Samakal:
2025-05-01@16:19:52 GMT

গ্রামের নীল চোখা পাগলিটা

Published: 24th, January 2025 GMT

গ্রামের নীল চোখা পাগলিটা

রাতে হাড় কাঁপানো শীত নামে গ্রামে। এর সঙ্গে ফিনফিনে বাতাস। সকালের কুয়াশা কেটে সূর্য আলো ছড়াতে বেশ সময় লেগে যায়, তাও ১০টার আগে না। মাঠে মাঠে দিগন্তজোড়া পাকা আমন ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে মানে যারা কামলা পেয়েছে, তারা ভ্যানগাড়ি এনে ভিড়িয়েছে কাছিম বিলের তলায় কংকালসার মেঠোপথটার ওপর।
শেষ বেলায় সূর্য যখন ডুবু, তখন রওনা দেবে গাড়িগুলো। একসময় বড়খিলা পশ্চিমপাড়া থেকে টানপাড়া যাওয়ার একমাত্র সড়ক ছিল এটি। এখন পাকা সড়কে মানুষ চলে, মরা সড়কে কৃষক। সকাল সকাল এই পথ ধরেই হাঁটতে লাগলাম। বন্ধু গোলাম মোস্তফার টং দোকানে যেতে হলে এ সড়ক ধরেই যেতে হয়। পথের শেষ প্রান্তে একটা বাঁশঝাড়, সুনসান নীরবতা, এটি মোল্লা বাড়ির কবরস্থান। খুব ঠান্ডা পরিবেশ। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে একটি পুরোনো কবর। এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন বয়োবৃদ্ধ নারী। বয়স ৯০ বছরের কম হবে না। রুক্ষ শুষ্ক চুলে তাঁর বহুদিনের জট, চোখে ধূসর নীলাভ মণি, কুচকে গেছে চামড়া, নাকচাবিটা হারিয়েছে কত যুগ আগে কে জানে। কপালের ভাঁজে কালান্তরের গল্প; যা হয়তো তিনি ছাড়া আর কেউ পড়েননি। কবরের সঙ্গে কথা বলছেন রায়মন– কখনও বাবার সঙ্গে, কখনও মায়ের সঙ্গে। রাজ্যের নালিশ তাদের কাছে। গতরাত থেকে তাঁকে কেউ খেতে দেয়নি– এই অভিযোগ করছেন। কবরের পাশে কখনও কাঁদেন, কখনও হাসেন। সারাদিন কোথায় থাকেন রায়মন, কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ মা-বাবার কবরের পাশে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। 
গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই নারীর পুরো নাম রায়মন নেছা। গ্রামের সবাই তাঁকে বুজান বলে ডাকেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়খিলা গ্রামের মৃত ইসমাইল মিয়ার মেয়ে তিনি। লেখাপড়া করেছেন পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করতেই বাবা-মা দু’জনই মারা যান। মানুষ হন চাচাদের কাছে। বড় চাচা ধুমধাম করে বিয়ে দেন রায়মনের। সবই ঠিকঠাক চলছিল। এক ছেলে ও মেয়ের জননী হন। তৃতীয় সন্তান প্রসবের পর রায়মন জানতে পারেন তিনি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সন্তানের মুখ দেখে বিলাপ করতে থাকেন। মানসিক ভারসাম্য হারান। দেখতে দেখতে ৪০ বছর কেটে গেল। বেশ কিছু বছর আগে মারা যান তাঁর ছেলেটি। মেয়েটি বেঁচে থাকলেও নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাঁর। মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই রায়মনের। v

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা

শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন। 

মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে। 

আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিষ্টি মেয়ের গল্প
  • চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা
  • গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া