রাতে হাড় কাঁপানো শীত নামে গ্রামে। এর সঙ্গে ফিনফিনে বাতাস। সকালের কুয়াশা কেটে সূর্য আলো ছড়াতে বেশ সময় লেগে যায়, তাও ১০টার আগে না। মাঠে মাঠে দিগন্তজোড়া পাকা আমন ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে মানে যারা কামলা পেয়েছে, তারা ভ্যানগাড়ি এনে ভিড়িয়েছে কাছিম বিলের তলায় কংকালসার মেঠোপথটার ওপর।
শেষ বেলায় সূর্য যখন ডুবু, তখন রওনা দেবে গাড়িগুলো। একসময় বড়খিলা পশ্চিমপাড়া থেকে টানপাড়া যাওয়ার একমাত্র সড়ক ছিল এটি। এখন পাকা সড়কে মানুষ চলে, মরা সড়কে কৃষক। সকাল সকাল এই পথ ধরেই হাঁটতে লাগলাম। বন্ধু গোলাম মোস্তফার টং দোকানে যেতে হলে এ সড়ক ধরেই যেতে হয়। পথের শেষ প্রান্তে একটা বাঁশঝাড়, সুনসান নীরবতা, এটি মোল্লা বাড়ির কবরস্থান। খুব ঠান্ডা পরিবেশ। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে একটি পুরোনো কবর। এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন বয়োবৃদ্ধ নারী। বয়স ৯০ বছরের কম হবে না। রুক্ষ শুষ্ক চুলে তাঁর বহুদিনের জট, চোখে ধূসর নীলাভ মণি, কুচকে গেছে চামড়া, নাকচাবিটা হারিয়েছে কত যুগ আগে কে জানে। কপালের ভাঁজে কালান্তরের গল্প; যা হয়তো তিনি ছাড়া আর কেউ পড়েননি। কবরের সঙ্গে কথা বলছেন রায়মন– কখনও বাবার সঙ্গে, কখনও মায়ের সঙ্গে। রাজ্যের নালিশ তাদের কাছে। গতরাত থেকে তাঁকে কেউ খেতে দেয়নি– এই অভিযোগ করছেন। কবরের পাশে কখনও কাঁদেন, কখনও হাসেন। সারাদিন কোথায় থাকেন রায়মন, কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ মা-বাবার কবরের পাশে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই নারীর পুরো নাম রায়মন নেছা। গ্রামের সবাই তাঁকে বুজান বলে ডাকেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়খিলা গ্রামের মৃত ইসমাইল মিয়ার মেয়ে তিনি। লেখাপড়া করেছেন পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করতেই বাবা-মা দু’জনই মারা যান। মানুষ হন চাচাদের কাছে। বড় চাচা ধুমধাম করে বিয়ে দেন রায়মনের। সবই ঠিকঠাক চলছিল। এক ছেলে ও মেয়ের জননী হন। তৃতীয় সন্তান প্রসবের পর রায়মন জানতে পারেন তিনি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সন্তানের মুখ দেখে বিলাপ করতে থাকেন। মানসিক ভারসাম্য হারান। দেখতে দেখতে ৪০ বছর কেটে গেল। বেশ কিছু বছর আগে মারা যান তাঁর ছেলেটি। মেয়েটি বেঁচে থাকলেও নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তাঁর। মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই রায়মনের। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা