন পরিচালক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ ভালো। তবে প্রতিটি আঞ্চলিক সংস্থাকে শক্তিশালী না করে ঢাকা লিগকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। যেটা দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে।’ ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেট কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন জানান, প্রতিবছর ঢাকা লিগে (তৃতীয়, দ্বিতীয়, প্রথম ও প্রিমিয়ার) ১০০ কোটি টাকা সম্মানী দেওয়া হয় খেলোয়াড়দের। লিগ বয়কট করা হলে ক্রিকেটারদের রুটিরুজি থাকবে না। কারণ বিপিএল, ঢাকা লিগ থেকেই মূল আয় ক্রিকেটারদের। জাতীয় লিগ থেকেও সীমিত সংখ্যক ক্রিকেটার আয় করেন। তাই ক্রিকেট সংগঠকরা এখনই ব্যাপকভাবে ক্লাব ক্যাটেগরিতে সংস্কারের পক্ষে না।
বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কার করার নির্দেশনা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে বলে জানান একজন পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সভাপতি ফারুক আহমেদকে বলা হয়েছে নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি সংস্কার কমিটি করে দিতে। তিনি পরোক্ষে সরকারি হস্তক্ষেপ মেনে নিয়ে কমিটি বানিয়েছেন।
আইসিসির গঠনতন্ত্রে লেখা আছে– সরকার কোনোভাবে গঠনতন্ত্র সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। সুপ্রিম কোটেরও নির্দেশনা আছে, বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কেউ থাকতে পারবে না। সেখানে এনএসসি চেয়ারম্যানের (ক্রীড়া উপদেষ্টা) পিএস মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গঠনতন ত র স স ক র র গঠনতন ত র র কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের
আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”
“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”
মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”
কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ