ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার দাপট যেন কোনো পর্যায়েই থামছে না। সিনিয়র দলের শেষ সাক্ষাতে জয় পাওয়া আর্জেন্টিনা এবার অনূর্ধ্ব-২০ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে এটিই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের পরাজয়।  

আর্জেন্টিনার এই বিশাল জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ক্লদিও এচেভরি। ‘নতুন মেসি’ খ্যাত এই খেলোয়াড় চলতি মাসেই ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ম্যাচে দুটি গোল করেছেন এচেভরি। তার পারফরম্যান্সেই আর্জেন্টিনা পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়।  

৭১ বছরের ইতিহাসে দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে এর আগে কখনো তিন গোলের বেশি ব্যবধানে হারেনি ব্রাজিল। তবে এবার সেই রেকর্ডও ভেঙে দিল আর্জেন্টিনা। এর আগে এই টুর্নামেন্টে ৬-০ গোলের বড় জয় দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে, যখন বলিভিয়াকে হারিয়েছিল কলম্বিয়া।  

ভেনেজুয়েলার ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে শুরু থেকেই আধিপত্য দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৬ মিনিটে ইয়ান সুবিয়াব্রে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। এর দুই মিনিট পরই ক্লদিও এচেভরি স্কোরলাইন ২-০ করেন। এরপর ব্রাজিলের দুর্ভাগ্য আরও বাড়ে। ম্যাচের ১১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ইগর সেররো নিজের জালে বল জড়িয়ে দিলে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনার গোল উৎসব অব্যাহত থাকে।  

৫২ মিনিটে আগুস্তিন রুবের্তো চতুর্থ গোলটি করেন। দুই মিনিট পর আবারও এচেভরি গোল করেন। ৭৮ মিনিটে সান্তিয়াগো হিদালগো আর্জেন্টিনার হয়ে ষষ্ঠ গোলটি করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন। 

ম্যাচ শেষে এচেভরি বলেন, ‘আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। এই ম্যাচের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে নামলে আমাদের অনুপ্রেরণা সবসময় বেশি থাকে। তবে আমরা এখানেই থেমে থাকব না, আমাদের আরও উন্নতির দরকার।’ 

দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ চার দল আগামী সেপ্টেম্বরে চিলিতে অনুষ্ঠিতব্য অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে জায়গা পাবে। ১০ দলের এই টুর্নামেন্টে দুই গ্রুপের শীর্ষ তিনটি দল চূড়ান্ত পর্বে যাবে। সেখানে ছয় দলের রাউন্ড-রবিন লড়াই থেকে নির্ধারিত হবে চারটি বিশ্বকাপের টিকিট।  

ব্রাজিল এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল দল, যারা ১২ বার শিরোপা জিতেছে। তবে এবার নিজেদের প্রথম ম্যাচেই এমন বড় হার তাদের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ