গাজীপুরে পালিয়ে যাওয়া নীলগাইটি উদ্ধার হয়নি
Published: 22nd, January 2025 GMT
গাজীপুর সাফারি পার্কের ইটের তৈরি ভাঙা দেয়াল টপকে একটি নীলগাই পালিয়ে গেছে। এর ছয় দিন পর বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়া প্রাণীটি উদ্ধার করতে পারেনি বন বিভাগ। তবে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম নীলগাই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০২১ সালে একই পার্ক থেকে একটি নীলগাই পালিয়ে যায়। তখন দুই মাস ধরে এটি দেশের কয়েকটি জেলায় বিচরণ করে শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মধুপুর বন থেকে উদ্ধার হয়। পরে উদ্ধার নীলগাইটি পার্কে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ভাঙচুর, পাখি লুট
বেনজীর আহমেদের সাভানা পার্ক বন্ধ ঘোষণা
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, ১৬ জানুয়ারি পুরুষ নীলগাইটি পালিয়ে যায়। পার্কের ভাঙা দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ পাওয়া যায়। দ্রুত সেটিকে আটকাতে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকানো যায়নি। এর মধ্যে ১৮ জানুয়ারি নীলগাইটিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাটাজোর বাজার এলাকায় দেখা গেছে। এর পরদিন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালমেঘা গ্রামে দেখা মেলে। আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) গাজীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় খবর পেয়ে লোকজন সেখানে গেলে আর পায়নি। প্রতিবার খবর পেয়ে সেটিকে আটকাতে চেষ্টা করা হয়। ৬ দিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকাসহ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের কয়েকটি স্থানে নীলগাইটিকে আটক করতে চেষ্টা করা হয়। এটির নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য সব এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বন বিভাগের নির্দেশে সাফারি পার্কের কর্মীরা নীলগাইটি উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এর নিরাপত্তার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
সাফারি পার্কে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া দুটিসহ নীলগাইয়ের পালে সদস্যসংখ্যা ছিল ১১। এগুলোর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নয়টির মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী। একটি পালিয়ে যাওয়ায় এখন মোট নীলগাইয়ের সংখ্যা হলো ১০। নতুন জন্ম নেওয়া শাবক দুটির লিঙ্গ এখনো জানা যায়নি।
ঢাকা/রফিক/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’