Samakal:
2025-09-18@10:01:13 GMT

টিন-কাঠের নান্দনিক নিকেতন

Published: 23rd, January 2025 GMT

টিন-কাঠের নান্দনিক নিকেতন

মুন্সীগঞ্জে টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক নকশার ঘর। এমন বাহারি ঘর ও কটেজের দৃশ্য ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভের বদৌলেত সারাদেশ ছড়িয়ে পড়েছে। যা দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসছেন ঘর কিনতে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠেছে ঘর তৈরির কারখানা। এসব স্থানে আগে থেকেই টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি করে রাখা হয় ঘর। ঘরগুলো সাধারণত এক থেকে তিন তলা পর্যন্ত হয়। এসব ঘরের পাশাপাশি এখন নির্মাণ করা হচ্ছে কটেজ জাতীয় ঘর। এসব ঘরকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে টালি টিন। বিশেষ ধরনের রঙিন টিনের কারণে ঘরের সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। 
জানা গেছে, কটেজগুলোতে এসি বসিয়ে পাকা ভবনের মতোই ঠান্ডা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আলো-বাতাস অনায়াসে প্রবেশ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। একটি পুরো ঘর অনায়াসে ভেঙে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। ফলে এসব ঘরের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের  প্রায় সব স্থান থেকে ক্রেতারা এ ঘর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ঘর নির্মাতারা জানান, নাইজেরিয়ান লোহাকাঠ, সেগুন কাঠ ও টিন দিয়ে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কটেজ জাতীয় ঘরগুলোর বেড়ায় টিনের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ। এসব ঘরের স্থায়িত্ব ৬০ থেকে ১০০ বছর। হাটে ২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত  ঘরগুলো বিক্রি হয়।
স্থানীয় ঘর ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাছ কিনে নিয়ে আসেন। টিনগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে আনেন। এসব ঘর নির্মাণে গোপালগঞ্জের শ্রমিকদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এ জেলায় গোপালগঞ্জের ১ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ঘর নির্মাণ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে।
লৌহজংয়ের কলাবাগান এলাকার ঘর তৈরির কারিগর কামরুল ইসলাম বলেন, এ ঘরগুলো তৈরির জন্য ঠিকাদার চুক্তি নেন। একদিন কাজ করলে তাঁকে ৭০০ টাকা দেওয়া হয়। তিনি দুই বছর ধরে ঘর তৈরির কাজ করছেন। তবে অভিজ্ঞ কারিগররা প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পান।
কাঠমিস্ত্রি রাজু হোসাইন বলেন, কটেজের বেড়ায় মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ ব্যবহার করা হয়। মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ একটু নরম হওয়ায় সহজেই নকশা করা যায়। তিনি বলেন, কটেজ ধরনের একটি ঘর তৈরি করতে তাদের পাঁচ থেকে সাতজন মিস্ত্রির এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। এই ঘরগুলো তৈরি করতে সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়।
ঘর তৈরির মহাজন মালেক সরদার বলেন, কটেজ ঘরগুলো মূলত ইউরোপের তৈরি বিভিন্ন ঘরের ক্যাটালগ দেখে তৈরি করেন। এ ঘরগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে– এগুলোতে থাই গ্লাস ব্যবহার করা হয়, যার কারণে বাইরের পানি ঘরে ঢোকার কোনো শঙ্কা থাকে না। এগুলোর দরজা জানালা আটকে দিলে বাতাস বাইরে যেতে পারে না। তাই সহজেই এসি ব্যবহার করা যায়।
ঘর ব্যবসায়ী জসিম বেপারি বলেন, এই ঘরগুলো মূলত ইউরোপীয় বাড়ির ক্যাটালগের আদলে তৈরি করা হয়। তাই এর চাহিদা বেশি। রিসোর্ট মালিকরা বিশেষ করে সিলেট, টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে লোকজন এখানে ঘর নিতে আসেন। ঘর কিনলে অনেক জায়গায় মিস্ত্রি দিয়ে তা স্থাপন করে দিয়ে আসেন তারা। 
তিনি জানান, শুধু লৌহজংয়ের কাঠপট্টি এলাকায় রয়েছেন ৩০ জন ঘর ব্যবসায়ী। ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের কারণে দিন দিন তাদের ঘর বিক্রি বাড়ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘর ত র র ব যবস য় ঘর ত র র ঘর ন র ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ