রাজশাহীর পবায় যুবদল নেতা সালাহউদ্দিন মিন্টুর বাড়িতে গুলিবর্ষণের ১০ মিনিট আগেই থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখা গেছে। এমন ভিডিও হাতে পাওয়ার পর যুবদলের নেতাকর্মীরা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) এয়ারপোর্ট থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত থানার সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। ফলে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে থানার সামনে দিয়ে এক লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

এর আগে নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা থেকে ভুগরইল বটতলার মোড়ে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা এয়ারপোর্ট থানার সামনে যান। পরে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বেরিয়ে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা চলে যান।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে পবার ভুগরইল গ্রামে যুবদল নেতা মিন্টুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। দরজা ভেদ করে ঢুকে যাওয়া একটি গুলিতে আহত হন মিন্টুর বাবা মো.

আলাউদ্দিন। পরদিন দুপুরে শরীর থেকে গুলি বের করার সময় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রাজশাহীর শাহমখদুম থানায় ৩৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবার এয়ারপোর্ট থানার সামনে বিক্ষোভকারীরা জানান, ১৪ জানুয়ারি রাতে একটি আপস-মীমাংসার জন্য দুইপক্ষ এয়ারপোর্ট থানায় বসেছিল। সেখানে ছিলেন যুবদল নেতা মিন্টুও। রাতে তিনি থানা থেকে যাওয়ার পরই তার বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়। যারা গুলিবর্ষণ করে, তারাও ওই রাতে আপস-মীমাংসার জন্য থানায় এসেছিল। ঘটনার ১০ মিনিট আগেও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে থানার সামনে তাদের আলাপচারিতা করতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভে ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম ডনি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনই বলছি না যে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে গিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করেছে। তবে আমরা ভিডিও পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে থানার সামনে সাদাপোশাকে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সন্ত্রাসীরা কথা বলছে। এ থেকে বোঝা যায়, পুলিশ তাদের প্রত্যেককে চেনে। এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ যেন শাহমখদুম থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করে, সেই দাবি নিয়ে আমরা থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলাম।’’

সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের ভিডিও থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘‘তারা দুপক্ষ সেদিন রাতে আপস-মীমাংসার জন্য বসেছিল। সুন্দরভাবে আপস-মীমাংসা হয়ে যাওয়ার পরে তারা চলে যায়। তারপর কে কী ঘটনা ঘটিয়েছে, তার জন্য পুলিশের ওপর দায় আসতে পারে না। তবুও বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজ ১৩০-১৪০ জন ব্যক্তি থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। আমি তাদের বুঝিয়ে বলি যে, মামলা তদন্ত হচ্ছে শাহমখদুম থানায়। এই থানার সামনে বিক্ষোভ করা যুক্তিসংগত নয়। তাদেরকে বুঝিয়েছি। বলেছি, তদন্ত কর্মকর্তা কোনো সহায়তা চাইলে অবশ্যই করা হবে। এরপর ১০-১৫ মিনিট পর বিক্ষোভ শেষ করে তারা চলে গেছেন।’’

আলাউদ্দিন খুনের ঘটনায় শাহমখদুম থানা-পুলিশ এ পর্যন্ত মো. আব্দুল্লাহ (২৬) ও মো. ওবায়দুল (২২) নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এজাহারভুক্ত আরও ৩৫ আসামি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বিক্ষোভ থেকে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/কেয়া/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর থ ন র স মন য বদল ন ত ন ত কর ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।

ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।

ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।

গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে।  এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার  বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ