Samakal:
2025-05-01@03:15:36 GMT

ফলপ্রসূ উদ্যোগ বিহনে ফলন বৃথা

Published: 21st, January 2025 GMT

ফলপ্রসূ উদ্যোগ বিহনে ফলন বৃথা

শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দাম কৃষক পর্যায়ে প্রান্তদেশ স্পর্শ করিয়াছে বলিয়া মঙ্গলবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা প্রধানত দুইটি কারণে উদ্বেগজনক বলিয়া আমরা মনে করি। ইহাতে শুধু উৎপাদকগণই চরম ক্ষতির শিকার হইতেছেন না; জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখোমুখি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে নাটোরে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি কেজি মুলার দর ২ বা ৩ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫-৭ টাকা, শসার কেজি ৮-১০ টাকা, লালশাকের আঁটি ১ টাকা, ধনিয়া পাতার কেজি ৫-১০ টাকা, যেইগুলির অধিকাংশের উৎপাদন ব্যয় উক্ত বিক্রয় দর অপেক্ষা অধিক। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, প্রতিটি লাউ উৎপাদনে ব্যয় হয় অন্তত ১৩ টাকা ২০ পয়সা। ফলে অধিক মুনাফার আশায় শীতের সবজি চাষ করিয়া উৎপাদকদের এখন পুঁজিই বিপন্ন হইবার পরিস্থিতি মোকাবিলা করিতে হইতেছে। উৎপাদকগণের এহেন দুর্দশা শুধু নাটোরেই নহে; বগুড়া, ঠাকুরগাঁওসহ সবজি উৎপাদনের জন্য পরিচিত প্রায় সকল জেলাতেই বিরাজমান। এমন পরিস্থিতি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকেও হুমকির সম্মুখীন করিতেছে। কারণ পুঁজি হারাইয়া সংশ্লিষ্ট উৎপাদকগণ যদি ভবিষ্যতে উক্ত সবজিসমূহ উৎপাদনে উৎসাহ হারাইয়া ফেলেন, তাহা হইলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করিয়া এই সকল সবজি আমদানি করিতে হইতে পারে। এইরূপ আশঙ্কা ফুৎকারে উৎক্ষেপ করা যায় না এই কারণেও; সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে এমনকি কাঁচামরিচের ন্যায় সাধারণ খাদ্যপণ্যও আমাদের প্রায়শ আমদানি করিতে হয়। ফলে আজিকে বিভিন্ন সবজির মূল্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকিলেও কৃষকের দুর্দশা অব্যাহত থাকিলে শেষ পর্যন্ত ভোক্তার হরিষে বিষাদে পরিণত হইতে পারে।

বলা বাহুল্য, বাম্পার ফলনের কারণে সবজি চাষিদের এহেন দুর্দশা নূতন নহে, বরং বৎসরের পর বৎসর তাহাদের বিশেষত শীত মৌসুমে এই অবস্থার সম্মুখীন হইতে হয়। শুধু উহাই নহে, প্রায় সকল প্রকার ফসলের ক্ষেত্রেই কৃষকের ন্যায্য দর না পাইবার ঘটনা ঘটে। এমনকি ধান ও আলুর ন্যায় প্রধান খাদ্যশস্য এবং সবজি এই চক্রের বাহিরে নাই। বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থার ত্রুটি এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী, ইহা অনস্বীকার্য। বাজার ব্যবস্থাপনায় নীতিমালার অভাবকেও তজ্জন্য দায়ী করা যায়। বিশ্লেষকগণ এই পরিস্থিতির দায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে চাহিদার সহিত উৎপাদনের সমন্বয় না থাকা, সিন্ডিকেটের কারসাজি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, সংরক্ষণের অপ্রতুল ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর দিয়া থাকেন, উহাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশ কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করিয়াছে। উপযুক্ত নীতিমালা ও কার্যক্রম গৃহীত হইলে তাহা আমাদের পক্ষেও অসম্ভব নহে। অন্তত বিশ্বে ব্যাপৃত এক কোটির অধিক বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করিয়া আমরা কৃষিপণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিতাম। কিন্তু গত কয়েক দশকে এই বিষয়ে কথার যত ফুলঝুরি ছুটিয়াছে, কার্যে তত পরিণত হয় নাই।
অনেকেরই জানা থাকিবার কথা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাংলাদেশে ‘ফাইটোস্যানিটারি’ তথা কৃষিপণ্যের স্বাস্থ্যহানিকর উপাদান মুক্তকরণ প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অধীনে ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা বহু বৎসর হইল স্থাপিত। মূলত আম্রসহ বিদেশে কদর আছে এমন উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে গতি আনয়নই ছিল ইহার লক্ষ্য। কিন্তু পরিকল্পনা ও উদ্যমহীনতার কারণে উহা তেমন কার্য দিতেছে না। উদ্যোক্তাদের মতে, শ্যামপুর হইতে বিমানবন্দরে যাইতে যানজটের কারণে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগিয়া যায়। ইহার ফলে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় করিয়া স্থাপিত উক্ত অবকাঠামো অনেকাংশেই অব্যবহৃত। 

উৎপাদক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের মূল্যধসের বিষয়টি লইয়া অলস বসিয়া থাকিবার কোনো অবকাশ নাই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লক্ষ, যাহার প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মধ্যমানের কৃষক। ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করিয়া এই অসংগঠিত কৃষকদের যে কোনো প্রকারে বাঁচাইতে হইবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার দ্রুত এই বিষয়ে তৎপর হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সবজ র দ ম পর স থ ত ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে

দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনাপুর-নোবিপ্রবি সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণে অংশীজন সভা
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
  • শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রম উপদেষ্টা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে