স্টার্টআপে নতুন তহবিল, বাস্তবায়ন মূল চ্যালেঞ্জ
Published: 11th, July 2025 GMT
বিশ্বে অধিকাংশ দেশের সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নে স্টার্টআপ খাতের প্রভূত ভূমিকা আছে। তবে উদীয়মান এই খাতের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ। বিশেষ করে প্রারম্ভিক পর্যায়ে দেশীয় বিনিয়োগ। দেশের স্টার্টআপগুলোর অধিকাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে।
সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টার্টআপের জন্য নতুন নীতিমালা ভবিষ্যৎ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেশীয় বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। তবে এই তহবিলের বাস্তবায়ন ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে রয়েছে নানা মত ও বিশ্লেষণ।
নতুন নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর মুনাফার অর্থ দিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠন করা হয়েছে। একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে, আগে যা ছিল সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা।
এর আগে স্টার্টআপ খাতের জন্য ২০২১ সালের ২৯ মার্চ দুই ধরনের তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল। দ্বিতীয়টি ৫২টি তফসিলি ব্যাংকের মুনাফার ১ শতাংশ অর্থে গঠিত ব্যাংকগুলোর নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল। এর পরের তিন বছরে তহবিলে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি জমা হয়। গত বছর পর্যন্ত স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় মাত্র ৩৫ কোটি টাকা।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেড ও বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন স্টার্টআপ অর্থায়ন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে তহবিলের অর্থ বণ্টনের দায়িত্বে থাকা বিভাগগুলোর নির্বাচনপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টার্টআপগুলোর দ্রুত বর্ধনশীল প্রকৃতির কারণে সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই অর্থায়ন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে যোগ্য ও অভিজ্ঞ সংস্থা নির্বাচন না করতে পারলে পুরো উদ্যোগ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই তহবিলের দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়াকরণ, তহবিল অনুমোদন ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকা আবশ্যক। অতীতে এ রকম উদ্যোক্তা তহবিল সফল হয়নি। সেই দিকটি মাথায় রেখে এই তহবিল বণ্টনের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তহবিল বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট পথনকশা এবং সঠিক পরিচালন কাঠামো প্রয়োজন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম বলেন, ‘তহবিল বণ্টনে ব্যাংকগুলোতে এখন দক্ষ জনবল প্রয়োজন। যেন তারা সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে পারে। তরুণদের মনোভাব বুঝতে পারে। এত দিন দেশের স্টার্টআপ নির্ভর করত বিদেশি ও দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ওপর। তবে নতুন নীতিমালার ফলে দেশের ব্যাংক খাত থেকে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হলো।’
নতুন এই নীতিমালায় স্টার্টআপ উদ্যোগের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে। ২১ বছরের বেশি বয়সের উদ্যোক্তারা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঋণ পেতে ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম বা ঋণমান ব্যবস্থা পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এর ফলে তহবিল পাওয়া সহজ হবে। স্টার্টআপ হিসেবে যাদের মেয়াদ ১২ বছর বা তার কম, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
রাইড শেয়ারিং, ডেলিভারি ও কুরিয়ার সেবাদাতা পাঠাও–এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে স্থানীয় পুঁজি বাড়ানোর এই উদ্যোগ সদিচ্ছার প্রতিফলন। তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপগুলোর পরামর্শ নিয়ে তৈরি হলে নীতিমালায় আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত আসতে পারত। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করে যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করে কার্যকর করা হলে তা আরও বাস্তবভিত্তিক হতো। কারণ, বাংলাদেশে এই খাতে দক্ষতা এখনো সীমিত।’
বিনিয়োগ পর্যাপ্ত নয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় স্টার্টআপের সর্বোচ্চ আট কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে এই সীমা নির্দিষ্ট একটা স্তর পর্যন্ত কার্যকর। স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের এই খাতে দুই কোটি টাকার বিনিয়োগ ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী স্টার্টআপ উদ্যোগে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে—এ বিষয় নিয়ে ভিন্নমত আছে। তাঁরা বলছেন, দেশের বড় স্টার্টআপগুলোর জন্য আট কোটি টাকা বিনিয়োগ এই খাতের জন্য অপ্রতুল। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান দেশীয় বিনিয়োগ বেশি পেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
সেবা এক্সওয়াইজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান ইমতিয়াজ বলেন, এই স্বল্প বিনিয়োগে বড় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়। স্টার্টআপগুলোর ব্যবসার ধরন অনুযায়ী অন্তত সেই প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকা প্রয়োজন।
স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন নীতির আওতায় পুনঃ অর্থায়ন–সুবিধায় ঋণ নিতে গেলে স্টার্টআপদের সচেতন থাকতে হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপদের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদি মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এই নীতিমালার সাফল্য নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। বিশেষ করে কিস্তিতে অর্থছাড়সহ কীভাবে ও কোন শর্তে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিল দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো পরিষ্কার থাকতে হবে।
স্টার্টআপে বিনিয়োগের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ডেকো ইশো লিখিত বক্তব্য প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারী হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগে আমরা আশাবাদী। এর ফলে সরকার, উদ্যোক্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভালো সমন্বয় তৈরি হবে। দেশের স্টার্টআপ খাত আরও এগিয়ে যাবে। তবে বাস্তব সহায়তা ও পরিষ্কার নির্দেশনা ছাড়া এই নীতিমালার সুফল পাওয়া কঠিন হতে পারে।
নীতিমালায় ভালো কিছু উদ্যোগ আছে। যদিও বাস্তবায়নে কতটা সময় লাগবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আগামী এক বছরে যদি ২০-৫০টি স্টার্টআপ প্রকৃত অর্থে উপকৃত হয়, তখনই বলা যাবে, এটা সফল। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে না পারলে প্রকৃত অর্থে লাভ নেই বলে জানিয়েছেন এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শপআপের প্রধান সহকারী কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে তাদের মুনাফার ১ শতাংশ স্টার্টআপ তহবিলে রাখতে হবে। কিন্তু সেই তহবিল থেকে বছরে কতগুলো স্টার্টআপ ঋণ বা মূলধন পাবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা নেই। অতীতের মতো ব্যাংকগুলো বছর শেষে বলতে পারে, আমরা যোগ্য স্টার্টআপ পাইনি। এর ফলে ব্যাংকগুলো হয়তো তহবিলের বাস্তব ব্যবহার ছাড়া এই দায় এড়িয়ে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট র টআপ খ ত র স ট র টআপ নত ন ন ত ই তহব ল ক র যকর তহব ল র র জন য এই খ ত
এছাড়াও পড়ুন:
স্টার্টআপে নতুন তহবিল, বাস্তবায়ন মূল চ্যালেঞ্জ
বিশ্বে অধিকাংশ দেশের সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নে স্টার্টআপ খাতের প্রভূত ভূমিকা আছে। তবে উদীয়মান এই খাতের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ। বিশেষ করে প্রারম্ভিক পর্যায়ে দেশীয় বিনিয়োগ। দেশের স্টার্টআপগুলোর অধিকাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে।
সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টার্টআপের জন্য নতুন নীতিমালা ভবিষ্যৎ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেশীয় বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। তবে এই তহবিলের বাস্তবায়ন ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে রয়েছে নানা মত ও বিশ্লেষণ।
নতুন নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর মুনাফার অর্থ দিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠন করা হয়েছে। একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে, আগে যা ছিল সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা।
এর আগে স্টার্টআপ খাতের জন্য ২০২১ সালের ২৯ মার্চ দুই ধরনের তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল। দ্বিতীয়টি ৫২টি তফসিলি ব্যাংকের মুনাফার ১ শতাংশ অর্থে গঠিত ব্যাংকগুলোর নিজস্ব স্টার্টআপ তহবিল। এর পরের তিন বছরে তহবিলে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি জমা হয়। গত বছর পর্যন্ত স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় মাত্র ৩৫ কোটি টাকা।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেড ও বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন স্টার্টআপ অর্থায়ন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে তহবিলের অর্থ বণ্টনের দায়িত্বে থাকা বিভাগগুলোর নির্বাচনপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টার্টআপগুলোর দ্রুত বর্ধনশীল প্রকৃতির কারণে সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই অর্থায়ন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে যোগ্য ও অভিজ্ঞ সংস্থা নির্বাচন না করতে পারলে পুরো উদ্যোগ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই তহবিলের দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়াকরণ, তহবিল অনুমোদন ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকা আবশ্যক। অতীতে এ রকম উদ্যোক্তা তহবিল সফল হয়নি। সেই দিকটি মাথায় রেখে এই তহবিল বণ্টনের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তহবিল বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট পথনকশা এবং সঠিক পরিচালন কাঠামো প্রয়োজন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম বলেন, ‘তহবিল বণ্টনে ব্যাংকগুলোতে এখন দক্ষ জনবল প্রয়োজন। যেন তারা সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে পারে। তরুণদের মনোভাব বুঝতে পারে। এত দিন দেশের স্টার্টআপ নির্ভর করত বিদেশি ও দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ওপর। তবে নতুন নীতিমালার ফলে দেশের ব্যাংক খাত থেকে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হলো।’
নতুন এই নীতিমালায় স্টার্টআপ উদ্যোগের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে। ২১ বছরের বেশি বয়সের উদ্যোক্তারা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঋণ পেতে ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম বা ঋণমান ব্যবস্থা পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এর ফলে তহবিল পাওয়া সহজ হবে। স্টার্টআপ হিসেবে যাদের মেয়াদ ১২ বছর বা তার কম, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
রাইড শেয়ারিং, ডেলিভারি ও কুরিয়ার সেবাদাতা পাঠাও–এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে স্থানীয় পুঁজি বাড়ানোর এই উদ্যোগ সদিচ্ছার প্রতিফলন। তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপগুলোর পরামর্শ নিয়ে তৈরি হলে নীতিমালায় আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত আসতে পারত। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করে যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করে কার্যকর করা হলে তা আরও বাস্তবভিত্তিক হতো। কারণ, বাংলাদেশে এই খাতে দক্ষতা এখনো সীমিত।’
বিনিয়োগ পর্যাপ্ত নয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় স্টার্টআপের সর্বোচ্চ আট কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে এই সীমা নির্দিষ্ট একটা স্তর পর্যন্ত কার্যকর। স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের এই খাতে দুই কোটি টাকার বিনিয়োগ ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী স্টার্টআপ উদ্যোগে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে—এ বিষয় নিয়ে ভিন্নমত আছে। তাঁরা বলছেন, দেশের বড় স্টার্টআপগুলোর জন্য আট কোটি টাকা বিনিয়োগ এই খাতের জন্য অপ্রতুল। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান দেশীয় বিনিয়োগ বেশি পেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
সেবা এক্সওয়াইজেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান ইমতিয়াজ বলেন, এই স্বল্প বিনিয়োগে বড় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়। স্টার্টআপগুলোর ব্যবসার ধরন অনুযায়ী অন্তত সেই প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকা প্রয়োজন।
স্টার্টআপ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন নীতির আওতায় পুনঃ অর্থায়ন–সুবিধায় ঋণ নিতে গেলে স্টার্টআপদের সচেতন থাকতে হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপদের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদি মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এই নীতিমালার সাফল্য নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। বিশেষ করে কিস্তিতে অর্থছাড়সহ কীভাবে ও কোন শর্তে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিল দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো পরিষ্কার থাকতে হবে।
স্টার্টআপে বিনিয়োগের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ডেকো ইশো লিখিত বক্তব্য প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারী হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগে আমরা আশাবাদী। এর ফলে সরকার, উদ্যোক্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভালো সমন্বয় তৈরি হবে। দেশের স্টার্টআপ খাত আরও এগিয়ে যাবে। তবে বাস্তব সহায়তা ও পরিষ্কার নির্দেশনা ছাড়া এই নীতিমালার সুফল পাওয়া কঠিন হতে পারে।
নীতিমালায় ভালো কিছু উদ্যোগ আছে। যদিও বাস্তবায়নে কতটা সময় লাগবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আগামী এক বছরে যদি ২০-৫০টি স্টার্টআপ প্রকৃত অর্থে উপকৃত হয়, তখনই বলা যাবে, এটা সফল। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে না পারলে প্রকৃত অর্থে লাভ নেই বলে জানিয়েছেন এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শপআপের প্রধান সহকারী কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে তাদের মুনাফার ১ শতাংশ স্টার্টআপ তহবিলে রাখতে হবে। কিন্তু সেই তহবিল থেকে বছরে কতগুলো স্টার্টআপ ঋণ বা মূলধন পাবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা নেই। অতীতের মতো ব্যাংকগুলো বছর শেষে বলতে পারে, আমরা যোগ্য স্টার্টআপ পাইনি। এর ফলে ব্যাংকগুলো হয়তো তহবিলের বাস্তব ব্যবহার ছাড়া এই দায় এড়িয়ে যাবে।’