ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নতুন করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবহিত মার্কিন কংগ্রেসের দুজন সদস্য রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ইরান সমর্থিত হামাসের এসব যোদ্ধা ইসরায়েলের জন্য স্থায়ী হুমকি হিসেবে রয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে হামলা শুরুর পর থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজারের মতো হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সরকারি এ অনুমান বিষয়ে এর আগে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

১৫ মাস পর গত রোববার গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এ সংঘাতে গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। 

বাইডেন প্রশাসনের শেষ সপ্তাহে এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, হামাসের নিয়োাগ করা এসব নতুন যোদ্ধার বেশির ভাগই তরুণ। প্রশিক্ষণবিহীন এসব সদস্যদের শুধু নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ১৪ জানুয়ারি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, গত ১৫ মাসে ফিলিস্তিনে হামাসের যত যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, তার চাইতে বেশি যোদ্ধা তারা নিয়োগ দিয়েছে। তিনি একে ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধের রেসিপি’ বলে সতর্ক করেন। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো।

হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, হামাসের পক্ষ থেকে হাজারো নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দেওয়া সক্ষম হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পরের দিনগুলোতে হামাস গাজায় নিজেদের গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত এই অঞ্চলের প্রশাসন দ্রুত নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেছে এবং সেখানে কিছু অংশে মৌলিক সেবা শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় এসব এলাকার সব মৌলিক সেবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।

একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।

এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ