চলতি বিপিএলে বেশ ভালো রান হচ্ছে। তবে মানসম্মত ক্রিকেটার আনতে না পারা, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক পরোশোধ না করা, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আক্রোশ ও স্পট ফিক্সিংয়ের শঙ্কার কারণে বিতর্কিত হয়ে গেছে বিপিএল। সমকালকে সাক্ষাৎকারে বিপিএলের গর্ভনিং কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল আবেদিন ফাহিম জানান, বিপিএল আরও ভালো হতে পারত। 

বিপিএলের বিতর্ক নিয়ে তিনি জানান, বিপিএল শুরুর আগে কিছু বিষয় নিয়ে তাদের শঙ্কা ছিল। কিন্তু যে বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে শঙ্কা ছিল না তাদের, ‘বিপিএলের কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমাদের শঙ্কা ছিল। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে এতটা শঙ্কা ছিল না।’ 

শঙ্কার জায়গা নিয়ে ফাহিম বলেন, ‘শঙ্কা ছিল যে উইকেট কেমন হয়। ধন্যবাদ, উইকেট খুব ভালো হয়েছে। খেলোয়াড়দের পেমেন্ট অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়তো ঠিকঠাক দিচ্ছে না। আমরা দেখেছি, পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মাঠে খেলার স্প্রিট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এগুলো না হলে আরও ভালো হতে পারত।’

পারিশ্রমিক ও স্পট ফিক্সিং সংক্রান্ত সমস্যা দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির কারণে কিনা এমন প্রশ্নে ফাহিম জানান, এ বিষয়ে তিনি সরাসরি মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে বিতর্কিত বিষয়গুলো তাদের নজরে আছে। 

তিনি বলেন, ‘যেদিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, সেটা খুব স্পর্শকাতর ব্যাপার। এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে পারি না। তবে বিষয়গুলোতে আমাদের চোখ আছে। আমাদের দুর্নীতি দমন বিভাগ সব কিছু খেয়াল করছে। এটা সব দেশেই খেয়াল করে। আমরা কোনো প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। প্রমাণ ছাড়া কোনো মন্তব্য করলে ভুল হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ