গাজায় বন্দুক হয়তো নীরব হয়ে গেছে, কিন্তু মাহমুদ আবু দালফার যন্ত্রণা এখনো শেষ হয়নি। যুদ্ধের প্রথম মাসগুলো থেকে তিনি তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের মৃতদেহের সন্ধান করছেন।

মাহমুদ জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজা শহরের শেজাইয়া শহরতলিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ৩৫ জন সদস্য নিহত হন। এদের মধ্যে তার স্ত্রী ও সন্তানরাও ছিলেন। বোমা হামলার পর মাত্র তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।

মাহমুদ বলেন, “আমার সন্তানরা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে। আমি তাদের বের করার চেষ্টা করছি.

.. সিভিল ডিফেন্স এসেছিল, তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ তা কঠিন করে তোলে। শহিদদের বের করার জন্য আমাদের এখানে সরঞ্জাম নেই। আমাদের খননকারীদের অনেক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীকে আমার পাঁচ সন্তানের সাথে হত্যা করা হয়েছিল - তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে।”

মুসলিম সম্প্রদায়ে সাধারণত মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার মধ্যে দেহ দাফন করা হয়। মৃতদেহ উদ্ধার এবং মর্যাদাপূর্ণ দাফন নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা শোকাহত পরিবারগুলোর জন্য বেদনাদায়ক।

মাহমুদ বলেন, “আমি আশা করি আমি তাদের বের করে আনতে পারব এবং তাদের জন্য একটি কবর তৈরি করতে পারব। এই পুরো পৃথিবীর কাছ থেকে আমি কেবল এটাই চাই। আমি চাই না যে তারা আমার জন্য একটি বাড়ি তৈরি করুক বা অন্য কিছু দিক। আমি কেবল তাদের জন্য একটি কবর চাই।”

রবিবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ১৫ মাসের এই যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রবিবার থেকে ফিলিস্তিনি সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস এবং চিকিৎসা কর্মীরা প্রায় ২০০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির প্রধান মাহমুদ বাসাল জানান, মাটি সরানোর যন্ত্র এবং ভারী যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে উত্তোলন কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইসরায়েল তাদের সংস্থার বেশ কয়েকটি যানবাহন ধ্বংস করেছে এবং কমপক্ষে ১০০ জন কর্মীকে হত্যা করেছে।

বাসালের অনুমান, যুদ্ধে নিহত প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃতদেহ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাদের দাফন করা হয়নি।

জাতিসংঘের প্রকাশিত ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের পর গাজায় পাঁচ কোটি টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ২১ বছর সময় লাগতে পারে। এর জন্য খরচ হবে ১২০ কোটি ডলার।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!

দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ।

এদিকে, চিকিৎসক সঙ্কটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তাদের।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকসহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। 

বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে ভরা থাকে হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬টি পদের মধ্যে ২৭টি পদই শূন্য। বাকি ৯ জনের মধ্যে দুজন ঢাকায় সংযুক্তিতে, দুজন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ও একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। 

বর্তমানে মাত্র চার জন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এছাড়া দুজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন গাইনি ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনি বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা। 

সীমবদ্ধার মধ্যে এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করেই চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চার চিকিৎসকই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। 

এদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারণে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না।” 

শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) নানি হোসনেয়ারা বলেন, “এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীর কীভাবে সেবা দিবেন? নার্সরা তো সব বোঝে না। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ওষুধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান চাই।”

কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আসলে এভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।” 

অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, “আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা না। তারপরও সঙ্কটের কারণে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সঙ্কটে আসলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।” 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটের ব্যাপারে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- এমনকি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।”

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “শুধু কলাপাড়া নয়, পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে প্রাণ গেল দুই শিশুর
  • ১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!