বিপিএল দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি, কীভাবে দেখছেন তানজিদ
Published: 23rd, January 2025 GMT
এবারের বিপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের বাঁ-হাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি। একটি সেঞ্চুরি আছে তার নামের পাশে। সর্বশেষ বুধবার চট্টগ্রাম কিংসের বিপক্ষে ৯০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতান তিনি।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দলের ব্যাটিং পরিকল্পনা নিয়ে তানজিদ তামিম জানান, তারা উইকেটে আগে সেট হতে চেয়েছিলেন। পরে রান তোলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকা এই ওপেনার জানান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ওয়ানডে ফরম্যাট হওয়ায় চেষ্টা করবেন ক্রিজে নিজেকে কিছু সময় বেশি দেওয়ার।
তানজিদ বলেন, ‘সেঞ্চুরি হয়তো হতে পারতো। এটা মিস হয়েছে এমন মনে হয়নি। এটা আমার হাতেও নেই। ম্যাচটা শেষ করে আসতে পেরেছি, এটাই ভালো লেগেছে। চেষ্টা করেছি নিজেকে সময় দেওয়ার। ব্যাটিং উপভোগ করেছি। শুরুতে নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী তরুণ ব্যাটার তামিম জানান, ওয়ানডে ফরম্যাট হওয়ায় পাওয়ার প্লেতে টি-২০’র চেয়ে বেশি সময় নিয়ে খেলা যায়। তিনিও চেষ্টা করবেন সময় নিয়ে খেলার, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফরম্যাট ভিন্ন। এখানে যেমন (টি-২০ ফরম্যাটে) পাওয়ার প্লেতে মেরে খেলতে হয়, রান তুলতে হয়। ওখানে (ওয়ানডে) আরেকটু সময় পাওয়া যায়। চেষ্টা করবো পাওয়ার প্লেতে নিজেকে কিছুটা বেশি সময় দেওয়ার। কিছুটা সময় দিয়ে ব্যাট করতে পারলে আমার জন্য ভালো হবে।’
বিপিএলের ঢাকা পর্বে নিজ দর্শকদের সামনে বাজে ক্রিকেট খেলেছে ঢাকা। তানজিদ তামিম কিছুটা রান পেলেও লিটন দাস একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন। রান আসেনি মিডল অর্ডার থেকেও। বোলিং বিভাগে মুস্তাফিজ ঠিক সেরা ছন্দ দেখাতে পারেননি। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম পর্ব মিলিয়ে ৩ ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলে চারে উঠেছে ঢাকা। এখন দলটির সামনে সেরা চারে শেষ করার সুযোগও এসেছে।
তানজিদ জানান, ওসব চিন্তা না করে শেষ দুই ম্যাচে তারা ভালোভাবে শেষ করতে চান। ঢাকা পর্বের দুই ম্যাচে জয়ই তাদের লক্ষ্য থাকবে। দলের অন্যদের প্লানও সেটাই বলেও জানিয়েছেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল ফরম য ট ব প এল সময় দ
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।