২০২৪ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে ও টেস্ট দলের তালিকা প্রকাশ করেছে আইসিসি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে এই তালিকা দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ওয়ানডে ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কান তারকা চারিথ আসালাঙ্কাকে অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে। সেরা এগারোতে দাপট দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। সেরা একাদশে নেই কোনো বাংলাদেশি ও ভারতীয় ক্রিকেটার। শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের কোনো ক্রিকেটার জায়গা পায়নি আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে। দলে সর্বোচ্চ চার ক্রিকেটার রয়েছেন শ্রীলঙ্কার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ক্রিকেটার রয়েছেন তিনজন করে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের রয়েছেন এক ক্রিকেটার।

এদিকে বর্ষসেরা টেস্ট দলের অধিনায়ক করা হয়েছে প্যাট কামিন্সকে। এই ফরম্যাটেও বর্ষসেরা তালিকায় জায়গা হয়নি বাংলাদেশি কারও। গত বছর টেস্টে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ তারকা জো রুট। ফরম্যাটটিতে তিনি স্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছেন। যেখানে তার সঙ্গে দারুণ লড়াই হয়েছে ভারতীয় ওপেনার যশস্বী জয়সোয়ালের। বল হাতে উইকেট ও ইকোনমির দিক থেকে টেস্টে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। ছেলেদের বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে ইংল্যান্ডের ৪, ভারতের ৩, নিউজিল্যান্ডের ২ এবং অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার ১ জন করে জায়গা পেয়েছেন।

আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ: সাইম আইয়ুব, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস (উইকেটকিপার), চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), শেরফান রাদারফোর্ড, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ ও আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফার।

আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট একাদশ: যশস্বী জয়সোয়াল, বেন ডাকেট, কেইন উইলিয়ামসন, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, কামিন্দু মেন্ডিস, জেমি স্মিথ (উইকেটরক্ষক), রবীন্দ্র জাদেজা, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ম্যাট হেনরি ও জাসপ্রিত বুমরাহ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস স আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ