Samakal:
2025-11-03@10:02:52 GMT

গ্রামের নীল চোখা পাগলিটা

Published: 24th, January 2025 GMT

গ্রামের নীল চোখা পাগলিটা

রাতে হাড় কাঁপানো শীত নামে গ্রামে। এর সঙ্গে ফিনফিনে বাতাস। সকালের কুয়াশা কেটে সূর্য আলো ছড়াতে বেশ সময় লেগে যায়, তাও ১০টার আগে না। মাঠে মাঠে দিগন্তজোড়া পাকা আমন ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে মানে যারা কামলা পেয়েছে, তারা ভ্যানগাড়ি এনে ভিড়িয়েছে কাছিম বিলের তলায় কংকালসার মেঠোপথটার ওপর।
শেষ বেলায় সূর্য যখন ডুবু, তখন রওনা দেবে গাড়িগুলো। একসময় বড়খিলা পশ্চিমপাড়া থেকে টানপাড়া যাওয়ার একমাত্র সড়ক ছিল এটি। এখন পাকা সড়কে মানুষ চলে, মরা সড়কে কৃষক। সকাল সকাল এই পথ ধরেই হাঁটতে লাগলাম। বন্ধু গোলাম মোস্তফার টং দোকানে যেতে হলে এ সড়ক ধরেই যেতে হয়। পথের শেষ প্রান্তে একটা বাঁশঝাড়, সুনসান নীরবতা, এটি মোল্লা বাড়ির কবরস্থান। খুব ঠান্ডা পরিবেশ। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে একটি পুরোনো কবর। এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন বয়োবৃদ্ধ নারী। বয়স ৯০ বছরের কম হবে না। রুক্ষ শুষ্ক চুলে তাঁর বহুদিনের জট, চোখে ধূসর নীলাভ মণি, কুচকে গেছে চামড়া, নাকচাবিটা হারিয়েছে কত যুগ আগে কে জানে। কপালের ভাঁজে কালান্তরের গল্প; যা হয়তো তিনি ছাড়া আর কেউ পড়েননি। কবরের সঙ্গে কথা বলছেন রায়মন– কখনও বাবার সঙ্গে, কখনও মায়ের সঙ্গে। রাজ্যের নালিশ তাদের কাছে। গতরাত থেকে তাঁকে কেউ খেতে দেয়নি– এই অভিযোগ করছেন। কবরের পাশে কখনও কাঁদেন, কখনও হাসেন। সারাদিন কোথায় থাকেন রায়মন, কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ মা-বাবার কবরের পাশে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। 
গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই নারীর পুরো নাম রায়মন নেছা। গ্রামের সবাই তাঁকে বুজান বলে ডাকেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়খিলা গ্রামের মৃত ইসমাইল মিয়ার মেয়ে তিনি। লেখাপড়া করেছেন পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করতেই বাবা-মা দু’জনই মারা যান। মানুষ হন চাচাদের কাছে। বড় চাচা ধুমধাম করে বিয়ে দেন রায়মনের। সবই ঠিকঠাক চলছিল। এক ছেলে ও মেয়ের জননী হন। তৃতীয় সন্তান প্রসবের পর রায়মন জানতে পারেন তিনি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সন্তানের মুখ দেখে বিলাপ করতে থাকেন। মানসিক ভারসাম্য হারান। দেখতে দেখতে ৪০ বছর কেটে গেল। বেশ কিছু বছর আগে মারা যান তাঁর ছেলেটি। মেয়েটি বেঁচে থাকলেও নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাঁর। মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই রায়মনের। v

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত