শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার নিপুণ
Published: 21st, January 2025 GMT
জালিয়াতির অভিযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হলেন ঢাকাই সিনেমার বিতর্কিত নায়িকা নিপুণ আক্তার। অনৈতিকভাবে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে মনগড়া বিবৃতি প্রদান করার অভিযোগে গত রোববার কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেন নিপুণ আক্তার। সেখানে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ‘সাবেক’ বলেই উল্লেখ করেন তিনি।
গত ১৭ জুলাই নিজের ফেসবুক ওয়ালে সেটা পোস্টও দেন। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনায় জড়ান তিনি। অনৈতিকভাবে সমিতির প্যাড ব্যবহার করায় মিশা-ডিপজল নেতৃত্বাধীন কমিটি গত বছরের ৩০ জুলাই সমিতির ষষ্ঠ সভায় এ বিষয় উত্থাপিত হলে নিপুণকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে তা তোয়াক্কা করেননি তিনি। তার আগে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে নিয়ে গণমাধ্যমে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে এই বিতর্কিত অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করায় নিপুণকে নোটিশ দেয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।
অনৈতিকভাবে শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগে শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন নিপুণ আক্তার। বহিষ্কারের সত্যতা স্বীকার করেছেন শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ডি এ তায়েব।
এ নিয়ে জানতে নিপুণের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তাতে সাড়া মেলেনি।
বলা দরকার, কোটা আন্দোলন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তোপের মুখে পড়েছিলেন নিপুণ। মূলত তিন কারণে সমালোচনায় জড়িয়েছিলেন অভিনেত্রী। প্রথমত, নিপুণ তার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসিয়াল প্যাড ব্যবহার করে। যেখানে নিজেকে ‘সাবেক’ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কোনো পদবিতে নেই। তাহলে তিনি কীভাবে সমিতির অফিসিয়াল প্যাড ব্যবহারের এখতিয়ার রাখেন অনেকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
দ্বিতীয়ত, এটি হুবহু কপি করা হয়েছিল টেলিভিশনের অভিনয়শিল্পী সংঘের বিবৃতি। সহিংসতাকে এড়িয়ে দেওয়া সে বিবৃতি নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। তৃতীয়ত, নিপুণের বিবৃতিতেও একইভাবে সহিংসতা ও নিহত হওয়ার মতো ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন হেরে গিয়ে নির্বাচন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেছিলেন তিনি।
সেইসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ডিপজলকে ‘অশিক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে গত মে মাসে নিপুণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মিছিলের ব্যানারে নায়িকা নিপুণের গলায় জুতার মালার ছবি ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পী এফডিসিতে মিছিল করেন। নিপুণের বহিষ্কারের খবরে সন্তুষ্ট তারা।
গত ১০ জানুয়ারি সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তার পাসপোর্ট অফলোড করে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। নিপুণের নামে মামলা না থাকায় পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আটকের খবর সত্য নয় দাবি করেন অভিনেত্রী। বর্তমানে দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন নিপুণ।
ঢাকা/রাহাত/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র শ ল প
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।